ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

জীবন পেয়েও ব্যর্থ হলেন রোহিত

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ০৬:৫২ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ০৬:৫৭ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০১৯ শুক্রবার

সাজঘরে ফেরার পথে রোহিত

সাজঘরে ফেরার পথে রোহিত

ইডেনে গোলাপি বলের ঐতিহাসিক টেস্ট দুর্দান্ত এক পরীক্ষার মুখে পড়ে বাংলাদেশ। ভারতীয় পেসারদের তোপের মুখে দাঁড়াতে পারেননি কেউই, ফলে বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে মাত্র ১০৬ রানেই। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুভসূচনার ইঙ্গিত দিলেও আল-আমিনের হানায় ফিরতে হয় আগের ম্যাচের নায়ক মায়াঙ্ককে। পরে রোহিতকেও সাজঘরে ফেরান ইবাদত।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১৭ ওভারে ভারতের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৭২ রান। চেতেশ্বর পূজারা ২০ রানে এবং অধিনায়ক বিরাট কোহলি ১৬ রানে ক্রিজে আছেন। 

যদিও চা বিরতির ঠিক আগ মুহুর্তেই আরেকবার উদযাপনে মাততে পারতো টিম বাংলাদেশ। কিন্তু তা আর হয়নি প্রথম উইকেট শিকারি আল আমিনের ভুলে। রোহিতের তুলে দেয়া ক্যাচ হাতে জমিয়ে রাখতে পারেননি এই ফিল্ডার। 

১২তম ওভারের প্রথম বলের ঘটনা সেটা। বল হাতে আক্রমণে আসেন আবু জায়েদ। গুড লেন্থের বলটি রোহিত তুলে মারেন ফাইন লেগে। সেখানে মজুদও ছিলেন আল আমিন। তবে শিশিরের কারণেই কিনা, ক্যাচটি হাত ফসকে পড়ে যায় আল আমিনের। যাতে জীবন পেয়ে যান ১২ রানে ব্যাট করতে থাকা ওপেনার রোহিত শর্মা। 

তবে বিরতির পর ফিরে রোহিতকে আর সুযোগ দেননি এবাদত হোসেন। মারকুটে ওপেনারকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন এই পেসার। যাতে রিভিউ নিয়ে রক্ষা মেলেনি ভারতের। ৪৩ রানেই দ্বিতীয় উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। আর রোহিত ফেরেন দুই চার ও এক ছয়ে ২১ রান করে।  

এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে বাংলাদেশি পেসারদের উপর চাড়াও হয় দুই ভারতীয় ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও রোহিত শর্মা। যাতে প্রথম চার ওভারেই এ দুজনে তুলে ফেলেন ২৫ রান। তবে পঞ্চম ওভারে নিজের তৃতীয় ওভার করতে এসে চতুর্থ বলেই ভারত শিবিরে আঘাত হানেন আল আমিন হোসেন। 

অফ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরে দিয়ে যাওয়া আল আমিনের ওই বলটিতে ব্যাট চালান মায়াঙ্ক। যার খেসারত দিতে হয় আগের ম্যাচের ডাবল সেঞ্চুরিয়ানকে। বলটি ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় গালিতে ওঁত পেতে থাকা মিরাজের হাতে। যা লুফে নিয়ে কোনরকম ভুলচুক করেননি সাবস্টিটিউট এই ফিল্ডার। ২১ বলে তিন চারে ১৪ রানেই ফিরতে হয় মায়াঙ্ককে। 

ভারতীয় পেসারদের তোপের মুখে দলীয় ১৫ রানেই কায়েসকে হারায় বাংলাদেশ। এরপর একে একে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক মুমিনুল হক, মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহিম, সাদমান ইসলাম ও মাহমুদুল্লাহ। যাতে দলীয় ৬০ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে সফরকারীরা।

এর আগে ইন্দোর টেস্টের মতো এদিন ইডেনেও হতাশ করেন ইমরুল কায়েস। মাত্র ৪ রান করে ইশান্ত শর্মার বলে এলবিডব্লুর শিকার হন এই ওপেনার। ওই ওভারের প্রথম বলে রিভিউ নিয়ে কট বিহাইন্ড থেকে বেঁচেও যান তিনি। তবে এবার আর বাঁচতে পারেননি, এলবিডব্লুর সিদ্ধান্তে রিভিউ নিলেও ভুল প্রমাণিত হন বাংলাদেশের এ ওপেনার। 

এরপর মুমিনুল হক ও সাদমানের জুটিও টেকেনি বেশিক্ষণ। ৭ বল খেলা মুমিনুল রানের খাতা খোলার আগেই উমেশের শিকার হন। স্লিপে তার দুর্দান্ত ক্যাচ নেন রোহিত শর্মা। মোহাম্মদ মিঠুন এসেও টিকতে পেরেছেন মাত্র ২ বল। উমেশের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে সরাসরি বোল্ড হন মিঠুন (০)। 

পরের ওভারেই বিপর্যয় আরও বেড়েছে বাংলাদেশের। মোহাম্মদ শামির বলেও সরাসরি বোল্ড হন মুশফিক। খেলেছেন মাত্র ৪ বল। যাতে মাত্র ১১ বলের মধ্যে ফিরেছেন এ তিন ব্যাটসম্যান।

