ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

আরেকবার লজ্জায় ডুবলো বাংলাদেশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৪:১২ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৯ শনিবার | আপডেট: ০৪:২৮ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৯ শনিবার

রিভার্স সুইপ খেলছেন মুশফিক

রিভার্স সুইপ খেলছেন মুশফিক

মিরাকল বা অলৌকিক কিছু একটার অপেক্ষায় ছিল গোটা বাংলাদেশ। কিন্তু না শেষ পর্যন্ত ইন্দোরে বাংলাদেশের ইনিংস পরাজয়ের লজ্জাতেই ডুবল। ভারতের ৩৪৩ রানের লিডের জবাব দিতে নেমে ২১৩ রানেই সব উইকেট হারিয়ে ফেলেছে মুমিনুল হকের দল। যাতে ইনিংস ও ১৩০ রানের জয় তুলে নিয়ে উৎসবে মাতে গোটা ভারত।

শনিবার (১৬ নভেম্বর) যদিও ইনিংস পরাজয় মাথায় নিয়েও একাই লড়াই চালিয়ে যান সঙ্গিহীন মুশফিকুর রহিম। মি. ডিপেন্ডেবল যেভাবে খেলেছেন এক কথায় মুগ্ধকর। 

ব্যক্তিগত ৪ রানের মাথায় একবার স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান। তারপর মুশফিক যেভাবে ব্যাটিং করেন তা থেকে বাকিদের শেখার অনেক কিছুই আছে।

ম্যাচের পরিস্থিতি বিচার করে উইকেটে পড়ে থাকার চেষ্টায় বন্ধপরিকর ছিলেন মুশফিক। বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংয়ে ভারতের দুর্দান্ত পেসারদের সামলে স্পিনারদের মাঝে মধ্যে আক্রমণও করছেন। সব আলগা বলে শট না খেললেও ভালো বলের বিরুদ্ধে ব্যাকরণ মেনে ব্যাটিং করতে ভুল করছেন না সাবেক এ অধিনায়ক।

এতে ম্যাচে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ফিফটিটাও তুলে নিয়েছেন মুশি। যদিও শেষ পর্যন্ত নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননি তিনি। আউট হয়েছনে অশ্বিনকে তুলে মারতে গিয়ে। পুজারার হাতে ধরা পড়ার আগে সাত চারে ১৫০ বল মোকাবেলায় খেলেন ৬৪ রানের এক ধৈর্য্যশীল ইনিংস।

মূলত এতেই শেষ হয়ে যায় সব। এবাদত হোসেনকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের ইতি ঘটান তিন উইকেট নেয়া রবিচন্দন অশ্বিন। এছাড়া টাইগারদের এ ইনিংসে ধস নামানো মোহাম্মদ শামি নেন চারটি উইকেট।  

এদিন সকালে দুই ওপেনারের হতাশজনক ব্যাটিংয়ের মধ্যদিয়ে ইন্দোর টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ। শুরুতে ইমরুল কায়েস বিদায় নিলে প্রথম ইনিংসের ন্যায় একই পথে হাটেন আরেক ওপেনার সাদমান ইসলাম।

কিছুটা আশা জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। কিন্তু মোহাম্মাদ শামির পেস অ্যাটাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি। ২০ বল খেলে মাত্র ৭ রান নিয়ে সাজঘরে ফেরেন টাইগার দলপতি।

সেখান থেকে সাত রান যোগ করে প্যাভিলিয়নের পথে হাটেন মোহাম্মাদ মিঠুনও। এবারও শিকারি সেই শামি। ফলে, মাত্র ৪৪ রান তুলতেই ৪ উইকেট খোয়ানো বাংলাদেশের সামনে আরেকটি লজ্জানক হার অপেক্ষা করতে থাকে। শঙ্কা তৈরি হয় ইনিংস ব্যবধানে হারের। যেখান থেকে মুশফিক, লিটন, মেহেদি মিলে চেস্টা করেও এড়াতে পারেননি দলের লজ্জাজনক হার।

প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার লড়াইয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে আজ মাঠে নামলেও উমেশ ও ইশান্ত শার্মার পেস অ্যাটাকে স্ট্যাম্প ভাঙ্গে দুই ওপেনারের। এবারও তারা ব্যক্তিগত ৬ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন।

এর আগে প্রথম ইসিংসের ব্যাটিং ব্যর্থতা আর ছন্দহীন বোলিংয়ে রানের পাহাড় গড়ে ভারত। মায়াঙ্কা আগারওয়ালের অনবদ্য ২৪৩ রানের ওপর ভর করে ৬ উইকেটে ৪৯৩ রান তোলে কোহলিরা। যেখানে ৩৪৩ রানের লিড পায় তারা।

