ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

মুক্তিযোদ্ধাদের ‘পরিচ্ছন্নতার যুদ্ধ’ ঘোষণা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:২৫ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ শুক্রবার

বিজয়ের মাসে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে ‘পরিচ্ছন্নতার যুদ্ধ’ ঘোষণা

বিজয়ের মাসে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে ‘পরিচ্ছন্নতার যুদ্ধ’ ঘোষণা

মহান বিজয়ের মাসে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে ‘পরিচ্ছন্নতার যুদ্ধ’ ঘোষণা করেছে মুক্তিযোদ্ধারা। দেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতেই বীর মুক্তিযোদ্ধারাই এখন হাতে তুলে নিচ্ছেন পরিচ্ছন্ন দেশ গড়ার দায়িত্ব। সেই দায়িত্ববোধ থেকে বাংলার সূর্যসন্তানরা বিজয়ের মাসেই শুরু করেছেন তাদের নতুন যুদ্ধ। প্রিয় মাতৃভূমিকে পরিচ্ছন্ন করার লক্ষ্যে ডেটল হারপিক ‘পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ’ ও আরটিভি ‘পরিচ্ছন্নতার যুদ্ধ’ ক্যাম্পেইন শুরু করেছে।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবন থেকে নতুন এই যুদ্ধের উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

এতে আরও উপস্থিত ছিলেন- দেশের সাহসী সন্তান বীর প্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ স্কাউটসের সহ-সভাপতি মোঃ হাবিবুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. গোলাম রসুল ভূইয়া, ডেটল-হারপিক পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের পরিচ্ছন্ন দূত চিত্রনায়ক রিয়াজ, মূখ্য সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আহমেদ তারেক, আরটিভির সিইও আশিক রহমানসহ বাংলাদেশ স্কাউটসের প্রায় দুই শতাধিক সদস্য। 

অনুষ্ঠানে নতুন প্রজন্মের হাতে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের মানচিত্র তুলে দেয়া হয়। এসময় দেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়ে তাদেরকে অঙ্গিকার করানো হয়। 

এর আগে মাতৃভূমিকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য দেশের বীর সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ ঘোষণা ও পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের মানচিত্র হস্তান্তর করেন। 

অনুষ্ঠানের শুরুতে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের সাথে নিয়ে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা পরিস্কার করেন ‘ডেটল হারপিক পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ’র  প্রায় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী ও আরটিভির কর্মীরা। এরপর সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদেরকে সম্মান জানিয়ে ব্যানডানা মাথায় পরিয়ে দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দেয়ার জন্য অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। তাদের এই দেশটিকে সুন্দর ও পরিচ্ছন করে গড়ে তুলতে হবে আমাদের। 

তিনি বলেন, যারা দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে থেকে ঘুষ ও দুর্নীতি করে, তারাও দেশের অপরিচ্ছন্ন ব্যক্তি। তাদেরকেও পরিস্কার করতে হবে। তার জন্য সবাইকে এক সাথে কাজ করতে হবে এবং যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে এসে নতুন যুদ্ধ শুরু করতে হবে। তা হচ্ছে পরিচ্ছন্নতার যুদ্ধ। তাহলেই একটি সুন্দর দেশ গড়ে উঠবে। এসময় এমন মহতী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ডেটল হারপিক ও আরটিভিকে তিনি ধন্যবাদ জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, সোনার বাংলা গড়তে এই ধরনের উদ্যোগ অনেকটাই সহযোগিতা করবে। এজন্য সবাইকে এই ধরনের উদ্যোগ হাতে নিয়ে কাজ করতে হবে। শুধু নগরের মধ্যে সীমিত থাকলেই হবে না, এটি দেশের প্রতিটি জায়গায় ছড়িয়ে দিতে হবে। এতেই একটি পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ত্রিশ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে আমাদের এই দেশ পেয়েছি। দেশকে ভালোবেসেই তারা জীবন দিয়েছিল। আমরা তাদের মতো দেশকে ভালোবেসে জীবন দিতে না পারলেও দেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি। যেখানে সেখানে যত্রতত্র ময়লা না ফেলি। আমরা বিদেশে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে যদি থাকতে পারি, তাহলে আমাদের দেশকেও পরিস্কার রাখতে পারবো।

এসময় বীর প্রতীক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ স্কাউটসের সহ-সভাপতি মোঃ হাবিবুল আলম বলেন, আমরা সুন্দর একটি দেশ উপহার দেয়ার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু সেই দেশ হিসাবে প্রতিফলন করতে পারি নাই। এখন আমাদের নতুন প্রজন্মকে নিয়েই সেই অপরিপূর্ণ কাজটি করতে হবে। সবাইকে এই পরিচ্ছন্নতার যুদ্ধের কর্মী হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ আমার দেশ আমাকে পরিস্কার করতে হবে। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

আরটিভির সিইও আশিক রহমান বলেন, সোনার বাংলা গড়তে ডেটল হারপিকের সাথে আমরা দেশের প্রতিটি জায়গায় পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে বার্তা ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাবো।

ডেটল হারপিক পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের পরিচ্ছন্ন দূত চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, একটি সুন্দর বাংলাদশে গড়তে যেখানে সেখানে যত্রতত্র ময়লা না ফেলি। এই অঙ্গিকার নিয়েই আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। আসুন, আজ থেকেই আমরা এই অঙ্গিকার শুরু করি।

অনুষ্ঠানে ডেটল হারপিক পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশের মূখ্য সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আহমেদ তারেক বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যে আশা নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিল তার সঠিক প্রতিফলন করতে পারি নাই। আমরা চাই  নতুন প্রজম্ম সেই দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তাই পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে এক সাথে কাজ করে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ব।

দেশের মানুষের মাঝে পরিচ্ছন্নতার অঙ্গীকার বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর, সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ে তোলাই এই ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য। এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা, চারপাশে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ইত্যাদি সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপি ‘ডেটল হারপিক পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইন শুরু করে। এর অধীনে সরাসরি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি গণমাধ্যম দ্বারাও জনগণকে পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। 

‘ডেটল হারপিক পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ’ দেশের সাম্প্রতিক সমস্যা ডেঙ্গু প্রতিরোধের লক্ষ্যে বিভিন্ন জায়গায় ‘জমে থাকা পানি এবং আবর্জনা পরিষ্কার করার কার্যক্রম পরিচালনা করে। এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করতে দেশের প্রতিটি মানুষের নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানি এবং আবর্জনা পরিষ্কার করে চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্যোগ নিতে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ডেটল হারপকি পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিলো। 

এছাড়াও দেশের সকল নাগরিকের মাঝে পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে অঙ্গীকার গ্রহণ করানোর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর, সুস্থ ও পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে ‘পরিচ্ছন্নতার অঙ্গীকার’ শীর্ষক একটি ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে আসছে বাংলাদেশ স্কাউটস এবং ‘ডেটল হারপিক পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ’।

এনএস/