ঢাকা, বুধবার   ০১ মে ২০২৪,   বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ

সাভার প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৩:০৭ পিএম, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ রবিবার

রাত পোহালেই ৪৮তম বিজয় দিবস উদযাপন করবে জাতি। দিনের প্রথম প্রহর থেকেই মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় সিক্ত হতে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে লাল সবুজের গালিচার মধ্যে সাতটি স্তম্ভে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর বহুকালের বঞ্চনা থেকে মুক্ত জাতির গৌরব আর অহংকারের এ দিনটিতে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে নামবে লাখো মানুষের ঢল। তাদের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় মোড়ানো ফুলে ফুলে ভরে উঠবে স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদি। তাই জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ইতিমধ্যে ধুয়ে মুছে প্রস্তুত করা হয়েছে।

সবুজে ঘেরা ১০৮ হেক্টর জমির ওপর নির্মিত স্মৃতিসৌধ এলাকাটি গণপূর্তের কয়েকশ’ কর্মীর নিরলস পরিশ্রমে পেয়েছে এক নতুন রূপ। রং-তুলির নতুন সাজে আর আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে ধুয়ে মুছে চকচকে করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ চত্বরের প্রতিটি স্থাপনা।  ১৫০ বর্গফুটের উচ্চতার স্মৃতিসৌধটি সাত জোড়া ত্রিভুজাকৃতির দেয়াল নিয়ে গঠিত। দেয়ালগুলো ছোট থেকে ক্রমশঃ বড়ক্রমে সাজানো হয়েছে। এই সাত জোড়া দেয়াল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি ধারাবাহিক পর্যায়কে নির্দেশ করে। 

১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ ছয় দফা
আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ- এই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমার তাৎপর্য বহন করছে।

স্মৃতিসৌধ চত্বরের চারপাশের টবে শোভা পাচ্ছে নানা ধরনের রঙিন ফুল আর পাতা বাহারের গাছ। নিরাপত্তার জন্য ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, উচ্চমাত্রার সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। পুলিশ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারিসহ স্মৃতিসৌধ এলাকায় থাকবে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়। এখন শুধু শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর অপেক্ষা।

জাতির শ্রদ্ধা জানানোর প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে ইতিমধ্যে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করেছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী। এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, এই দিনটি আমাদের গৌরবের, গর্বের ও বিজয়ের। দিনটি পালন করতে সব ভেদাভেদ ভুলে যাই আমরা। স্মৃতিসৌধ ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত করা হয়েছে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। 

১৬ ডিসেম্বরের প্রথম প্রহরে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পন করবেন রাষ্ট্রপতি  অ্যাডভোকেট মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। থাকবে তিন বাহিনীর কুচকাওয়াজ ও গাড়ি বহরের মহড়া। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। 

আগত দর্শনার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘ্নে করতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক এবং স্মৃতিসৌধ চত্বরের চারপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি মোতায়েন থাকবে।

জাতীয় স্মৃতিসৌধের গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৗশলী মো. মিজানুর রহমান জানান, মহান বিজয় দিবসে রাষ্ট্রপতি,
প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ লাখো মানুষ জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন। এ জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ধুয়ে-মুছে, রং-তুলির আঁচড় ও রং-বেরংয়ের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। সেই সঙ্গে স্মৃতিসৌধে আগতদর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও কোনো প্রকার অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এখানকার পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সর্বোচ্চসতর্কতামূলক অবস্থানে রাখা হয়েছে।
 
আইনশৃঙ্খলা সম্পর্কে ঢাকা জেলা পুলিশের এডিশনাল এসপি (ক্রাইম) সাইদুর রহমান বলেন,  প্রতিবছরের মতো এবারও
নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরধার করা হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি রাখা হয়েছে সাদা পোশাকের বেশ কয়েকটিইউনিট। এর সঙ্গে থাকছে সিসিটিভিতে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থাও। 

এএইচ/