ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

সফলতাকে ছিনিয়ে আনতে হবে

রাশিদুল হাসান

প্রকাশিত : ১১:২৯ এএম, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:৪৪ এএম, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

দীপ জ্বেলে যাই। একটা সিনেমা ছিল। আমাদের জীবনেও আছে। কয়টা দিনের জন্য পৃথিবীতে এসে যদি দীপই না জ্বালিয়ে যেতে পারি তবে জীবনের সার্থকতা কই? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টুরিজম ইন্সটিটিউট খোলার জন্য সেই ১৯৯৬-৯৭ এ সেনেট সভায় প্রথম প্রস্তাব করি আমি।

আজাদ চোধুরী স্যার তখন ছিলেন উপাচার্য। স্যারসহ সেনেটের মেম্বারেরা এক কথায় প্রস্তাব পাশ করে দেন। এরপর অনেক দেরি করে হলেও ২০০৭ সালে ইন্সটিটিউট না, টুরিজম বিভাগের সৃষ্টি হল। আমি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আমার সাধের বিভাগেই যোগদান করলাম। কিন্তু কেমন যেন একটা ভাব, আমি যা চেয়েছিলাম তা পেলাম না। বিগত দশ বছরের মধ্যে একটা ল্যাবও করাতে পারলাম না। ছেলে মেয়েদের টুরিজম মানসিকতায় গড়ে তুলতে পারলাম না। ফলে টুরিজম এর চেয়ে তারা বেশি ঝুকে পড়ল ব্যাংক,বীমা, বিসিএস বা করপোরেট জব এর দিকে। যাই হোক।

২০১৮ সালের মাঝামাঝি একদম অবসর নিয়ে ঢাবি থেকে চলে এলাম। অবসরের পরও বহু শিক্ষক কোন না কোন মর্যাদা নিয়ে তাদের বিভাগের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। আমার কপালে তাও জুটল না। 

এর মাঝেই এগিয়ে এলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশীদ। আমাকে ডেকে বললেন, ফরগেট ঢাকা ইউনিভার্সিটি। আমরা কয়েকটা সুনির্দিষ্ট কলেজে টুরিজম খুলেছি। আপনি এদের সিলেবাস তৈরিসহ এদেরকে গড়ে তুলেন। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দায়িত্বটা নিলাম। প্রধান ৮টি কলেজের মধ্যে ৫টিতেই এখন ল্যাব তৈরি হয়ে গেছে। এখন কলেজগুলোর টুরিজম বিভাগ একটা স্তরে চলে এসেছে। খুব সুন্দর স্কিল্ড হিউম্যান রিসোর্স তৈরি করছে তারা। কলেজগুলো নিজেরাই এগিয়ে যেতে পারবে এখন।

উপাচার্য অধ্যাপক হারুন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় একটা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করলেন। বললেন, আপনি আমাদের কলেজের ছেলে-মেয়েদের জন্য টুরিজম এর ওপর তিনটা টেক্সট বই লিখে দেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এগুলো পাবলিশ করবে। একজন শিক্ষকের জীবনে এটাই তো সবচেয়ে বড় পাওনা। আমি কৃতজ্ঞ অধ্যাপক হারুনের কাছে। আজীবন কৃতজ্ঞ।

আগামি মাসের মধ্যেই দুটো বই প্রকাশ হয়ে যাবে আশা করি। এটা আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া গুলোর একটি। ভুল হোক শুদ্ধ হোক, বইগুলো ছেলে মেয়েদের উপকারেই তো আসবে। একাডেমিশিয়ান, রিসার্চার অধ্যাপক হারুন অর রশীদ সুনামসহ দীর্ঘজীবী হোন তাই কামনা করি। 

ঐ যে বললাম দীপ জ্বেলে যাই। আমার মনে হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কাজ আমি করে দিয়েছি। এখন আবার হাতছানি। অন্য কোথাও। বাংলাদেশ নেভি একটা বিশ্ববিদ্যালয় করছে। নাম তার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ম্যারিটাইম ইউনিভার্সিটি। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানকার মাননীয় উপাচার্য রিয়ার অ্যাডমিরাল এম খালেদ ইকবাল একদিন ডেকে বললেন, আমাদের ইউনিভার্সিটি এক নতুন ডিপার্টমেন্ট খুলতে যাচ্ছে। এর নাম হবে, ম্যারিটাইম টুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ।

পৃথিবীতে আমাদেরটা সহ মোট ১২টি ম্যারিটাইম ইউনিভার্সিটি আছে। আর সাউথ এশিয়াতে আমাদের সহ মাত্র তিনটা। শুনে গর্বই লাগল। আরো থ্রিল ফিল করলাম যখন খবর নিয়ে দেখলাম আমাদের ম্যারিটাইম টুরিজম ডিপার্টমেন্ট পৃথিবীর একমাত্র ম্যারিটাইম টুরিজম ডিপার্টমেন্ট হিসাবে গড়ে উঠবে। সামনে ব্লু ইকোনোমির যুগ। সুতরাং ম্যারিটাইম টুরিজম এর একটা অনবদ্য ভূমিকা থাকতেই হবে। এখনই ম্যারিটাইম টুরিজম, ক্রুজ শিপিং, স্কুবা, ডাইভিং, স্নোরকেলিং, প্যারাশুটিং ইত্যাদির চাহিদা ক্রম বর্ধমান।

আমার কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জ। তবুও রাজি হয়ে গেলাম। আমার স্নেহধন্য ছাত্র এবং সেখানকার ম্যনেজমেন্ট এর শিক্ষক ওয়াহিদুল শেখ শেমন এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং ইচ্ছাতে ফুল প্রফেসর হিসাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ম্যারিটাইম ইউনিভার্সিটিতে যোগদান করলাম। উপাচার্য রিয়াল অ্যাডমিরাল খালেদ ইকবাল এর কাছে আমি কৃতজ্ঞ, তিনি বাংলাদেশের জন্য এক নতুন দিগন্তের কাজ করার চ্যালেঞ্জটা আমার হাতে তুলে দিলেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু ম্যারিটাইম ইউনিভার্সিটি বিরাট অবদান রাখবে সামনের দিনগুলিতে।
 
এমনভাবেই জীবন এগিয়ে যাবে। চ্যালেঞ্জের পর চ্যালেঞ্জ। সফলতাকে ছিনিয়ে আনতেই হবে। দীপ জ্বেলে যেতেই হবে। এক সময় নিজের জীবনের দীপটাই নিভে যাবে সবার অগোচরে। কি পেলাম আর কি পেলামনা, হিসাব না করে এই ক্ষুদ্র জীবনে আল্লাহ তায়ালা যতটুকুই দিয়েছেন তার জন্য শুকরিয়া আদায় করা ছাড়া আর কি করতে পারি আমরা। টেনে নিচে নামানোর ঘৃণ্য মানসিকতা বাদ দিয়ে অধ্যাপক হারুন এবং রিয়ার অ্যাডমিরাল খালদের মত বৃহৎ মনের মানুষ গুলোই দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। জয়তু সকল সুন্দর মনের মানুষ। বাংলাদেশ এগিয়ে যাক।

লেখক
প্রফেসর
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়