এরমধ্যে এক সাদমানই যা একটু লড়াই করছিলেন। তবে উমেশ যাদবের গতির কাছে দ্রুতই পরাজিত হন তিনিও। ব্যাটের কানাই লেগে বল ঋদ্ধিমান সাহার গ্লাভসবন্দি হলে ফিরতে হয় তাকেও। ফেরার আগে ৫২ বল খেলে পাঁচ বাউন্ডারিতে ২৯ রান করেন এই ওপেনার। 

ফলে দলীয় ৩৪ রানেই পঞ্চম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাকে নিয়ে লিটন এই বিপর্যয় থেকে দলকে যখন টেনে তোলার চেষ্টা করছিলেন, ঠিক তখনই টাইগার শিবিরে আবারও আঘাত হানেন ইশান্ত শর্মা। এবার তার শিকার মাহমুদউল্লাহ। উইকেটের পিছনে ঋদ্ধিমান সাহার দুর্দান্ত এক ক্যাচে কাটা পড়েন রিয়াদ। ২১ বল খেলা মাহমুদুল্লাহ যখন এক বাউন্ডারিতে ৬ রান করে ফেরেন তখন দলের স্কোর ৬০/৬। 
অর্থাৎ আউট হওয়া ছয় ব্যাটসম্যানের স্কোর যথাক্রমে ৪,০,০,০,২৯ ও ৬।  

এহেন অবস্থায় টাইগার শিবিরে আঘাত হানে আরেকটি দুঃসংবাদ। মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন ভাল খেলতে থাকা লিটন দাস। পরবর্তীতে রিটায়ার্ড হার্ট লিটনের বদলী হিসেবে ব্যাট হাতে নামেন মেহেদী মিরাজ। তবে রুখতে পারেননি দলের বিপর্যয়। 

ইনিংসের তখন ২১তম ওভার। ছয় উইকেট হারিয়ে বিপর্যন্ত বাংলাদেশ। ১৫ রান নিয়ে ব্যাট করছেন লিটন দাস। মোহাম্মদ শামির করা ওভারের তৃতীয় বলটি বাউন্স করে ধেয়ে আসে লিটনের মাথা লক্ষে। পুল করার চেষ্টা করেন লিটন। কিন্তু শামির গতির কাছে পরাস্ত হন। বল সরাসরি আঘাত হানে তার হেলমেটে। 

দ্রুতই হেলমেট খুলে ফেলে মাথা ও হেলমেট দুটোই চেক করেন দাস। হেলমেটের কিছু না হলেও মাথায় কিছুটা আঘাত পান লিটন। এসময় এগিয়ে এসে দুঃখ প্রকাশ করেন পেসার শামি। 

তাৎক্ষণিক মাঠে প্রবেশ করে নিজের দায়িত্ব পালন করেন ফিজিও। তখন লিটনকে খেলার উপযোগীই মনে হয়। হেলমেট পরে নিয়ে খেলা শুরুও করেন পরের বলে দুর্দান্ত এক চার মেরে। শামির করা ওই বলটিও শর্ট বল ছিল। তবে লিটন এটাকে দারুণ দক্ষতায় স্কয়ার লেগ দিয়ে পাঠিয়ে দেন বাউন্ডারিতে। যা কেবল চেয়ে চেয়েই দেখলেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। 

এরপর এক বল ডট দিয়ে শেষ বলে একরান নিয়ে স্ট্রাইকও নিজের কাছে রাখেন লিটন দাস। পরের ওভারে ইশান্ত শর্মার করা প্রথম বলেই দুর্দান্ত এক কভার ড্রাইভে বাউন্ডারি আদায় করেন লিটন। দারুণ টাইমিং আর অসাধারণ প্লেসমেন্টের সমন্বয় ছিল শটটিতে। এক কথায় দৃষ্টিনন্দন একটি চারের মার। 

এরপর আরও তিনটি বল খেলেই অসুস্থবোধ করেন এই উইকেটকীপার ব্যাটসম্যান। আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলে মাঠ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। মাঠ ছাড়ার আগে লিটন দাস ২৭ বলে পাঁচটি চারের মার মেরে ২৪ রান করেন। ফলে এ পর্যায়ে আরও বিপদে পড়লো, ব্যাটসম্যানশূন্য হয়ে যায় বাংলাদেশ।

এমতাবস্তায় বিরতির পর খেলতে নেমে ইবাদতকেও (১) হারায় টাইগাররা। তবে ব্যাট হাতে আর নামতে পারেননি লিটন দাস। যে কারণে আইসিসির নতুন বদলী নিয়ম অনুযায়ী লিটনের বদলী ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসেন মেহেদী মিরাজ। 

তবে বদলী হিসেবে নেমেও তেমন সুবিধা করতে পারেননি মিরাজ। দুই চারে মাত্র ৮ রানেই ইশান্ত শর্মার চতুর্থ শিকার হয়ে পুজারার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৩ বল খেলেই। যাতে ৯৮ রানেই অষ্টম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

পরে ইশান্তের পঞ্চম শিকার হয়ে নাঈম হাসান ফেরেন ১৯ রান করে। বোল্ড হওয়ার আগে চার বাউন্ডারিতে ওই রান করেন এই তরুণ। আর আবু জায়েদকে (০) ফিরিয়ে বাংলাদেশ দলের লেজটা গুড়িয়ে দেন মোহাম্মদ শামি। এ নিয়ে শামি তার ঝুলিতে দুটি উইকেট পুরলেও বাকি তিনটি উইকেট লাভ করেন আরেক পেসার উমেশ যাদব। 

এর আগে ঐতিহাসিক এই টেস্টে ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক। কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায় খেলা শুরু হয়।

এনএস/