ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

গিনেজ রেকর্ডধারী কে এই সুদর্শন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৩২ পিএম, ৭ জানুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার

চট্টগ্রামের একজন সন্তান সারা বিশ্বে তবলা বাজিয়ে আলোড়ন তুলেছেন। ঝুলিতে একটি, দুইটি নয়, চার চারটি গিনেজ রেকর্ড! তিনি পণ্ডিত সুদর্শন দাশ। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি, যার ঝুলিতে এতগুলো গিনেজ রেকর্ড।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক পণ্ডিত সুদর্শন দাশ ২০১৬ সালে তবলা ম্যারাথনে একটানা ৫৫৭ ঘণ্টা ১১ মিনিট, ২০১৭ সালে ঢোল ম্যারাথনে ২৭ ঘণ্টা, ২০১৮ সালে ড্রামরোল ম্যারাথনে ১৪ ঘণ্টা ও ২০১৯ সালে ড্রামসেট ম্যারাথনে ১৪০ ঘণ্টা ৫ মিনিট বাঁজিয়ে ৪টি বাদ্যযন্ত্র সঙ্গীতে গিনেজ ওয়ার্ল্ডে রেকর্ড গড়েন।

চট্টগ্রামের আলাউদ্দিন ললিতকলা একাডেমিতে মাত্র চার বছর বয়সে তবলায় হাতেখড়ি নেন সুদর্শন। ১৯৯০ সালে ফুলকুঁড়ির প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন।

সুদর্শন যুক্তরাজ্যে আইন বিষয়ে নেন উচ্চশিক্ষা। আইন পড়ার উদ্দেশ্যে লন্ডন পাড়ি জমালেও তবলার নেশা তাকে ছাড়েনি। ২০০৪ সালে নিউহ্যাম এলাকায় ‘তবলা অ্যান্ড ঢোল একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করেন সুদর্শন।

তবে এ পথটি এত মসৃণ ছিল না। সইতে হয়েছে নানা কষ্ট। করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়। ফলে ধরা দিয়েছে সাফল্য।

সংবাদমাধ্যমকে সুদর্শন জানান, তার প্রথম গুরুজি শ্যামল দত্ত। তারপর বিজন চৌধুরী। পরিবারের সিদ্ধান্তে শান্তিনিকেতন যান ১৯৯২ সালে। ১৯৯৮ সালে তবলা বিশারদ উপাধি পান। ছয় বছরের ফুল গ্রেড শেষ করে তাকে পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণ করতে হয়েছে যে, তিনি তবলা বিষয়ে সব জানেন। এটা তবলা বিষয়ে পাণ্ডিত্যের সনদ। তখন তার বয়স ২৪। পণ্ডিত উপাধি পেতে সাধারণত ৩০ বছর লাগে। তখনও তা হয়নি বলেই ওরা তাকে তবলা বিশারদ উপাধি দিল। একই সময়ে তিনি চট্টগ্রামে আইন বিষয়ে পড়েন। ১৯৯৯ এ স্নাতক পাশ করে পরিবারের ইচ্ছায় লন্ডনে চলে যান ব্যারিস্টারি পড়তে। সেখানে গিয়ে দেখেন, মিউজিকে তবলার খুব চাহিদা। লন্ডনের নেহেরু সেন্টারে শিক্ষকতা দিয়ে তার যাত্রা শুরু।

সংবাদমাধ্যমকে তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালে পাশ করলাম ব্যারিস্টারি। ২০১২ সালে আমি চারটি আবেদন করি গিনেজ বরাবর। তবলা, ঢোল, ড্রাম রোল ও ড্রাম সেট। তারা আমাকে ডেমো পাঠাতে বলে। হ্যান্ড ম্যারাথন তবলা বাজানোর ডেমো। সঙ্গে একটা লিখিত সম্মতিপত্র। যেখানে এই মর্মে প্রত্যয়ন করলাম, রেকর্ড করতে গিয়ে আমার শারীরিক কোনও ক্ষতি হলে তার জন্য আমি দায়ী থাকব। একটু ভয় অনুভূত হলো। তবু সাহস করে ১৫ দিনের বাজানোর একটা ডেমো পাঠালাম। এটা দেখেই গিনেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে বাছাই করে। সারা পৃথিবী থেকে ১১ জন আবেদন করেছিল ওই ডেমো কনটেস্টে। তার মধ্যে আমি নির্বাচিত হই।

শিল্পী সুদর্শন দাশ বলেন, আমি বাংলাদেশ ও চট্টগ্রামের সন্তান। তাই দেশের মানুষের সামনে তবলা নিয়ে উপস্থিত হতে পারলে খুব আনন্দ লাগে।

এদিকে, গিনেজ রেকর্ডধারী পণ্ডিত সুদর্শন দাশ তার রেকর্ডকৃত বাদ্যযন্ত্রের একক পরিবেশনা আগামীকাল বুধবার সিলেটের সংস্কৃতিপ্রেমী দর্শকদের সামনে তুলে ধরবেন। রিকাবীবাজার কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে অনুষ্ঠান।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেট’র সভাপতি মিশফাক আহমেদ চৌধুরী মিশু ও সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত এক বিবৃতিতে পণ্ডিত সুদর্শন দাশ’র অনুষ্ঠান সফলে সবার আন্তরিক সহযোগিতা ও উপস্থিতি কামনা করেছেন।

এর আগে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেট’র আয়োজনে সিলেটে প্রথমবারের মতো গিনেজ রেকর্ডধারী পণ্ডিত সুদর্শন দাশ’র দু’দিন ব্যাপী তবলা প্রশিক্ষণ কর্মশালা গত রোববার শুরু হয়ে শেষ হয় গতকাল সোমবার।

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, সিলেট’র মহড়া কক্ষে অনুষ্ঠিত এ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেন প্রায় ২৫ জন তবলা শিল্পী ও শিক্ষার্থী।

একে//