ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৪ নভেম্বর ২০২৪,   কার্তিক ৩০ ১৪৩১

‘ইউরিক এসিড’ কেন বাড়ে, বাড়লে কী করণীয়?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৩৭ পিএম, ২ জানুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার

ইউরিক এসিডের ক্ষতিকর প্রভাব

ইউরিক এসিডের ক্ষতিকর প্রভাব

‘ইউরিক এসিড-এর মাত্রা বেড়ে যাওয়া’র সমস্যাটি কমবেশি সবাই জানেন এবং অনেকের এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই বলে খাবার বাছাই নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। তাই আজ এ বিষয়ে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো।

ইউরিক এসিড কি এবং কেন এর মাত্রা বেড়ে যায়? 
আমাদের দেহে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, বাইকার্বনেট বা এলকালাইন অর্থাৎ ইলেকট্রোলাইটস-এর ব্যালেন্স রক্ষায় ইউরিক এসিডের ভূমিকা পালন করে। সবার রক্তে এটি খুব অল্প পরিমাণে থাকে, যা মূলতঃ দেহের ডেড সেল এবং খাদ্যের উপাদান পিউরিন থেকে উৎপন্ন হয়। তবে এটি আমাদের দেহের একটি টক্সিক উপাদান।

ইউরিক এসিড যেভাবে বাড়ে:
আমরা যা খাই তার যতটুকু পুষ্টি উপাদান দেহের প্রয়োজন, শোষণ ও বিপাকের মাধ্যমে সে চাহিদা পূরণের পর বাকিটা দেহ থেকে বর্জ্য হিসাবে মল, মূত্র, ঘাম ও শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ইউরিক এসিডও এমন একটি উপাদান, যা দেহে নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি হলে তা দেহ থেকে অপসারণের মাধ্যমে আমাদের দেহে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখে।

স্বাভাবিকভাবে ইউরিক এসিড পিউরিন সমৃদ্ধ গৃহীত খাদ্য থেকে আমাদের দেহের যকৃতে উৎপন্ন হয়ে রক্তে মিশে যায় এবং রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে কিডনিতে পৌঁছায়। কিডনি একে দেহ থেকে বের করে দেয়।

মূলতঃ আমাদের দেহের অভ্যন্তরে তিন ভাগের দুই ভাগ ইউরিক এসিডই যকৃত বা লিভারে তৈরি হয়। বাকিটা অর্থাৎ এক ভাগ খাবার থেকে গৃহীত হয়। যকৃতে উৎপন্ন বাড়তি ইউরিক এসিড কিডনির কার্যকারিতায় মূত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে অপসারিত হয়। 

কিন্তু মূত্রের মাধ্যমে যা বের হয় এবং যকৃতে যা উৎপন্ন হয়, খাবার থেকে অতিমাত্রায় পিউরিন গৃহীত হলে এর ঘনত্ব বেড়ে বেশি মাত্রায় উৎপন্ন হলে তখন রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়।

ডাক্তার সোনিয়া শরমিন খান

ইউরিক এসিড বাড়লে কী ক্ষতি হয়:
ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অংগ বিশেষ করে, কিডনির উপরে দীর্ঘদিন জমে রেনাল স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। ফলে কিডনি ঠিক মত কাজ করে না এবং মূত্রের মাধ্যমে ইউরিক এসিড ও অন্যান্য বর্জ্য শরীর থেকে বের হতে পারে না। কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয় এবং কিডনি ড্যামেজ হয়। 

এছাড়াও বাড়তি ইউরিক এসিড শরীরের হাড়ের বিভিন্ন জয়েন্টে ক্রিস্টাল-এর মত হয়ে জমে যায়। যাতে করে অনেক রোগীর হাড়ের সন্ধিস্থলে ফুলে যায় এবং খুব ব্যাথা হয়। এই রোগের নামই গাউট বা গেটে বাত। 

এছাড়া, সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ইউরিক এসিডের ভূমিকা থাকায় হাইপ্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতাসহ হার্ট ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।

দেহে ইউরিক এসিড কতটুকু থাকা প্রয়োজন:
সাধারণত ইউরিক এসিড পরিমাণ পূর্ণ বয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ৭ মিলিগ্রাম এবং নারীদের ৬ মিলিগ্রাম থাকা উচিত। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এর মাত্রা জেনে নেয়া উচিত। স্বাভাবিকের চায়ে মাত্রাটা বেড়ে গেলে শীঘ্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ গ্রহণ করতে হবে এবং অবশ্যই খাবার গ্রহণে কিছু বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে।

ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায় কোন খাবার থেকে:
যদি দেহে অতিমাত্রায় পিউরিনযুক্ত প্রাণীজ প্রোটিনের বিশ্লেষণ বেশি হয় এবং বিশেষ করে, লাল মাংস যেমন- গরু, খাসী, ষাড়ের মাংস, মাছের ডিম, কলিজা ইত্যাদি যদি বেশী খাওয়া হয়, তবে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী হয়। এছাড়াও পিউরিন সমৃদ্ধ শাক-সবজি ও বীচি জাতীয় খাবার যেমন- বিভিন্ন ডাল, বীচি, মাশরুম, পালং শাক, সীম, বরবটি, ফলের মধ্যে আম, কলা, সফেদা, খেজুর, কিসমিস, আখ, তাল ইত্যাদি।
 
এছাড়াও অতিরিক্ত চিনি খেলেও ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা ত্বরান্বিত হয়। তাছাড়া যারা ওবেসিটি স্টেজে আছেন, তাদের ক্ষেত্রেও ইউরিক এসিড বাড়ার সম্ভাবনা প্রবল। ক্যান্সারের রোগীদেরও ইউরিক এসিড বেড়ে যেতে পারে। যারা খুব অনিয়মের মধ্যে খাওয়া দাওয়া করেন এবং অনেক বেশি সময় না খেয়ে থাকেন, তাদেরও ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

ইউরিক এসিড বেশি হলে কি কি খাওয়া যাবে? 
সাধারণত প্রাণীজ খাবারের মধ্যে সব ধরনের বড় ও ছোট মাছ, মুরগীর মাংস, ডিম, লো ফ্যাট দুধ ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার এবং শস্যের মধ্যে জটিল কার্বোহাইড্রেট অর্থাৎ লালচাল, লাল গমের আটা, ওটস, সাগু, ভুট্টা, চিড়া ইত্যাদি। শাক-সবজির মধ্যে লাউ, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, আলু, মিষ্টি আলু, পটল, ঝিংগা, চিচিংগা, করলা, কাকরোল, ঢেড়শ, কলার থোড়, মোচা, সবুজ কলমি শাক, লাউ বা কুমড়ো শাক, গাজর, মূলা, বিটরুট, ক্যাপ্সিকাম, বাধাকপি, টমেটো, শসা ইত্যাদি। ফলের মধ্যে সাইট্রাস (টক) যুক্ত ফলগুলো যেমন- কমলা, মাল্টা, লেবু, আমলকি, জাম্বুরা, পেয়ারা, আপেল, নাশপাতি, আঙুর, আমড়া, আনারস, জাম, বেদানা, খেজুর ইত্যাদি খাওয়া যাবে।

লেখকঃ সোনিয়া শরমিন খান
নিউট্রিশনিস্ট ও ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান, সিটি হেলথ সার্ভিসেস লিমিটেড।

এনএস/