ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ হত্যা
চার্জশিট গ্রহণ, পলাতকদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১২:৫৯ পিএম, ৬ জানুয়ারি ২০২০ সোমবার

জয়পুরহাটের ভাদসা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে আজাদ হত্যার ৩ বছর পর সিআইডি পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছেন আদালত।
গতকাল রোববার জয়পুরহাটের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইকবাল বাহার চৌধুরী এই অভিযোগ পত্র আমলে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনাকারী হাতেম আলীসহ পলাতক ৫ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
অভিযুক্তরা হলেন- যুবলীগ নেতা মুন্না পারভেজ, সৈকত হোসেন, আ. হাকিম, সাদ্দাম হোসেন, হাবিব মিয়া, রাজিব হোসেন, শাহিনুর ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল আলীম, নাজিম, তৌহিদ ইসলাম, সোহাগ হোসেন, ভাদসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জয়পুরহাট জেলা পরিষদের সদস্য হাতেম আলী। এদের মধ্যে হাতেম আলীসহ ৫ আসামী পলাতক রয়েছে।
মামলার অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৪ জুন রাত পৌনে ১০টার দিকে সদর উপজেলার ভাদসা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এ কে আজাদ প্রতিবেশী পবিত্র মন্ডলকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন।
পথে বাড়ির অদূরে গোপালপুর বাজারের কাছে ওৎপেতে থাকা আসামি মুন্না পারভেজ ও তার দল আজাদের ওপর হামলা চালায়। তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে এবং গুলি করে আহত অবস্থায় আজাদ কে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এসময় নয়ন মন্ডল নামে আরো একজন প্রতিবেশী গুলিবিদ্ধ হয়।
মামলার সাক্ষীরা আজাদকে উদ্ধার করে পুলিশভ্যানে করে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়।
পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় পপুলার হাসপাতালে নেয় স্বজনরা। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ জুন ভোরে মারা যান আজাদ।
ওই ঘটনায় নিহতের ভাই এনামুল হক কাস্মির বাদী হয়ে ৫ জুন ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ৬-৭ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করেন জয়পুরহাট সদর থানার তৎকালীন পরিদর্শক ফরিদ হোসেন। পরে ২০১৭ সালের এপ্রিলে মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। সিআইডিতে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেন।
সবশেষে ২০১৮ সালের নভেম্বরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান পরিদর্শক জিয়াউর রহমান। তিনি তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষীদের ও স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পান।
আসামি সোহেল রানা ও মনির হোসেন আগেই পুলিশের সাঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। নিহত দুই আসামিকে মামলার অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
নিহত চেয়ারম্যানের ছোট ভাই এবং মামলার বাদী এনামুল হক কাস্মির জানান, ‘দীর্ঘদিন পরে হলেও মামলার মূল আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল এবং তা গ্রহণ করায় কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি।’
মা সাহারা বেগম জানান, তার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, অথচ হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাদের গ্রেফতার করা হয়নি। এই মামলার দ্রুত নিস্পত্তি করে আসামিদের শাস্তি চান তিনি।
নিহতের ছোট ভাই ভাদসা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সরোয়ার হোসেন স্বাধীন জানান, ‘তার ভাই হত্যার পরিকল্পনাকারী এখনো আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সভাপতি এবং জেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে বহাল রয়েছেন। বাকি ৪ জন পলাতক রয়েছেন। যেহেতু তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ করা হয়েছে, এখন তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচার কাজ শুরু করা হোক।’
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাড. নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, ‘চার্জশিট গ্রহণ করার ফলে পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে অল্প সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শুরু করা সম্ভব।’
এআই/