ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পাকিস্তানী জেল থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও ইন্দিরা গান্ধী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৪২ এএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২০ রবিবার | আপডেট: ০৩:৪৩ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২০ রবিবার

ব্যাপারটা সহজ ছিলো না। পুর্ব পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তান ধরাশায়ী, শেষ দিকে ১৩ দিনের ভারত-পাকিস্তান রণ, ৯৩ হাজার পাকিস্তানী সৈন্য বন্দী বাংলাদেশে। গরীব দেশের প্রতিটা ইঞ্চি ভূমি বিধ্বস্ত, একমাত্র ভরসা বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী জেলে ফাসীর আদেশে দণ্ডিত।

কি করবে বাংলাদেশ, কি করবেন ইন্দিরা গান্ধী, বাঙ্গালীর প্রিয় দর্শিনী ইন্দিরাজী?

একথা সত্য, যে সিমলা চুক্তির অধীনে ভারতে গ্রেফতাররত অবস্থায় ৯৩ হাজার সৈন্যকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াটা ছিলো জুলফিকার আলি ভুট্রো তথা আইএসআই (ISI) -এর অন্যতম সফলতা, চুক্তিতে ইন্দিরার সিদ্ধান্ত এমনকি ভারতের অনেক মহলকে অবাক করেছে। কি এমন ঘটেছিলো যার কারনে ইন্দিরা গান্ধী এত সৈন্যের বিনিময়ে কাশ্মীর ইস্যুকে সমাধান না করে এক সিদ্ধান্তে এক কলমে রাজী হলেন যুদ্ধবন্দী বিনিময়ে? পর্দার আড়ালে কি ঘটেছিলো? কারা ঘটিয়েছিলো, কেনো ঘটিয়েছিলো? এই রহস্য জানার সময় এসেছে।

১৬ই ডিসেম্বর ছিলো সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ ও ভারতের সামরিক ও কুটনীতির ইতিহাসে অন্যতম মাইলফলক। এক জটিল ভু-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, বিশ্ব শাসন ও অর্থনৈতিক দেনা-পাওনার চাপে পিষ্ট প্রায় ১০০ কোটি মানুষের এই ভুখন্ডে তখন বিভিন্ন দেশের সামরিক নেতাদের প্রক্সি যুদ্ধের আড়ালে চলেছে সব হিসেব বুঝে নেবার কৌশল। কিন্তু বাংলার মানুষ এত কিছু চায় নি, তারা চেয়েছিলো স্বাধীনতা, তারা ফেরত চেয়েছিলো স্বাধীনতার স্বপ্নপুরুষ বঙ্গবন্ধুকে। অন্যদিকে বিজয়ের সেইক্ষনে ইন্দিরা গান্ধী ভাবছিলেন অন্যকিছু, অন্য কোনো নিরব যুদ্ধে মগ্ন ইন্দিরা নজর রাখছিলেন বঙ্গবন্ধুর উপর, কেননা বাঙালী জাতির পিতার মুক্তি ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা অপুর্ন থেকে যাবে। ভারতে অবস্থান নেয়া প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশী উদ্বাস্তুর খরচে দরিদ্র ভারতের তখন ত্রাহি অবস্থা, সাথে নকশালবাড়ির আন্দোলনে পশ্চিমবঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছে আইন- শৃঙ্খলা। এত বিপুল সংখ্যক যুদ্ধবন্দীর জন্য কোনো বাজেটই ছিলোনা ভারত সরকারের। তবুও পাকিস্তানী বন্দিরা যাতে জেনেভা কনভেশনের চেয়েও ভালো থাকে সেজন্য ভারত সরকার চেষ্টার ত্রুটি করেনি। এর মধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছিলেন যে কোনো মুল্যে শেখ মুজিবের মুক্তি। ‘যেকোনো মুল্যে’ কথাটি তিনি তাঁর “কিচেন কেবিনেট’এর অন্যতম ‘র (RAW)’-এর প্রধান রাম নাথ কাও-কে পরিস্কার করেই বলেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ততদিনে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নির্মমতার সাথে পরিচিত হয়েছেন। তিনি আশঙ্কা করছিলেন পাকিস্তানী সেনাবাহিনী শেখ মুজিবকে মৃত্যুদন্ডের রায় দিয়েছে এবং সব ধরনের কনভেশনের বাইরে গিয়ে তাঁর সেলের সামনে একটি সাড়ে ৬ফুট লম্বা কবর খুঁড়েছে আর সেই কবরের ওপরে ঝুলিয়ে দিয়েছে ফাসির দড়ি, যা বাঙ্গালী জাতির পিতার চোখের সমানেই ছিলো। তারা বোঝাতে চেয়েছে ফাসীর ব্যাপারে আইএসআই দৃঢ় এবং যেকোনো সময় এটি ঘটিয়ে দিতে পারে।

বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ যে পিতা ছাড়া এতিম সন্তান এটা বুঝতে খুব একটা জ্ঞানের দরকার নেই। এই বিপদ্গ্রস্থ দেশটির শেষ আশ্রয় বঙ্গবন্ধু। শেখ মুজিবের ফাসী হলে তা হবে ভারতের জন্য চুরান্ত পরাজয়, ভারত যে হৃদয় দিয়ে বাংলাদেশ ও তাঁর অত্যাচারিত জনগনকে সহযোগিতা করেছিলো তার সবকিছুই ভেঙ্গে যাবে যদি ফাসী কার্য্যকর হয়, বাংলাদেশ হয়ে পড়বে বিশ্ব হায়েনাদের বিচরনস্থল। ভারত প্রতিজ্ঞা করেছিলো শেখ মুজিবকে বাচিয়ে রাখতে হবে যে কোনো মুল্যে, বাংলাদেশের স্বার্থে, তাঁর পরিবারের স্বার্থে এবং সত্য ও ন্যায়ের স্বার্থে।

অন্যদিকে পাকিস্তান মেনে নিতে পারেনি এই পরাজয়। দ্বি-জাতি তত্বকে ভুল প্রমান করে বাংলাদেশের অভ্যুদয় শুধু তাঁদের জাতির পিতা জিন্নাহর মতবাদকে ভুল প্রমানিতই করেনি, তাঁদের অহমে আঘাত করেছে বাংলাদেশ। শুধু কি তাই, পাকিস্তানের চিরবৈরী দেশ ভারতের সহায়তার কারনে তারা এই যুদ্ধে বাংলাদেশের কাছে তাদের দেশের আক্ষরিক অর্থে অর্ধেক হারিয়ে ফেলেছে। পাকিস্তানের দাম্ভিক সেনাবাহিনী তার ইতিহাসে সবচেয়ে লজ্জাজনক পরাজয়ের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত, চরম বিতর্কিত হয়ে চাপ সামলাতে না পেরে জেনারেল ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ওয়াশিংটন থেকে ডেকে পাঠান জুলফিকার আলি ভুট্রোকে। ভুট্রো তখন জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত। ইয়াহিয়া খান এক ঘোষণা বলে নতুন সিএমএলএ (CMLA) করে দ্বায়িত্ব বুঝে নিতে বলেন ভুট্রোকে। ভুট্রো ক্ষমতার গন্ধ পেয়ে পাকিস্তানের উদ্দেশে দ্রুত রওনা দেন। তবে আসার আগে ফোন করেন পাকিস্তানের অভিভাবক আমেরিকার রাস্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনকে।

