ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

আটে নেমে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন যারা

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ০৬:২৬ পিএম, ১ ডিসেম্বর ২০১৯ রবিবার

সেঞ্চুরির পর ইয়াসির শাহ্‌র উদযাপন

সেঞ্চুরির পর ইয়াসির শাহ্‌র উদযাপন

রোববার (০১ ডিসেম্বর) অ্যাডিলেডে রীতিমত ইতিহাস গড়ছেন ইয়াসির শাহ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ারই ঘরে আটে নেমে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন এ লেগ স্পিনার! যা তাকে নিয়ে গেছে ইতিহাসের অনন্য উচ্চতায়। ২০০৬ সালের পর তিনিই প্রথম পাকিস্তানি, যিনি আটে নেমে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন।   

অস্ট্রেলিয়ার করা ৩ উইকেটে ৫৮৯ রানের পাহাড় মাথায় নিয়ে শনিবার ব্যাটিংয়ে নেমেছিল পাকিস্তান। ৬ উইকেটে ৯৬ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছিল তারা। উইকেটে ছিলেন বাবর আজম ও ইয়াসির শাহ। আজ রোববার তৃতীয় দিনে মাত্র ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি বাবর, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হন স্টার্কের বলে। 

তবে তার আগে সপ্তম উইকেটে ইয়াসিরের সঙ্গে ১০৫ রানের লড়াকু জুটি গড়ে দলকে অনেকটা পথ এগিয়ে দেন বাবর। ৯৭ রানে বাবর মিচেল স্টার্কের শিকার হওয়ার পর একাই বুক চিতিয়ে লড়াই করন ইয়াসির। ২১৩ বলে ১১৩ রান করে আউট হন আট নাম্বারে নামা এই লেট অর্ডার। 

বাবর আজম বাদে পাকিস্তানের টপ ও মিডল অর্ডার মিলে যেখানে খেলেছেন ১৩২ বল, সেখানে ইয়াসির একাই খেলেছেন দুই শ-র বেশি বল। সৃষ্টি করেন অনন্য এক উদাহরণ।

ব্যক্তিগত ৮০ রানে থাকতে নতুন বল নিয়ে স্টার্ক-হ্যাজলউডকে দিয়ে ইয়াসিরকে আউট করার নানা চেষ্টা করে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু খাস ব্যাটসম্যানদের মতোই অজি পেসারদের সামলে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন ইয়াসির। 

আর তার অনবদ্য শতকে প্রথম ইনিংসে ৩০২ রানে অলআউট হয় পাকিস্তান। যার ফলে সফরকারি দলকে ফলোঅন করিয়ে আবারও ব্যাটিংয়ে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। দ্বিতীয়বার নেমেও ব্যর্থ দলটির টপ অর্ডার। দলীয় ২০ রানেই তিন উইকেট হারানোর পর শান মাসুদ (১৪) আর আসাদ শফিকের (৮) অপরাজিত ১৯ রানের জুটিতে তৃতীয়দিন শেষ করেছে সফরকারীরা। ফলে ইনিংস হার এড়াতে দলটিকে করতে হবে আরও ২৪৮ রান, হাতে আছে সাত উইকেট।

  

এদিকে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আট বা এর নিচে নেমে সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার নজির খুব বেশি নেই। ইয়াসিরের আগে মাত্র ছয় জন তা করতে পেরেছেন—

১৮৮৪ সালে দ্য ওভালে ইংল্যান্ডের ওয়াল্টার রিড (১১৭),
১৯৫৫ সালে ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লেয়ারমন্টে ডেপেয়জা (১২২),
১৯৬১ সালে সিডনিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই গ্যারি আলেকজান্ডার (১০৮),
২০০১ সালে পার্থে নিউজিল্যান্ডের অ্যাডাম প্যারোরে (১১০), 
২০১১ সালে সিডনিতে ইংল্যান্ডের ম্যাট প্রায়র (১১৮) এবং 
২০১৭ সালে রাঁচিতে ঋদ্ধিমান সাহা (১১৭)। 
এ তালিকায় এবার নিজের নামটা যোগ করলেন ইয়াসির শাহ। 

শুধু কী তাই, এ ইনিংসটি দিয়ে ইয়াসির বুঝিয়ে দিয়েছেন গড় কিংবা টেকনিক যাই হোক, একাগ্রতা ও মনঃসংযোগ থাকলে বড় রান পাওয়া সম্ভব।

টেস্টে সেঞ্চুরির মুখ দেখাদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ব্যাটিং গড় ইয়াসিরের (১৪.০৮)। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক পেসার জেরোম টেলরকে (১২.৯৬) টপকাতে পারেননি তিনি। অথচ এই ইয়াসিরকেই কাল অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ১৯৭ রান দেওয়ার জন্য ঠাট্টা-মশকরা করেছেন সমর্থকরা। যার জবাব আজ ব্যাট হাতেই দিলেন ৩৩ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্টে ইয়াসিরের ব্যাটিং গড় অবশ্য ৩২.৫৭। যা এ সময়ের অনেক স্বীকৃত ব্যাটসম্যানের চেয়েও ভালো।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের হয়ে এ পর্যন্ত আটে নেমে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন মোট ১২ জন-

ইমতিয়াজ আহমেদ-(২০৯)-১৯৫৫ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লাহোরে,
ইমরান খান-(১৩৫*)-১৯৮৭ সালে ভারতের বিপক্ষে চেন্নাইয়ে, 
ইজাজ ফকিহ-(১০৫)-১৯৮৭ সালে ভারতের বিপক্ষে আহমেদাবাদে,
মঈন খান-(১০৫)-১৯৯৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লিডসে,
ওয়াসিম আকরাম-(২৫৭*)-১৯৯৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেইখুপুরাতে,
আজহার মাহমুদ-(১২৮*)-১৯৯৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রাওয়ালপিণ্ডিতে,
ওয়াসিম আকরাম-(১০০)-২০০০ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে,
সাকলাইন মুশতাক-(১০১*)-২০০১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্রাইসচার্চে,
কামরান আকমল-(১০৯)-২০০৫ সালে ভারতের বিপক্ষে মোহালিতে,
কামরান আকমল-(১৫৪)-২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লাহোরে,
কামরান আকমল-(১১৩)-২০০৬ সালে ভারতের বিপক্ষে করাচিতে,
ইয়াসির শাহ-(১১৩)-২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাডিলেডে।

এনএস/