ঢাকা, মঙ্গলবার   ০১ জুলাই ২০২৫,   আষাঢ় ১৬ ১৪৩২

বিদ্যালয়ের মাঠে আগুন ধরাতে গিয়ে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী দগ্ধ 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫২ পিএম, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯ শুক্রবার

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার উজলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যাক্ত আবর্জনায় আগুন ধরাতে গিয়ে মারাত্বকভাবে দগ্ধ হয়েছে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সিন্থিয়া (৮)। 

অগ্নিদগ্ধের ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর ঘটলেও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রিজিয়া খাতুন ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান কামালকে ঘটনাটি জানালে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা শুরু হয়। সে সময় দগ্ধ ছাত্রীটির সঙ্গে নানি ও খালা ছিল। কিন্তু ওই বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক-শিক্ষিকা ছিল না।

উজলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রিজিয়া খাতুন জানান, বিদ্যালয়ের পরিত্যাক্ত আবর্জনা এক জায়গায় স্তুপ করে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে বলা হয়। এ কথা বলে অন্যান্য শিক্ষকসহ তিনি অফিস কক্ষে বসে আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় সিন্থিয়া অগ্নিদগ্ধ হলে তারা তাকে সঙ্গে সঙ্গে দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌর শহরের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ছাত্রীটিকে ফিরিয়ে দেয়া হলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। 

এরপর তিনি ছাত্রীটির চিকিৎসা ব্যয় সংগ্রহের জন্য সেখান থেকে চলে আসেন। তারপর থেকে ছাত্রীটির খোঁজ নেয়া হয়নি বলে তিনি জানান। তিনি দাবী করেন, টাকা সংগ্রহ করে ঢাকায় চলে যাবেন। তবে মারাত্বকভাবে দগ্ধ ছাত্রী কোথায় চিকিৎসা নিচ্ছে তা তিনি জানেন না।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান কামাল বলেন, ছাত্রীটি এতটাই দগ্ধ হয়েছে তাকে বাঁচানো মুশকিল। কারণ, বিদ্যালয়ে এতবড় দুর্ঘটনা ঘটলে বিষয়টি চেপে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু সেটা সম্ভব না হওয়ায় রাতে তাকে ঘটনাটি জানানো হয়। মেয়েটির পরিবার এতটাই অস্বচ্ছল যে, চিকিৎসার জন্য টাকা সংগ্রহ করাও তাদের জন্য দুরহ। ছাত্রীটির চিকিৎসা করানোর জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ণ ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা দেবী ফাউন্ডেশনের ফ্রি এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের সহযোগীতা পাওয়ার কারণে তাকে সেখানে পাঠানো সম্ভব হয়েছে। 

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে ছাত্রীটির চিকিৎসা ব্যয় ওই বিদ্যালয়ের দায়িত্বহীন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক। শুক্রবার দুপুরে আমরা সদর হাসপাতালে উপস্থিত থেকে ছাত্রীটিকে চিকিৎসার জন্য কিছু টাকাসহ ঢাকাতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। তার চিকিৎসার জন্য আমাদের সার্বিক সহযোগীতা থাকবে। 
শনিবার (৭ ডিসেম্বর) এ ব্যাপারে একজন সহকারী শিক্ষা অফিসার তদন্ত করবে। তদন্তে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতার প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
    
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির জানান, ছাত্রীটির শরীর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সেজন্য তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ বার্ণ ইউনিটে প্রেরণ করা হয়েছে। 

কেআই/এসি