ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এনআরসির প্রতিবাদে চেন্নাই ও দিল্লিতে বিশাল মিছিল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৩০ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ মঙ্গলবার

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানের পরও দেশটিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ থামেনি। দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ানো বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ২৫ জন নিহত হয়েছে। দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, জয়পুর, উত্তরপ্রদেশ, বেঙ্গালুরুসহ বিভিন্ন রাজ্যে সোমবারও রাজপথে নামেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এবার প্রতিবাদ দেখা গেল দক্ষিণ ভারতে। 

গতকাল সোমবার চেন্নাইয়ের রাজপথে বিশাল মিছিল করছে বিরোধীরা। দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজাঘম (ডিএমকে)-এর ডাকা প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেন কংগ্রেস-সিপিএমসহ অধিকাংশ বিরোধী দলের নেতারা। ঘোষণা দেওয়ার পরই দিল্লির রাজঘাটে গতকাল বিকেল থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে জাতীয় কংগ্রেস। 

রাজঘাটে হাজির হন সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে বেঙ্গালুরুতে। তবে উত্তর প্রদেশের লখনৌসহ দেশের অন্যান্য প্রান্তে কিছুটা স্তিমিত প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। অন্যদিকে, নাগরিক আইনের সমর্থনেও মিছিল হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। খবর এনডিটিভি ও আনন্দবাজারের।

নাগরিকত্ব  আইনের প্রতিবাদে গতকাল প্রতিবাদ মিছিলের ঘোষণা আগেই দিয়েছিল ডিএমকে। সেই মিছিল শুরু হতেই রাস্তায় মানুষের ঢল নামে। ডিএমকেপ্রধান এমকে স্টালিন ছাড়াও মিছিলে যোগ দেন কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক কে বালাকৃষ্ণানের মতো নেতারা। এদিন সকালে শহরের এগমোরে জমায়েত হন সব দলের সমর্থকরা। সেখান থেকে মিছিল করে শেষ হয় রাজারথিনাম স্টেডিয়ামে। এই স্টেডিয়ামেই জনসভায় বক্তব্য দেন মিছিলে অংশ নেওয়া দলের নেতানেত্রীরা। মিছিল করতে পুলিশের অনুমতি না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ডিএমকে। অবশেষে রোববার অনুমতি দেন হাইকোর্ট।

বেঙ্গালুরুতে এদিন প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করেছিলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। সকাল ১১টা নাগাদ শহরের হজরত খাজি মহম্মদ আবদুল কুদ্দুস সাহিব ঈদগাহ ময়দান থেকে মিছিল করে শহরের মিলার রোড, নন্দী দুর্গা রোডের মতো এলাকা প্রদক্ষিণ করে তারা। অন্যদিকে শহরে এদিন নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে একটি মিছিল করেছে বিজেপি। নাগরিকত্ব আইনের সমর্থন করে মিছিল হয়েছে কলকাতাতেও। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহসভাপতি জে পি নাড্ডা।

গত কয়েক দিন ধরে লখনৌসহ উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় যে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, গতকাল তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯ ডিসেম্বর থেকে বন্ধ থাকা ইন্টারনেট পরিষেবা এদিন চালু হয়েছে এলাহাবাদে। রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তেও ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ শিথিল হচ্ছে। তবে গত রোববার বিক্ষোভে উত্তেজনা ছড়ানোয় গতকাল নতুন করে কারফিউ জারি হয়েছে মধ্য প্রদেশের জব্বলপুরে। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখনও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের প্রতিবাদ গতকাল অষ্টম দিনে পড়েছে।

কথামতোই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে দিল্লির রাজঘাটে বিকেল ৩টা থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করে জাতীয় কংগ্রেস। রাজঘাটে এদিন যোগ দেন সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ছাড়াও কমলনাথ, কপিল সিব্বাল, গোলাম নবি আজাদের মতো প্রবীণ কংগ্রেস নেতারাও শামিল হয়েছেন এই বিক্ষোভ সমাবেশে। দেশের নানা প্রান্তের কংগ্রেস নেতারাও ছুটে এসেছেন এই মঞ্চে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের তীব্র প্রতিবাদ জানাতে।

রাজঘাটে এদিন আসা মাত্রই দেশের সংবিধানের মুখবন্ধ পাঠ করেন সোনিয়া গান্ধী। তার কিছুক্ষণ পরেই রাহুল গান্ধী এবং মনমোহন সিংও পাঠ করেন সংবিধানের প্রস্তাবনা। কংগ্রেস নেতা এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেন, প্রতিটি অবিজেপি দলেরই রীতিমতো মিছিল করে, শান্তিপূর্ণভাবে এ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে পথে নামা উচিত। মধ্য প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ এবং রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেন। পরিস্কার করে জানিয়ে দিলেন, কোনো অবস্থাতেই নিজেদের রাজ্যে এই আইন কার্যকর করবেন না তারা।