ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যে গ্রামে মানুষের চেয়ে পুতুল বেশি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৪৭ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ শুক্রবার | আপডেট: ১২:৫৫ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ শুক্রবার

জাপানের শিকোকু দ্বীপের একটি গ্রাম নাগোরো। এখানে মানুষের সংখ্যা খুবই কম। মাত্র ত্রিশ জনের বাস এই গ্রামে। এর মধ্যে কোন শিশু নেই। গ্রামটিতে সর্বশেষ শিশুটির জন্ম হয়েছিল ১৮ বছর আগে। ২০১২ সালে গ্রামটির একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায় ছাত্রছাত্রীর অভাবে। তবে এখানে মানুষের চেয়ে ১০ গুণের বেশি রয়েছে পুতুল।

জাপানের জনসংখ্যা দিন দিন কমে আসছে ও অবশিষ্টরা যাচ্ছে বুড়িয়ে। এই পরিস্থিতির ধাক্কা দেশটির দুর্গম এলাকাগুলোতে চরমভাবে টের পাওয়া যাচ্ছে। তার বাস্তব চিত্র হলো নাগোরো গ্রামটি।

নাগোরো গ্রামের সুকিমি আয়োনো নামের এক নারী মানুষের শূন্যতা পূরণের জন্য পুতুলের আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি প্রাথমিক স্কুলটিতে শিক্ষার্থী ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। তবে রক্ত মাংসের মানুষ নয়, পুরনো কাপড় দিয়ে বানানো পুতুল দিয়ে এই কাজটি করেছেন। 

৭০ বছর বয়সী এ বৃদ্ধা হাতে তৈরি করেন ৪০টিরও বেশি পুতুল। যা তিনি বন্ধ স্কুলের ভেতর ও মাঠে সাজিয়ে রেখেছেন। মাঠের পুতুলগুলো দৌড় প্রতিযোগিতা, দোলনা আর বল ছোড়ার ভঙ্গিমায় রেখে দিয়েছেন। যার মাধ্যমে স্কুলের স্পোর্টস ডে’র কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।

স্কুলের ভেতর থাকা পুতুলগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি সিঁড়ির আশপাশে ঘোরাফেরা করছে, কেউ শিক্ষকের সামনে ডেস্কে বসে পাঠ নিচ্ছে। আয়োনোর পুতুলগুলোর মধ্যে আছে উচ্ছ্বাস, মনে হচ্ছে যেন সবই জীবন্ত।

আয়োনোর দেখাদেখি তার বন্ধুরাও ৩৫০-এর বেশি পুতুল বানিয়েছেন। কাঠ আর তারের কাঠোমো দিয়ে বানানো, খবরের কাগজ ও জাপানের বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া পুরনো কাপড় দিয়ে বানানো এ পুতুলগুলো নাগারো গ্রামের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শিত হচ্ছে। 

এসব পুতুলগুলোর মধ্যে কোনোটি বৃদ্ধ মহিলার, যিনি পথের ধারের কবরের দিকে যাচ্ছেন; কেউ বিশ্রাম নিচ্ছেন হুইলচেয়ারে। নির্মাণ শ্রমিকরা কাজের বিরতিতে সিগারেট ধরিয়েছেন, কেউ কেউ অপেক্ষা করছেন বাস স্টপে। এক বাবা বাচ্চাকাচ্চা ভর্তি গাড়ি নিয়ে চলছেন, কোথাও কেউ গাছ ধরে ঝাঁকাচ্ছেন।

গ্রামবাসীর মধ্যে পুতুল বানানোর ধারণা আসে আয়োনোকে দেখে। একসময় আয়োনো তাদের বাড়ির সামনে কিছু লাল মুলা ও মটর বীজ রোপণ করেছিলেন। পাখির হাত থেকে বাঁচাতে এরপর সেখানে বানান বাবার চেহারার কাকতাড়ুয়া। তারপর থেকেই পুরো গ্রামে নানা জাগায় বসানো শুরু হয় পুতুল। 

নাগোরো গ্রামের মোট জনসংখ্যার চেয়ে ১০ গুণের বেশি রয়েছে পুতুল। তাই এই গ্রামকে পুতুলের গ্রাম বলে অভিহিত করা হচ্ছে জাপানে। নাগোরো গ্রামে প্রাণোচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে আয়োনোর এই চেষ্টার কথা নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে ফুটে উঠেছে।

এএইচ/