ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

সড়ক পরিবহন আইনের গণতান্ত্রিক সংশোধনী দাবি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৩৫ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

’সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এবং সড়কের শৃঙ্খলা, যাত্রীর নিরাপত্তা ও শ্রমিকের সুরক্ষা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সড়ক পরিবহন আইনকে গণতান্ত্রিক করার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে শাস্তির ভীতি তৈরীর দৃষ্টিভঙ্গী থেকে প্রণিত সড়ক পরিবহন আইনের শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী ধারা এবং অসংগতী সমুহ সংশোধন করে শ্রমিকের নিয়োগপত্র, ন্যায্য মজুরি, সামাজিক নিরাপত্তাসহ শ্রম অধিকার সমূহ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। 

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন এর সভাপতিত্বে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০১৯ সকাল-১১টায়  মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, লেখক-কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটের এক্সিডেন্ট এন্ড রিসার্চ ইনিষ্টিটিউট এর সহযোগী অধ্যাপক কাজী সাইফুল নেওয়াজ। মতবিনিময় সভায় ধারণাপত্র পাঠ করেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, সভা পরিচালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন।

খালেকুজ্জামান বলেন, শ্রমিকের নিয়োগপত্র, ন্যায্য মজুরি, চাকুরির নিরাপত্তা, কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা ছাড়া শুধু শাস্তি প্রদানের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে যে আইন প্রণিত তা কখনো গণতান্ত্রিক হতে পারেনা। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য শুধু গাড়ি চালক দায়ি নয়। সড়ক নির্মাণ, ব্যবস্থাপনা আর পরিচালনার সাথে যারা যুক্ত তাদের অবহেলা বা ত্রুটির কারনেও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। অথচ তাদের শাস্তির বিধান এই আইনে নেই। জরিমানার পরিমাণ নির্ধারনের সময় শ্রমিকের সক্ষমতার কথা বিবেচনা করা হয়নি। আইনের এই সকল অসংগতি অবশ্যই দুর করতে হবে। 

মুজাহিদুর ইসলাম সেলিম বলেন, ভয় আর লোভের সংস্কৃতি দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালিত হতে পারেনা। সড়ক পরিবহন আইন শ্রমিকদের জন্য ভয় আর ট্রাফিক বিভাগের জন্য লোভের বিষয়ে পরিণত হতে পারে। তিনি মালিকদের চক্র থেকে বের হয়ে ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তুলে আইনে গণতান্ত্রিক সংশোধন করতে সরকারকে বাধ্য করার আহব্বান জানান। সৈয়দ 

আবুল মকসুদ বলেন, আইন প্রণয়নে একটি কমিটি হয়েছিল। তবে সেই কমিটি শ্রমিকের কর্মস্থল পরিদর্শন করেনি। সরাসরি শ্রমিকদের সাথে সাক্ষাত করেনি। তাই এই আইনে শ্রমিকদের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। তিনি প্রশ্ন রাখেন,  দেশের সংবিধান যদি ১৭ বার সংশোধন করা যায় তাহলে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করা যাবে না কেন? 

ওসমান আলী বলেন, আইন প্রণয়ন কমিটির সুপারিশ গ্রহণ করা হয়নি। আর আমরা যা চায়নি তা যুক্ত করা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ১০৫ টি কারণ রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৫টি কারণের জন্য গাড়ি চালকদের দায়ী করা যায়। কিন্তÍু অবশিষ্ট ১০০ টি কারণের জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তির বিধান কই? তিনি জরিমানার পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। 

চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, দুর্ঘটনার জন্য গাড়ি চালকের বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য ধারার প্রয়োগ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কাজী সাইফুল নেওয়াজ বলেন, আইনের দুটি অংশ। একটি কাগজপত্র সংক্রান্ত অপরটি অবকাঠামো সংক্রান্ত। কাগজ-পত্রের ত্রুটির জন্য চালক কিছুটা দায়ি হলেও অবকাঠামোগত ত্রুটির জন্য চালককে শাস্তি দেওয়া অন্যায়। তিনি দুর্ঘটনা সংশ্লিষ্ট অপরাধ জামিনযোগ্য হওয়া উচিত বলে মত দেন। 

সভার সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অস্টম শ্রেণী পাশের শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু যেসব গাড়ি চালক গত ৮-১০ বছর বা তারও বেশী সময় ধরে গাড়ি চালাচ্ছে তাদের লাইসেন্স নবায়নের কি হবে? তিনি আরও বলেন সবসময় দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয় কিন্তু দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে তা দুর করার চেষ্টা করা হয়না। সড়কের দুর্ঘটনা প্রবণ স্থানগুলি চিহ্নিত করে ত্রুটি দুর করার ব্যবস্থা না করে শুধু চালকদের উপর দায় চাপানোর মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। আর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এই অসংগতিপূর্ণ আইন পরিবর্তন করতে বাধ্য করতে হবে।

আরকে/