ফলে, প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের অবস্থা মাথায় রেখে তৃতীয় দিনেই টাইগারদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় ভারত। সে ক্ষেত্রে সফলতাও পান অধিনায়ক বিরাট কোহলি।

এর আগে ইন্দোর টেস্টে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে মুমিনুল-মুশফিকরা অলআউট হয় মাত্র ১৫০ রানে। সেখানে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ভারতের ওপেনার মায়াঙ্ক আগরওয়াল একাই করেছেন ২৪৩ রান। দ্বিতীয় দিন শেষে ১১৪ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৯৩ রান তুলে ভারত।

৩৪৩ রানে এগিয়ে থেকে আজও ব্যাট করার কথা থাকলেও, মুশফিকদের ব্যাটিং দুর্বলতা মাথায় রেখে শনিবার সকালেই ব্যাটিংয়ে পাঠায় তাদের। ব্যাটিংয়ে নেমে তৃতীয় দিনের প্রথম সেশনটা ছিল এক কথায় এলোমেলো।

লাঞ্চের আগে মাত্র ৬৪ রানেই হারিয়ে ফেলে প্রথম ৪ উইকেট। যাতে পুরোনো বাংলাদেশের চিত্রই ফুটে উঠেছিল যেন। তবে দ্বিতীয় ইনিংসটা ভালোই কাটে সফরকারীদের। চা বিরতির আগে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।

এসময় একাই লড়াই চালিয়ে যান মুশফিকুর রহিম। ৩৫ রান করে লিটন ফিরে গেলে, হাফসেঞ্চুরি পাওয়া মুশিকে সঙ্গ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তৃতীয় দিনের চা বিরতির সময় মুশফিক অপরাজিত ছিলেন ৫৩ রানে, আর মিরাজের ব্যাট থেকে আসে হার না মানা ৩৮ রানের ইনিংস।

ব্যক্তিগত ৪ রানে ‘জীবন’ পাওয়া মুশফিকুর রহিম সুযোগটা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগান এদিন। টেস্ট ক্যারিয়ারের ২০তম হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি। ১০১ বলে ফিফটি পূরণ করেন মুশফিক। মাইলফলকটি স্পর্শ করতে মেরেছেন ৬ বাউন্ডারি।

এর আগে দ্বিতীয় দিনের শুরুতে অবশ্য দুর্দান্ত বোলিংয়ের আভাস দিয়েছিল বাংলাদেশ। ১ উইকেটে ৮৬ রানে প্রথম দিন শেষ করা ভারত প্রথম ইনিংসের দ্বিতীয় দিন শুরু করে দলীয় ১০৫ রানে হারায় চেতশ্বর পুজারাকে (৫৪)। আবু জায়েদের বলে বদলি ফিল্ডার সাঈফ হাসানের তালুবন্দী হন তিনি। এর পরপরই অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে ‘ডাক’ উপহার দেন রাহী।

অষ্টম টেস্ট খেলতে নেমে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ওপেনার আগরওয়াল ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকান। সেঞ্চুরির পথে ছুটতে থাকা আজিঙ্কা রাহানেকে ফিরিয়েছেন আবু জায়েদ রাহি।

রাহানে সাজঘরে ফেরেন ৮৬ রান করে। তার ১৭২ বলের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৯টি বাউন্ডারিতে। রাহি নিজের চতুর্থ শিকার বানান রাহানেকে। দলীয় ৩০৯ রানের মাথায় ভারত চতুর্থ উইকেট হারায়। রাহানে-মায়াঙ্ক ১৯০ রানের জুটি গড়েন।

আগরওয়াল ৩৩০ বলে ২৪৩ রানের ইনিংসটি সাজান ২৮ চার ও ৮ ছক্কায়। ভারতের মাটিতে চার টেস্ট খেলতে নেমে তৃতীয় সেঞ্চুরি পান তিনি। মিরাজের বলে রাহির তালুবন্দি হন আগরওয়াল।

১২ রান করা রিদ্ধিমান সাহাকে বোল্ড করেন এবাদত হোসেন। দিন শেষে রবীন্দ্র জাদেজা ৭৬ বলে ৬টি চার আর দুটি ছক্কায় ৬০ রানে আর উমেস যাদব ১০ বলে একটি চার আর তিনটি ছক্কায় ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন।

এনএস/