ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সবুজ আর মেঘালয়ের হাতছানি

নাজমুল মৃধা

প্রকাশিত : ১১:২৪ এএম, ২৯ নভেম্বর ২০১৯ শুক্রবার

মাঝে মাঝেই আমাদের মনে হয়, দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে পারলে মন্দ হতো না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুত্ব চার বছর শেষ হয়ে পাঁচ বছরে পর্দাপণ করেছে। নয়জনের বন্ধুত্বে চার বছরে এতটুকু চির ধরাতে পারেনি। বন্ধুত্বকে সজীব করে রাখতে আমরা প্রায় সময় দেশের বিভিন্ন জেলায় ভ্রমণে বের হই। এবার যেমন দেশের দুটি সীমান্তবর্তী জেলা নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ ভ্রমণ করে এলাম।

রাত সাড়ে ১০টার বাসে করে রাজশাহী থেকে ময়মনসিংহগামী শামীম পরিবহনের একটি বাসে চড়ে আমরা নয়জন ময়মনসিংহে যাই। সেখান থেকেই শুরু আমাদের অ্যাডভেঞ্চার। পরে ময়মনসিংহ ব্রিজ থেকে রিজার্ভ সিএনজি করে রওনা হই নেত্রকোনা জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা কলমাকান্দা গ্রামের পথে। ৭ নভেম্বর সকালে সিএনজি দিয়ে আমাদের বাড়িতে পৌঁছাই আমরা। হেমন্তের অপরূপ রূপে গ্রাম সেজেছে নতুন বৌয়ের সাজ।

নেত্রকোনা জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে কলমাকান্দায় আমার গ্রাম। মাঠে সোনালি ধান আর মেঘালয় পাহাড়ের মিতালি গ্রামটিকে করে তুলেছে একখণ্ড সবুজের বুকে এক টুকরো সোনার খনি। সকাল ৯টায় যখন আমরা গ্রামে পৌঁছাই, তখনও হেমন্তের শিশির বিদায় নেয়নি। হালকা শীতের আগমন আমাদের ক্লান্ত দেহে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিয়ে গ্রামটি যেন আমাদের গ্রহণ করেছে।

সারারাত গাড়িতে ফোন চাপাচাপির পরে সবার ফোনের চার্জও শেষ। গ্রামের এক কোণে দোকানে গিয়ে ওদের ফোন চার্জে দিতে হয়েছিল। দুপুর পর্যন্ত ঘুমিয়ে আমরা আমার বাড়ির সামনে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের কাছে ঘুরতে যাই। আমার বাড়ি থেকে পাঁচ মিনিট ধানক্ষেত ধরে উত্তর দিকে হাঁটলেই ভারতের মেঘালয় রাজ্য। মেঘালয় পাহাড়ের বিশালতা বন্ধুদের ক্লান্তি দূর করে ওদের খানিক সময়ের জন্য ভাবুক করে তুলেছিল। সারাদিন গ্রাম আর পাহাড়ি এলাকা ঘুরে আমরা গ্রামের বাজারে যাই রাতে। আমাদের নয়জনের মধ্যে তিনজন নারী সদস্যও ছিল।

পরদিন সকালে আমার নানাবাড়িতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া আর গানের আড্ডা দিয়ে বিকেলে চলে যাই সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা উপজেলার ভারতের সীমান্তঘেঁষা এলাকা মহিষখোলা গ্রামে। এ অঞ্চলটা এতটাই প্রত্যন্ত যে পুরোটাই মেঠোপথ, এখানে অটো এবং সিএনজি চলতে পারে না। মহিষখোলায় যেতে আমাদের বাজার থেকে ভাড়ায় বাইক পাওয়া যায়। পরদিন সকালে পাঁচটি ভাড়া বাইক নিয়ে রওনা হই সুনামগঞ্জের দর্শনীয় স্থান নীলাদ্রি, বারাক্কা টিলা, জাদুকাটা নদী এবং শিমুলবাগান দেখতে। পূর্বদিকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ের নিচ দিয়ে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার রাস্তা বাইকে করে যেতে হয়। অল্প একটু রাস্তা পাকা হলেও ৩৫ কিলোমিটারের মতো রাস্তা কাঁচা।

তার ওপর যেদিন আমরা ঘুরতে বের হই, সেদিন আবার ঘূর্ণিঝড় 'বুলবুল' পুরো দেশে আঘাত হেনেছে। মাথার ওপর বিষণ্ণ আকাশ আর নিচে এক হাঁটু কাদার রাজত্বকে অবহেলা করে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাই। হাতের বাম পাশে মেঘালয় পাহাড় আর বাম পাশে টাঙ্গুয়ার হাওরের অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতেই আমাদের গন্তব্যের দিকে যেতে থাকি। দিনভর ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভিজে পাহাড়-হাওরের মিতালিতে সমৃদ্ধ সুনামগঞ্জ জেলা শেষ করে আমরা রাতে বাড়ি ফিরি। এর পরদিন আমাদের গন্তব্য নেত্রকোনা জেলার দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করা।

সীমান্তবর্তী সমৃদ্ধ জেলা দুর্গাপুরের বিজয়পুরের চীনামাটির পাহাড়ে যাই পরদিন। এ ছাড়া সোমেশ্বরী নদীর অপরূপ ঐশ্বর্য আমাদের চোখ এড়াতে পারেনি; পরদিন সকালেই আমাদের ফিরতে হবে প্রিয় বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।