ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

গোলাপি বলের টেস্টের আদ্যোপান্ত

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ০৮:৫৭ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৯:০১ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

গোলাপি বল

গোলাপি বল

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার চাপে টেস্টকে বাঁচাতে টেস্টেও দিবারাত্রীর ম্যাচ আয়োজনের অনুমতি দেয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল-আইসিসি। তবে লাল বল রাতের অন্ধকারে দেখা বেশ কঠিন। বিশেষত যখন সেটা আকাশে ওঠে। তাই গোলাপি বলে দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়।

শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালে গোলাপি বল তৈরি করা হয় এবং সেটি দিয়ে ধীরে ধীরে খেলা শুরু করা হয়। আর আন্তর্জাতিকভাবে গোলাপি বলে প্রথম দিবা-রাতের ম্যাচ শুরু হয় ২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ওভালে। 

এদিকে, আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) ইডেন গার্ডেন্সে প্রথমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক দিবা-রাত্রির টেস্ট ম্যাচ। গোলাপি বলের ঐতিহাসিক এ ম্য়াচে ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটাই হতে যাচ্ছে ১২তম দিন-রাতের ম্যাচ। এ নিয়ে ক্রিকেট দুনিয়ায় উত্তেজনার পারদ এখন তুঙ্গে। 

এর আগে আসুন জেনে নেয়া যাক, গোলাপি বলের টেস্টের কিছু অতীত ইতিহাস-

টেস্ট ক্রিকেটের নতুন এই সংস্করণ অর্থ্যাৎ গোলাপি বলে দিবা-রাত্রির টেস্ট ম্যাচ শুরু হয় ২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ওভালে স্বাগতিকদের মোকাবেলা করে নিউজিল্যান্ড। সেই থেকে শুরু। এরপর মাঠে গড়িয়েছে আরো ১১টি ম্যাচ।

প্রথম ওই দিবা-রাত্রির টেস্টে জয় পায় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ডকে ৩ উইকেটে হারিয়েছিলো অজিরা। এরপর অ্যাডিলেডে অনুষ্ঠিত হয়েছে আরও দু'টি ম্যাচ। যার একটিতে ২০১৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ উইকেটে এবং ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডকে ১২০ রানে হারিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া।

দিবা-রাত্রির টেস্টে সবচেয়ে বেশিবার মাঠে নেমেছে অস্ট্রেলিয়া। সেইসঙ্গে পাঁচ ম্যাচের সবক'টিতেই জয় তুলে নিয়ে সবচেয়ে সফল দলও তারা। যার সবগুলোতেই ভিন্ন পাঁচ দল নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছে তারা। 

নিজেদের বাকি দুইটি দিবা-রাত্রির টেস্টে ২০১৬ সালে পাকিস্তানকে ও ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

ব্যর্থতার দিক থেকে এগিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তিনটি দিবা-রাত্রির ম্যাচ খেলে সবক'টিতেই হেরেছে ক্যারিবীয়ানরা। ২০১৬ সালে পাকিস্তানের কাছে, ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের কাছে এবং ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার কাছে পরাজিত হয় উইন্ডিজ দল।

গোলাপি বলে দিবা-রাত্রির টেস্টে সর্বোচ্চ রান পাকিস্তানের আজহার আলীর। ৯১ গড়ে ৬ ইনিংসে তিনি করেছেন ৪৫৬ রান। এতে সেঞ্চুরি, ডাবল সেঞ্চুরি এমনকি ট্রিপল সেঞ্চুরিও আছে তার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৮ ইনিংসে স্টিভ স্মিথের ৪০৫ রান।

টেস্টের এই সংস্করণে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন আজহার আলী। পাকিস্তানেরই আরেক ব্যাটসম্যান আসাদ শফিক একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে করেছেন দু'টি সেঞ্চুরি। 

আজহার আলীর করা অপরাজিত ৩০২ রান এখন পর্যন্ত দিবা-রাত্রির টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। এক ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪৩ রান অ্যালিস্টার কুকের। তার রেকর্ডটাও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০১৭ সালে।

বোলিংয়ে সবচেয়ে সফল অজি পেসার মিচেল স্টার্ক। ৫টি দিবা-রাত্রির টেস্ট থেকে তুলে নিয়েছেন ২৬ উইকেট। এক ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন একবার। ২২ উইকেট নিয়ে শীর্ষ উইকেট শিকারের তালিকায় দুই নম্বরে আছেন আরেক অজি পেসার জস হ্যাজেলউড।

নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ড ও পাকিস্তানের ইয়াসির শাহ ছাড়া কেউই গোলাপি বলে ইনিংসে দুই বার পাঁচ উইকেট পাননি। 

দিবা-রাত্রির টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফল না হলেও, ব্যক্তিগতভাবে আলো ছড়িয়েছেন ক্যারিবীয়ান স্পিনার দেবেন্দ্র বিশু। ২০১৬ সালে দুবাইয়ে পাকিনস্তানের বিপক্ষে ১৩.৫ ওভারে ৪৯ রানে ৮ উইকেট শিকার করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই লেগ স্পিনার। যা এখন পর্যন্ত দিবা-রাত্রির টেস্টে সেরা বোলিং ফিগার। 

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্রিসবেনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার আরেক পেসার প্যাট কামিন্স নিয়েছিলেন ২৩ রানে ৬ উইকেট।

দিবা-রাত্রির টেস্টে এখন পর্যন্ত সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন- আজাহার আলী, হেনরি নিকোলস, উসমান খাজা, আসাদ শফিক, জো রুট, স্টিভ স্মিথ, শন মার্শ, আইডেন মারক্রাম, ফাফ ডু প্লেসিস, ড্যারেন ব্রাভো, পিটার হ্যান্ডসকম্ব, স্টিফেন কুক এবং কেন উইলিয়ামসন।

দিবা-রাত্রির টেস্টে পাঁচ বা তার চেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট, ইয়াসির শাহ, জেমস অ্যান্ডারসন, দেবেন্দ্র বিশু, প্যাট কামিন্স, জস হ্যাজেলউড, জেসন হোল্ডার, সুরাঙ্গা লাকমল, কেশব মহারাজ, মর্নে মরকেল, দিলরুয়ান পেরেরা ও মিচেল স্টার্ক।

গোলাপি বলে সর্বশেষ চলতি বছর জানুয়ারিতে ব্রিসবেনে টেস্ট খেলেছে অস্ট্রেলিয়া আর শ্রীলঙ্কা। যাতে অজিরা ইনিংস ও ৪০ রানে জয় পায়।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ম্যাচটি কলকাতার ইডেন গার্ডেন অনুষ্ঠিতব্য প্রথম দিন-রাতের ম্য়াচ নয়। ঘটনাচক্রে ইডেনেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভারতের প্রথম গোলাপি বলে ডে-নাইট ম্যাচ। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই ভারতে প্রথম গোলাপি বলে খেলা হয়েছিল এই ইডেনেই। সিএবি সুপার লিগের ফাইনালে ভবানীপুরকে ২৯৬ রানে হারিয়েছিল মোহনবাগান। সেই ম্যাচে মোহাম্মদ শামি নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট।

এনএস/