ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

জাতির পিতার জন্ম না হলে দেশ স্বাধীন হতো না: প্রধানমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:২৪ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার | আপডেট: ০৬:২৫ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার

বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: একুশে টেলিভিশন

বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: একুশে টেলিভিশন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির পিতার জন্ম যদি না হতো তাহলে এদেশ স্বাধীন হতো না। আমরা বাঙ্গালী জাতি হিসেবে মর্যাদা পেতাম না। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণেই বঙ্গবন্ধু নির্দেশ দিয়েছিলেন ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।’

তিনি বলেন, ‘২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙ্গালীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে জাতির পিতা তার সর্বশেষ নির্দেশনা ওয়ারল্যাসের মাধ্যমে তৎকালীন ইপিআরকে দিয়ে যান। তার নির্দেশ বাঙ্গালী অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল বলে আমাদের স্বাধীনতা এসেছিল।’   

শুক্রবার (১০ মার্চ) বিকেল ৫টায় রাজধানীর জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় তার পাশে ছোটবোন শেখ রেহানা ও পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় দাঁড়িয়েছিলেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। বাঙ্গালী জাতি তার ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছিল। যারা জাতির জন্য আত্মহুতি দিয়েছেন তাদের এবং মিত্র বাহিনীর প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়। মামলা হয় রাষ্ট্রদ্রোহের। ইয়াহিয়া খান তাঁর ফাঁসির আদেশও দিয়েছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করে। আন্তর্জাতিক চাপে পাকিস্তান জাতির পিতাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। যারা আমাদের সাহায্য-সহযোগীতা করেছিল, সমর্থন দিয়েছিল, স্বীকৃতি দিয়েছিল তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘জাতির পিতা ৮ জানুয়ারি মুক্তি পান। সেখান থেকে তিনি লন্ডনে চলে যান। ফেরার পথে দিল্লিতে থামেন। সেখানে তিনি ইন্দ্রিরা গান্ধি ও ভারতের সকল মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি ১০ জানুয়ারি ঢাকায় আসেন। তিনি কিন্তু আমাদের কথা ভাবেননি ভেবেছিলেন বাংলার মানুষের কথা।’

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় এয়ারপোর্টে আসতে পারেননি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সেদিন এয়ারপোর্টে আসতে পারিনি। রেডিওতে সেই অনুষ্ঠান শুনেছিলাম।’ বাংলাদেশ স্বংসম্পূর্ণ হবে এবং বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। 

১৬ ডিসেম্বরের সময় পরিবারের সকলে বন্দি ছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৭ ডিসেম্বর সকালে ভারতের সামরিক বাহিনীর মেজর অশকের নেতৃত্বে আমরা মুক্তি লাভ করি। আমরা দেখেছি মানুষের চোখে অশ্রু আর মুখে বিজয়ের হাসি। তারা এ যুদ্ধে প্রিয়জনকে হারিয়েছে। তারপরও স্বাধীনতা উদযাপন করছেন। সবাই অপেক্ষায় ছিল কখন তাদের মহান নেতা আসবেন।’

জাতির পিতা নিজেকে দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের যে কারাগারে রাখা হয় সেখানে গরমের সময় প্রচন্ড গরম আর শীতের সময় থাকত প্রচন্ড শীত। তবে তিনি কখনও দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ ছিলেন না। কারণ তিনি জানতেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। বাংলাদেশের জনগন জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিয়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিল। আমাদের দুর্ভাগ্য পাকিস্তানী বাহিনী যাকে হত্যা করেনি তাকেই মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে হত্যা করা হয়। শুধু তাই নয়। তার সকল কর্মকাণ্ড মুছে ফেলতে চেষ্টা করা হয়েছিল। তার ভাষণের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।’ 

একটা অন্ধাকার জগত ছিল সেখান থেকে দেশ আলোর পথে এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞতা জানাই দেশের জনগনের প্রতি, আমার দল আওয়ামী লীগের প্রতি। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সকল স্তরের মানুষের প্রতি, যারা আজকে এ দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন। আমরা ১৭ মার্চ জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব। সেই উদযাপনের জন্য এ অনুষ্ঠান। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী বাস্তবায়ন কমিটিসহ যারা এই আয়োজন করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।’ 

পরে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ক্ষণগণনার (কাউন্টডাউন) লোগো উন্মোচন, ঘড়ি চালুর মধ্যদিয়ে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। 

একই সময়ে সারাদেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের ২৮টি জায়গা, বিভাগীয় শহর, ৫৩ জেলা, দুই উপজেলা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীতে মোট ৮৩টি স্থানে একসঙ্গে ক্ষণগণনার ঘড়ি চালু করা হয়। 

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম গ্রহণের শততম বছর পূর্ণ হবে। এবছরের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপন করবে বাংলাদেশ। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। দীর্ঘ ৯ মাস পাকিস্তানে কারাবাস থেকে মুক্ত হয়ে এই দিনে দেশে ফিরে আসেন তিনি। দিনটিকে উপলক্ষ করে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনার উদ্বোধন করা হলো।

এমএস/এসি