ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মেয়র আইভীর ওপর হামলা

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৭:৪১ পিএম, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের ৯ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের ৯ নেতার বিরুদ্ধে মামলা

নারায়ণগঞ্জ শহরে ফুটপাতে হকার বসানো নিয়ে মেয়র আইভীসহ সঙ্গে থাকা লোকজনদের ওপর হামলার ঘটনায় আদালতের নির্দেশে আওয়ামী লীগের ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়।

এর আগেরদিন নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত মামলা রেকর্ড করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নাল আবেদীন মন্ডল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জানান, ‘আদালতের নির্দেশে মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মামলায় ৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও এক হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টা, জখম, নাশকতা, ভাঙচুরসহ অরাজকতার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল, শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন সাজনু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জুয়েল হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সেক্রেটারী মিজানুর রহমান সুজন, যুবলীগ নেতা জানে আলম বিপ্লব, শহর যুবলীগের নেতা নিয়াজুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা নাছির উদ্দিন ও চঞ্চল মাহমুদ।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আইন বিষয়ক কর্মকর্তা জিএমএ সাত্তার বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জর একটি আদালতে ওই মামলার আবেদন করেন। ৪ ডিসেম্বর বুধবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম ফাহমিদা খাতুনের আদালত ওই আর্জি গ্রহণ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন- ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারী বিকেল ৪টায় মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও অন্যদের সাথে নিয়ে পদযাত্রা শুরু করে। বিকেল সাড়ে ৪টায় পদযাত্রাটি বঙ্গবন্ধু সড়কের চাষাঢ়া সায়েম প্লাজার সামনে আসলে বিবাদীরা অত্যাধুনিক পিস্তল, রিভলবার, শর্টগান ও দেশী অস্ত্র নিয়ে চারদিক থেকে হামলা করে। বৃষ্টির মত ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। 

এসময় মেয়র আইভীসহ সঙ্গে থাকা লোকজনদের হত্যার উদ্দেশ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। হামলায় আইভীসহ ৪৩ জন গুরুতর ও শতাধিক আহত হয়। 

এজাহারে বলা হয়, বিবাদীরা সকলেই এমপি শামীম ওসমানের ইন্ধনে ও প্ররোচনায় উক্ত ঘটনা ঘটায়। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ফুটপাতে হকার বসানোর কথা বলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয়ার কারণেই বিবাদীরা পরিকল্পিতভাবেই মেয়র আইভীর শান্তির মিছিলে ভয়াবহ হামলা করে। কারণ ফুটপাত হকারমুক্ত রাখতে এ নিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে মেয়রের একাধিকবার কথা হয়। এমপি সেলিম ওসমান এ বিষয়ে পত্র দিলে সেটারও জবাব দেওয়া হয়। 

খোদ প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী, যানজট নিরসন ও জনগনের হাটাচলার জন্য ফুটপাত অবাধ রাখতেই সচেষ্ট ছিল সিটি করপোরেশন। কিন্তু নির্বাচনী এলাকা এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ার পরেও নারায়ণগঞ্জ শহরে হকার বসবে মর্মে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের লাগাতার ঘোষণা, হুমকি, প্রশ্রয় ছিল বিবাদীদের জন্য উস্কানিমূলক। এ কারণেই বিবাদীরা ওই ঘটনার সাহস পায়। 

আদালতে মামলার আবেদনে বলা হয়েছিল, ঘটনার চারদিন পর ২২ জানুয়ারী সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় এজাহার দাখিল করা হয়। কিন্তু থানা কর্তৃপক্ষ এজাহার গ্রহণ না করে জিডি হিসেবে রুজু করে। পরে জানা যায়, সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ না করে জিডি হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।

কোনও প্রকার আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ না হওয়ায় ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তখন পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু সদর মডেল থানা পুলিশও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি।

এনএস/