ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বেনাপোল কাস্টম হাউসের স্বর্ণ চুরির ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:০১ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৬:০৪ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

বেনাপোল কাস্টম হাউজের ভোল্ট ভেঙে ১৯ কেজি ৩৮৫ গ্রাম স্বর্ণ চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় সোমবার (১১ নভেম্বর) রাত ১০টায় প্রাথমিক তদন্ত শেষে যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার অফিস বন্ধ থাকায়, এ তিন দিনের মধ্যে যেকোন দিন এ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে চুরির ঘটনায় বেনাপোল কাস্টম হাউজের একজন সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা, একজন সিপাইসহ ৭ জনকে জিজ্ঞাসবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। 

তারা হলেন, সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুল, কাস্টম সিপাই পারভেজ খন্দকার, এনজিও কর্মী আজিবর, মহব্বত, সুরত আলী, টিপু সুলতান ও আলাউদ্দীন। এসব এনজিও কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল কাস্টম হাউজে মাস্টাররোলে কাজ করে আসছিল।

তিনি আরও বলেন, কাস্টম হাউজের ওই ভোল্টে জব্দকৃত ২৯ থেকে ৩০ কেজি স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা, কষ্টিপাথরসহ মুল্যবান দলিলপত্র ছিল। সোমবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত দীর্ঘ অনুসন্ধান করে ১৯ কেজি ৩শ‘ ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ কম পাওয়া গেছে। অন্যান্য বিষয় তদন্ত শেষে জানানো হবে। 

তিনি আরও বলেন, ‘কাস্টমসের যে স্থনে লকার ছিল, সেখানে কোনো নিরাপত্তাকর্মী থাকে না। এতে সহজে চোরচক্র এঘটনা ঘটিয়েছে। লকারে জব্দকৃত ২৯ কেজির মতো স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা ছিল। কিন্তু সেখান থেকে কেবল ১৯ কেজি ৩৮০ গ্রাম স্বর্ণ চুরি হয়েছে। গত ৫/৬ বছরের জব্দকৃত মূল্যবান জিনিসপত্র এ লকারে সংরক্ষণ করা ছিল।’

এ সময় সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেন, এত নিরাপত্তা ও সিসিটিভি ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও কিভাবে চুরি হলো? আর কেনইবা সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে এই চক্রকে সনাক্ত করা হচ্ছে না। 

এর জবাবে তিনি বলেন, এ তিনদিন উক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ ছিল। যে কারণে সিসি ফুটেজ দিয়ে চোর চক্রকে সনাক্ত করা যাচ্ছে না। তবে তদন্ত করে চোর চক্রকে ধরা হবে বলে জানান।

এসময় তদন্ত টিমের সহযোগী হিসেবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, যশোর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সোহেল আল মামুন, র‌্যাবের উপ-সহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান, খুলনা থেকে আসা সিআইডির পরিদর্শক হারুন-অর-রশিদ, নাভারন সার্কেল সহকারি পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান, বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মামুন খান ও ডিজিএফ আই, এনএসআই এর গোয়েন্দা সদস্যরা।

মঙ্গলবার সকালে কাস্টম হাউস ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। গেটে থাকা নিরাপত্তা বাহিনী আনসার সদস্যরা পরিচয় নিশ্চিত হয়ে মানুষজনকে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে। তবে কাস্টমে বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা কাজ করলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ততটা উন্নত নয়। ভোল্ট রুমের জন্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন থাকলেও সেখানে কোন পাহারাদার ছিল না। ভোল্ট রুমের তালা ভাঙা হলেও লকার ভাঙা হয়নি। ডুবলিকেট চাবি ব্যবহার করে খোলা হয়েছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এতেই ভোল্ট রুম ও আশেপাশের রুমের কর্মরতদের দিকে সন্দেহে দেখা দেয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর।
 
গত শনিবার (৯ নভেম্বর) অফিস করার পর রোববার সরকারি ছুটি থাকায় কেউ অফিসে ছিলেন না। সোমবার (১১ নভেম্বর) সকালে অফিস খুললে চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে। দূর্ধর্ষ চুরি উদঘাটনে পোর্ট থানাসহ র‌্যাব, ডিবি, সিআইডি (ক্রাইম সিন) ও পিবিআই ঘটনাস্থলে তদন্ত কাজ শুরু করেন। সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ওই কক্ষের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ভিড়তে দেয়নি কাউকে ওই কক্ষের আশে পাশে। সাংবাদিকদেরও কোন তথ্য দিতে পারেনি কাস্টম কর্মকর্তারা। ৫টার পর ডিবি, সিআইডি, পিবিআই, র‌্যাব ও বেনাপোল পোর্ট থানার কর্মকর্তারা ওই ভোল্ট রুমে প্রবেশ করেন। এ সময় হাত পায়ের ছাপ নির্ণয় করার পর কি কি খোয়া গেছে তার নিরুপণ করেন। 

এ ঘটনায় কাস্টমের পক্ষ থেকে যুগ্ম কমিশনার মো. শহীদুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভোল্ট ইনচার্জসহ সাতজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

যুগ্ম কমিশনার মো.শহীদুল ইসলাম জানান, তদন্ত চলছে। তদন্ত রিপোর্ট দ্রুত কাস্টম কমিশনারের মাধ্যমে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া হবে। 

কেআই/এসি