ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

কুপ্রস্তাবের পর ছাত্রীর মেমোরি কার্ড হাতিয়ে নিলেন শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কুবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ১০:১৩ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:১৭ পিএম, ১৬ জানুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক- ফাইল ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক- ফাইল ছবি

ছাত্রীকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিয়েছেন। প্রস্তাবে রাজি হলে কোর্স নিয়ে তাকে ভাবতে হবে না এমন আশ্বাসও দিয়েছেন। এসবে রাজি না হওয়ায় ছাত্রীর মুঠোফোনের সিম ও মেমোরি কার্ড হাতিয়ে নিয়েছেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সভাপতি আলী রেজওয়ান তালুকদারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেছেন বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সের এক শিক্ষার্থী। 

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও ইংরেজি বিভাগের প্রোগ্রাম পরিচালকের নিকট ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগ দাখিল করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
 
অভিযোগ পত্রের সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি একটি কোর্সের পরীক্ষা দিতে বিভাগে আসেন। পরীক্ষা চলাকালীন সময় সকল শিক্ষর্থীকে তাদের মুঠোফোন সামনে জমা রাখতে বলা হয়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীও নিজের মুঠোফোন বন্ধ করে প্রসাধনপেটিকা’য় (ভ্যানিটি ব্যাগ) করে জমা রাখেন। পরীক্ষা শেষে ব্যাগ থেকে মুঠোফোন বের করে দেখেন সিম বদলে ফেলা হয়েছে। মেমোরি কার্ড সরিয়ে লাগানো হয়েছে নষ্ট মেমোরি কার্ড। এছাড়া মুঠোফোনে রক্ষিত সকল তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে। ঐ মুঠোফোনে অভিযুক্তের অনৈতিক প্রস্তাবের প্রমান ছিল বলেও দাবি করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। 

অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষক ঐ ছাত্রীকে সরাসরি অনৈতিক প্রস্তাব দিতেন। বিভিন্ন সময় তাকে নিজ অফিস কক্ষে ডেকে নিতেন, শহরে নিজের বাসায়ও নেওয়ার জন্য চেষ্টা করেছেন রেজওয়ান তালুকদার।

অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি হলে কোর্সের ফলাফল ভালো করে দেওয়া হবে বলেও অন্যায় আশ্বাস দেন রেজওয়ান বলে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়। অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়া প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে তার মেমোরি কার্ড হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ঐ ছাত্রী। 

ঐ ছাত্রী বলেন, ‘বিভাগের সভাপতি প্রথমে আমাকে শ্রেণি প্রতিনিধি (সিআর) হিসেবে নির্বাচিত করেন। বিভিন্ন সময় আমাকে তার রুমে ও শহরের বাসায় ডাকতেন। তাকে এড়িয়ে চললেও পরবর্তীতে আমাকে প্রলোভিত করার জন্য ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটার্স অ্যাপ’এ ফোন করে ব্যক্তিগত কথা বলতেন রেজওয়ান তালুকদার।’

অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগের নিয়মিত ও সান্ধ্যকালীন কোর্সের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী সাংবাদিকদের কাছে যৌন হয়রানিসহ নানা অভিযোগ করেন। এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘নতুন ব্যাচ ভর্তি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি (অভিযুক্ত শিক্ষক) সুন্দরী ছাত্রীকে শ্রেণি প্রতিনিধি হিসেবে মনোনীত করেন এবং কৌশলে সখ্যতা গড়ে তোলেন। ছাত্রীদের প্রলোভন দেখান। অন্যদিকে সান্ধ্যকালীন কোর্সের সুন্দরী ও বিবাহিত শিক্ষার্থীরাই তার নজরে পড়েন।’ আলী রেজওয়ান তালুকদার এর আগে এক ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলে তার সঙ্গে রাত্রিযাপনও করেছেন বলে জানান বিভাগের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী। 

নিজের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মোহাম্মদ আলী রেজওয়ান তালুকদার। তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অনিত অভিযোগ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তদন্ত হলে বিষয়টি বোঝা যাবে।’

অভিযোগ পত্র প্রাপ্তি কথা নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘উপাচার্যের সাথে আমি কথা বলেছি। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি করেছেন রেজওয়ান তালুকদার। ছাত্রীদের কৌশলে শিক্ষক ডরমেটরিতে (শিক্ষকদের আবাসিক ভবন) নিয়ে যান। পরিক্ষার খাতা ২য় পরীক্ষকের কাছে না পাঠিয়ে নিজেই নিয়মবর্হিভূতভাবে মূল্যায়ন করেছেন। ঐ ঘটনায় শাস্তিও প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

এমএস/এসি