ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

সোনালী ব্যাংক: ভুয়া সনদে নিয়োগপ্রাপ্ত ৩২জন-ই এজিএম

অখিল পোদ্দার

প্রকাশিত : ০৯:৩২ পিএম, ৮ জানুয়ারি ২০২০ বুধবার | আপডেট: ০৯:৩৮ পিএম, ৮ জানুয়ারি ২০২০ বুধবার

আবারও আলোচনায় সোনালী ব্যাংক। তবে তা ঋণ জালিয়াতিতে নয়, ঘটনা এবার ভুয়া সার্টিফিকেটের। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকটির নিয়োগ বোর্ডে ভুয়া সনদ এবং ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ দেখিয়ে কম্পিউটার অপারেটরের চাকরি নেওয়া ৩২ জন এখন এজিএম (সহকারী মহাব্যস্থাপক)। চাকুরি নেয়া ৩২ জন কম্পিউটার অপারেটর এজিএম হিসেবে পদোন্নাতি পেয়েছেন। এদের মধ্যে ২২ জন ২০১৮ সালে এবং ১০ জন ২০১৯ সালে পদোন্নতি বাগিয়ে নিয়েছেন। এ ঘটনা সামনে আসার পর বিষয়টি নিয়ে তদন্তে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দারা। একজন সহকারি পরিচালকের নেতৃত্বে অনুসন্ধান পরিচালনা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
 
নথি সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে ৫০ জন সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর এবং ১৫০ জন কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দেয় সোনালী ব্যাংক। ঐ নিয়োগের পরীক্ষাটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) পরিচালনা করে। 

অভিয়োগ রয়েছে, ব্যাংকটির তৎকালীন কর্মচারী সংসদ’র (সিবিএ) নেতা এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তারেক রহমানের অপকর্মের আতুরঘর খ্যাত ‘হাওয়া ভবন’র কারসাজিতে বুয়েট পরীক্ষা বাতিল করে। পরে অনিয়মের মাধ্যমে জাল ও ভুয়া সনদ দিয়ে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হয়। তখন এসব জাল সনদধারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। 

ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, কম্পিউটার অপারেটর পদটি ব্লাক পোস্ট। তবে ২০০৮ সালে অভিযুক্ত এসব কর্মকর্তারা পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের উৎকোচের বিনিময়ে অর্গানোগ্রাম (প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান চাকরি বিধিমালা এবং পদ-কাঠামো) পরিবর্তন করেন। তখন সিনিয়র কম্পিউটার পদকে এ্যাসিসটেন্ট অপারেশন ম্যানেজার হিসেবে অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে ২০১২ সালে কোন রকম যোগ্যতা না থাকার পরও তাদেরকে অপারেশন ম্যানেজার পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। 

এদিকে ২০১৫ সালে পরিচালনা পর্ষদ অনিয়মের মাধ্যমে পুনরায় অর্গানোগ্রাম পাস করে সেই কম্পিউটার অপারেটরদের অপারেশন ম্যানেজার থেকে মূলধারার ব্যাংকিংয়ে যুক্ত করে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার পদে অনুমোদন দেয়। সেই কম্পিউটার অপারেটরদের মধ্য থেকে একাধিকবার পদ পরিবর্তন ও পদোন্নতি পেয়ে ২০১৮ সালে ২২ জন এবং ২০১৯ সালে ১০ জন এজিএম হয়েছেন। যাদের কম্পিউটার বিষয়ক সনদ ও অভিজ্ঞতার সনদ ভুয়া। ব্যাংকিং সম্বন্ধে নেই পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানও। এ ব্যাপারে একাধিক জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। 

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক’র (এমডি) কাছে পত্র প্রেরণ করে। ২০১৮ সালে ভুয়া সনদধারী পদোন্নতি পাওয়া ২২ জন এজিএমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। 

পরবর্তীতে অজ্ঞাত কারণে দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তাকে তদন্তের মাঝখানে পরিবর্তন করে কমিশনের উপ-সহকারি পরিচালক নূরে আলম সিদ্দিকিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব পেয়ে তিনি গেল বছরের ১৮ এপ্রিল অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে অভিযুক্ত ২২ জনকে পুনরায় তলব করেন। এ ঘটনায় অভিযুক্তরা দুদকে হাজির হয়ে তাদের নিজ নিজ বক্তব্য প্রদান করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দুদক সূত্রে জানা যায়। 

দুদকের অনুসন্ধান চলাকালীন সময়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ভুয়া সনদধারী আরও ১০ জনকে ২০১৯ সনে এজিএম পদে পদোন্নতি দেয়। পরর্তীতে দুদক উক্ত ২২ জনের জবানবন্দির মাধ্যমে আরও অনেকের বিরুদ্ধে জাল সনদের সত্যতা পায়। যা বর্তমানে দুদকের তদন্তাধীন। ইতোমধ্যে অভিযুক্তরা সবাই সিন্ডিকেট করে দুদকের তদন্ত ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চেষ্টায় রয়েছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

জানা যায়, তারা বহুদিন ধরে অনৈতিকভাবে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রক্রিয়া প্রতিরোধের চেষ্টা করে আসছে। একই সঙ্গে তাদের নিয়োগ কর্তারাও বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ফলে ব্যাংকের সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ বিরাজ করছে। দুদক ইতোপূর্বে সোনালী ব্যাংকের আওয়ামীপন্থী সিবিএ সভাপতি কামাল উদ্দিন এর জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে ১ বছর ৬ মাসের কারাদন্ড দিয়েছে। অথচ দেশের সব চাইতে বড় রাষ্টয়ত্ব ব্যাংকে ৩২ জন ভুয়া সার্টিফিকেটধারীকে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। যে কারণে দক্ষ কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে অজানা কারণে তদন্ত রিপোর্ট করতে গড়িমশি করছে দুদক। সোনালী ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আশা দুদক উক্ত বিষয়ের দ্রুত রিপোর্ট প্রদান করে বিষয়টির সুরাহা করবে শিগশিগরই।

এবিষয়ে কথা বলতে সোনালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (এমডি) আতাউর রহমান প্রধানের সঙ্গে কথা বলতে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এমএস/এসি