ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

বিশ্ব তোলপাড় করা এই খুদের খোঁজ মিলেছে (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫০ এএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ সোমবার | আপডেট: ১১:৫১ এএম, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ সোমবার

নিখুঁত কভার ড্রাইভ, স্ট্রেট ড্রাইভ। টেকনিকে গলদ নেই। ব্যাকরণ মেনেই গ্রিপ ধরেছে। অথচ পরনে ডায়াপার। কতই বা বয়স হবে! সদ্য হাঁটা শিখেছে হয়তো।

বেশ কয়েক দিন সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই ফেলে বিস্ময় শিশুর ভিডিও। মাসখানেক আগে প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন এই খুদে ক্রিকেটারের ছবি টুইট করেন।

গত শনিবার কেভিন পিটারসেন সেই বিস্ময় শিশুর ভিডিও পোস্ট করে কোহলিকে ট্যাগ করে লেখেন, ‘তোমার দলে এই ছেলেটাকে নেবে নাকি?’ কোহলিও পাল্টা টুইট করেন, ‘ছেলেটা কোথাকার? অবিশ্বাস্য।’

রোববার জানা গেল বিস্ময় শিশুর পরিচয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে জানা গেল, পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়ির কিছু দূরেই থাকে এই ক্ষুদে। বেহালার মুচিপাড়া অঞ্চলের অভাবী পরিবারের খুদে প্রতিভা শেখ শাহিদ। বয়স মাত্র তিন বছর। তাকে নিয়েই উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া।

কী করে এত নিখুঁত ব্যাট করে শাহিদ? খুদে ক্রিকেটারের বাবা শেখ শামসের আনন্দবাজারকে বলেন, ‘গত বছর বিশ্বকাপের আগে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ওয়ান ডে সিরিজের ম্যাচ দেখছিলাম। ছেলে দুষ্টুমি করছিল। ওকে শান্ত করার জন্য আমার সঙ্গে ক্রিকেট দেখতে বললাম। ব্যাটও কিনেছিলাম ওর জন্য। কিছুক্ষণ পরে দেখি নিজেই ব্যাট নিয়ে এসে টিভি দেখতে দেখতে নকল করছে। তখন ব্যাট করছিল বিরাট কোহলি। দেখছিলাম, বিরাট যেভাবে স্ট্রোক নিচ্ছে, সেভাবেই চেষ্টা করছে ও। মাত্র দু’বছর বয়সে এ রকম স্টান্সে ব্যাট করতে দেখে বিশ্বাস হচ্ছিল না।’

পরের দিন থেকেই বাড়ির ছাদে ছেলেকে প্র্যাক্টিস করাতেন। যে ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল, সেটা ছ’মাস আগের। তখন দু’বছর আট মাসের শাহিদ। এখন তিন বছর দু’মাস। এই ছ’মাসে অনেক কষ্টে ছেলেকে গ্লাভস কিনে দিয়েছেন বাবা শামসের। ভর্তি করিয়েছেন বিবেকানন্দ পার্কে স্বামী বিবেকানন্দ স্কুল অব ক্রিকেটে অমিত চক্রবর্তীর প্রশিক্ষণে। পেশায় ক্ষৌরকার শামসেরের বিশ্বাস হচ্ছে না, কী করে তার শিশু এত ভাল ব্যাট করে। তার বংশে কেউ ক্রিকেট খেলেননি। শামসের ক্রিকেট পছন্দ করলেও ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেননি। ছেলের এই প্রতিভা দেখেও আশঙ্কা, ‘অনেক খরচ। কী করে বাকি সরঞ্জাম কিনে দেব জানি না।’

তিন বছরের এই শিশুকে শুরুতে কোনও কোচিং ক্যাম্প নিতে চায়নি। শেষে বিবেকানন্দ পার্কে অমিত চক্রবর্তীকে অনেক অনুরোধ করেন। শামসেরের কথায়, ‘স্যরকে বলেছিলাম, ‘শুধু এক বার ওকে ব্যাট করার সুযোগ দিন।’ প্রথম বলটি শাহিদকে করা হয়। নিখুঁত স্ট্রেট ড্রাইভ করে। তারপরে অমিত স্যর আর কিছু বলার জায়গায় ছিলেন না। আমাকে শুধু বলেন, এই ছেলেটিকে আমার হাতে তুলে দাও।’

তার ছেলেকে নিয়ে কোহলি টুইট করার পরে শামসের বুঝতে পেরেছেন, শাহিদ সত্যি বিস্ময়-প্রতিভা। শামসের চান, ভারত অধিনায়কের কাছে তার ছেলেকে এক বার নিয়ে যেতে। বলছিলেন, ‘কোহলি ব্যাট করলে ও টিভির সামনে বসবে, আর কোথাও নড়াচড়া করবে না। এমনিতে বেশ দুষ্টু, কিন্তু কোহলির মধ্যে ও কী খুঁজে পায় জানি না। খাওয়া-দাওয়া ভুলে যায়। শুধু অবাক হয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকে আর খাটে দাঁড়িয়ে শ্যাডো প্র্যাক্টিস করে। কোহলি দ্রুত আউট হলেও মুখ গোমড়া করে বসে থাকে।’

শামসের চান, কলকাতার কোনও বিখ্যাত কোচিং ক্যাম্পে তার ছেলেকে ভর্তি করাতে। কিন্তু বড় কোচিং ক্যাম্পে ভর্তি করানোর অর্থ তিনি জোগাড় করতে পারবেন কি না জানেন না।

বাংলার রঞ্জি ট্রফিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার কোচিং ক্যাম্পে বিস্ময়-শিশুকে নিতে তৈরি। তার ঘোষণা, ‘একেবারে বিনামূল্যে ওকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সঙ্গে উপহার হিসেবে ক্রিকেটের যাবতীয় সরঞ্জামও তুলে দেওয়া হবে খুদে প্রতিভার হাতে।’

ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন

একে//