ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

শহীদ সিদ্দিকুর রহমান ছিলেন শিক্ষার্থীদের আদর্শ

দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ১০:১৯ এএম, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ শনিবার

সিদ্দিকুর রহমান খান। ঢাকার নবাবগঞ্জবাসীর কাছে সিদ্দিক মাষ্টার নামেই পরিচিত।  ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি দোহার, নবাবগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধ কমান্ডার (বিএলএফ) ছিলেন। 

বিভিন্ন যুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছর পর ১৯৭২ সালের ১২ নভেম্বর রোববার নবাবগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রাবাসের ১নং কক্ষের সামনে এশার নামাজের ওযু করার সময় আততায়ীর গুলিতে শহীদ হন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা।

ইছামতি নদীর পাড়ে পুরনো শহীদ মিনারের পাদদেশে তাকে কবর দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন যাবত অবহেলায় অযত্নে থাকার পর সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক মাস্টারের কবরটি রং করা হয়েছে। তবে সারাবছরই সেখানে মাদকসেবীদের আড্ডা দিতে দেখা যায়।

জানা যায়, মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার চারিগ্রামে গোলাম রাজ্জাক খানের ছেলে সিদ্দিকুর রহমান খান। গোলাম রাজ্জাক ও রাহেমা খানম দম্পত্তির তিন ছেলে ও ছয় মেয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। সিদ্দিকুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী বিভাগে বি এ অনার্স ডিগ্রী লাভ করেন।

চাকরি জীবনে নবাবগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ইংরেজী বিভাগে শিক্ষকতার দায়িত্বে ছিলেন। শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় মানুষ ছিলেন প্রতিবাদী, সৎ ও সাহসী সিদ্দিক মাষ্টার। শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ছিলেন আদর্শ। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ সেই বীর মুক্তিযোদ্ধার কবরটি অযত্ন আর অবহেলায় থাকলেও দেখার কেউ নেই।

ছাত্র জীবনে সিদ্দিকুর রহমান বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া  ৬ দফা আন্দোলনে অন্যান্যদের সাথে কারাবরণ করেন তিনি। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে থেকেই তিনি স্থায়ীভাবে নবাবগঞ্জে বসবাস করতেন। জয় করে নিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের মন। অত্যন্ত সাদামাটা জীবনযাপন ও ব্যক্তিত্বের কারণে আজও নবাবগঞ্জের অনেক শিক্ষার্থীর কাছে আদর্শ তিনি।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সিদ্দিক মাষ্টার যোগ দেন যুদ্ধক্ষেত্রে। যুদ্ধের কৌশল চাতুর্যে এবং অসামান্য যোগ্যতার ভিত্তিতে তিনি দোহার, নবাবগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ এই তিনটি থানার মুক্তিযুদ্ধ কমান্ডার (বিএলএফ) ছিলেন। 

এছাড়া তিনি নিজ গ্রাম সিংগাইরের চারিগ্রামকে মূল ঘাটি করে সেখান থেকে শত্রুদের উপর আক্রমনের পরিকল্পনা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করতেন। এভাবে সাহসের সাথে ৯ মাস যুদ্ধ পরিচালনা করেন এই মুক্তিযোদ্ধা। এ রকম অসংখ্য সিদ্দিকুর রহমানের অসাধ্য চেষ্টায় মাত্র নয় মাসে এ দেশের মহান স্বাধীনতা ও লাল সবুজের বিজয়ী পতাকা অর্জন করা সম্ভব হয়েছিল। 

যুদ্ধের এক বছর পর আততায়ীর গুলিতে মারা যাওয়ার পর নবাবগঞ্জে তার নিজের হাতে গড়া ইছামতি নদীর পাড়ে পুরানো শহীদ মিনারের পাদদেশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। 

প্রথমদিকে এই মুক্তিযোদ্ধার কবরে অনেকে শ্রদ্ধা জানালেও এখন কাউকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায় না। এমনকি বিজয়ের মাসে (ডিসেম্বর) তার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে তেমন কাউকে দেখা যায় না, কেউ খবরও রাখে না। অবহেলায় আর অযত্নে পড়ে আছে এ নির্ভিক সাহসীর কবর।

তার আদর্শে অনুপ্রাণিতদের সরকারের কাছে দাবি, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর রহমান খানের কবরটি সংরক্ষণ করার পাশাপাশি সেখানে একটি  মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হউক।

এআই/