ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

নড়াইলে দু’দিনব্যাপী অমল সেন স্মরণ মেলা শুরু 

নড়াইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৭:৫৬ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার

তে-ভাগা আন্দোলনের অগ্রপথিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কমরেড অমল সেনের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নড়াইলের সীমান্তবর্তী বাঁকড়ীতে দু’দিনব্যাপী অমল সেন স্মরণ মেলা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং অমল সেন স্মৃতিরক্ষা কমিটির উদ্যোগে শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে অমল সেনের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদ খান মেনন।  

এছাড়া শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমেেরড ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড আনিসুর রহমান মল্লিক, কমরেড নজরুল ইসলাম, সাবেক এমপি কমরেড শেখ হাফিজুর রহমানসহ দলের কেন্দ্রীয়, স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা। দু’দিনব্যাপী স্মরণমেলায় অমল সেনের জীবনাদর্শ বিষয়ে আলোচনা, গণসঙ্গীত, নাটক, জীবনসংগ্রাম ভিত্তিক চলচিত্র প্রদশর্নী এবং গ্রামীণমেলা থাকছে।

কমরেড অমল সেন ২০০৩ সালের ১৭ জানুয়ারি বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার কর্মস্থল যশোরের বাঘারপাড়ার বাঁকড়ী বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে তাকে সমাধিস্থ করা হয়। অমল সেন ১৯১৪ সালের ১৯ জুলাই নড়াইলের আউড়িয়া গ্রামে মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। আফরা গ্রামের (নড়াইল সদর) জমিদার বংশের সন্তান হয়েও খুব সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন তিনি। শোষিত-নিপীড়িত কৃষক সমাজের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট ছিলেন। কৃষকদের অধিকার আদায়ে তে-ভাগা আন্দোলনে অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করেন তিনি। 

নড়াইলের আব্দুল হাই ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মলয় নন্দী জানান, নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন তৎকালীন বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দেশপ্রেমিক সংগঠন ‘অনুশীলন’ গ্রুপে যোগ দেন অমল সেন। খুলনার বিএল কলেজে গণিতে পড়ার সময় মার্কসবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন এবং নড়াইলে ফিরে এসে কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলেন। বাবার জমিদারী প্রথা কখনো আকৃষ্ট করতে পারেনি অমল সেনকে। তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন-মানবজীবনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি হতে পারে মানব কল্যাণে আত্মনিয়োগ করা। শ্রমজীবী মানুষের শোষণ মুক্তির লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করা।

বাঁকড়ী গ্রামের বিভিন্ন পেশার মানুষ জানান, অমল স্যার শিক্ষকতা করেছেন বাঁকড়ী বহুমুখি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। স্কুলেই বেশির ভাগ সময় কাটাতেন তিনি। অবসরে একটি গাভী লালন-পালন করতেন। অমল সেন সব সময় কৃষকের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামসহ শোষিত-বঞ্চিত মানুষের পক্ষে কাজ করে গেছেন।

অ্যাডভোকেট কমরেড নজরুল ইসলাম জানান, আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় পাকিস্তান শাসনামলে ১৯ বছর অমল সেনকে কারাগারে কাটাতে হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। এদিকে, কৃষকের কষ্টার্জিত ফসলের তিন ভাগের দুই ভাগ বর্গাচাষির, আর একভাগ জমি মালিকের-এ দাবিতে কৃষকদের সংগঠিত করে আন্দোলন গড়ে তোলেন অমল সেন। এক সময় আন্দোলন সফল হলো। দেশের বর্গাচাষিরা এখনও সেই সুবিধা (তে-ভাগা) পাচ্ছেন। এটিই  ‘তে-ভাগা আন্দোলন’ নামে পরিচিত।

আরকে//