ওয়াশিংটন থেকে ভুট্রোর ফ্লাইট রাওয়ালপিন্ডি যাবার পথে লন্ডনের হিথরোতে রিফুয়েলিং করতে বিরতি নেবে, গোপন সূত্রে এই খবরটি জেনে ইন্দিরা আর দেরী করেননি। তিনি সাউথ ব্লকে তাঁর ‘ওয়ার কেবিনেটে’র জরুরী মিটিং ডাকেন। যতদ্রুত সম্ভব, যেভাবে সম্ভব, পাকিস্তানে পৌছার আগে কেবল একটা মাত্র তথ্য জানতে চান ভুট্রোর কাছ থেকে, সেটা হলো, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আদালতে শেখ মুজিবের ফাসির দন্ডের সাথে ভুট্রো একমত প্রকাশ করেন কিনা? ‘ওয়ার কেবিনেটে’র জরুরী মিটিং-এ উপস্থিত ছিলেন এক্সটারনার এফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের চিফ দুর্গা প্রসাদ ধর, ‘র (RAW)’-এর প্রধান রাম নাথ কাও, প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ সহকারী পি এন হাকসার এবং বৈদেশিক সচিব টি এন কাউল। ঘটনাক্রমে ১৯৭১-এর ১৬ ই ডিসেম্বর ও তাঁর আগের সময়টুকুতে তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানের সর্বোচ্চ সরকারী কর্মচারী হিসেবে ঢাকায় কর্মরত ছিলেন প্রধান সচিব মুজাফফর হুসেইন, তিনি তখন শ্রীমতি গান্ধীর নির্দেশে দিল্লিতে ভিআইপি যুদ্ধবন্দী হিসেবে দুর্গা প্রসাদ ধরের সরকারী বাসভবনে অবস্থান করছিলেন। মুজাফফর হুসেইনের স্ত্রী লায়লা লন্ডন সফরকালে সেখানে আটকা পড়ে যান এবং ৩রা ডিসেম্বরে দু’দেশ যুদ্ধে লিপ্ত হওয়াতে দেশে ফিরতে পারছিলেন না । অবশ্য স্বামী-স্ত্রী দুইজনে দুই ভিন্ন দেশে থাকলেও তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষিত হচ্ছিলো। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সমর্থন ও সহযোগিতার কারনে বাংলাদেশের ‘ফ্রেন্ড অফ লিবারেশন ওয়ার’ পদক প্রাপ্ত শশাঙ্ক ব্যানার্জি তখন লন্ডনে ডিপ্লোমেট হিসেবে কর্মরত। এই শশাঙ্ক ব্যনার্জিকেই দায়িত্ব দেয়া হয় দিল্লী ও ভুট্রোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের। শশাঙ্ক ব্যানার্জি এদিকে মুজাফফর হুসেইন ও লায়লা’র মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ইতিমধ্যে যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা আবার এটাও জানতেন, লায়লা ও ভুট্রোর মধ্যে দীর্ঘদিন আগে ঘনিষ্ঠ ও প্রেমের সম্পর্ক ছিলো, এবং একজন আরেকজনের প্রতি তাদের অনুভুতি তারা আজো বাঁচিয়ে রেখেছেন। এত বড় সুযোগ ইন্দিরা হাতছাড়া করতে চাইলেন না। লায়লার স্বামীকে ছাড়িয়ে নিতে লায়লাকে এই একবার মাত্র কূটনৈতিক মিটিং-এ ভুট্রোর সাথে বসিয়ে দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সব চেষ্টা করলেন। শশাঙ্ক ব্যানার্জি ও ‘র’-এর প্রধান রাম নাথ কাও দুজনে উর্দু কবিতার ভক্ত ছিলেন। লন্ডনে বিভিন্ন কাজে তিনি ‘র (RAW)’-এর প্রধানের একদম কাছে চলে আসেন। শশাঙ্ক ব্যানার্জি হয়ে পড়েন সবদিক থেকে এই কাজের অন্যতম বিশ্বস্ত ও যোগ্য ডিপ্লোমেট। ভুট্রোর লন্ডনে আসার দুই দিন আগে শশাঙ্ক ব্যানার্জি ‘গো এহেড’ পান এক্সটারনার এফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের চিফ দুর্গা প্রসাদ ধর (ডিপি ধর)-এর কাছ থেকে। ডিপি ধর তাঁকে লায়লার সাথে কথা বলতে বলেন এবং বলেন, লায়লা যেন ভুট্রোর সাথে কথা বলে পুরনো সম্পর্কের জের টেনে অনুরোধ করে তার স্বামীকে ছাড়িয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করতে। দিল্লী নিশ্চিত ছিলো ভুট্রো লায়লার অনুরোধ ফেলতে পারবেন না। আর পাকিস্তানের নবনিযুক্ত সিএমএলএ (CMLA) হিসেবে ভুট্রো দিল্লীর কাছে এই অনুরোধ করতেই পারেন। শশাঙ্ক ব্যানার্জিও তাঁদের দু’জনের গোপন সম্পর্কের কথা জানতেন, কিন্তু সেদিকে তাঁর আগ্রহ ছিলো না, দিল্লী শুধু জানতে চাচ্ছে একটাই ব্যাপার, শেখ মুজিবুরের ফাসির রায়ে ভুট্রো কি করবেন? শশাঙ্ক ব্যানার্জি হিথ্রোর ভিআইপি কক্ষে এই মিটিং বসাতে সক্ষম হলেন। খুবই আন্তরিক ছিলো তাঁদের পুনর্মিলন, যতটা হওয়া যায়। পিছনের দরজার কুটনীতির খুব গুরুত্বপুর্ন এই মিটিংটি যে ইতিহাস নির্মান করবে উপমাহাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে, কে জানতো! এত বড় যুদ্ধে হেরেও জুলফিকার আলি ভুট্রো উচ্ছসিত ছিলেন, লায়লা’র কান্নাজড়িত অনুরোধে ভুট্রো ব্যাপারটি নিয়ে দিল্লীর সাথে কথা বলার অঙ্গীকার করলেন। অনুযোগ করলেন, যদিও তাঁর অনুরোধ দিল্লীকে খানিকটা সুযোগ দেবে।

চোখ টিপে ভুট্রো বিষয় পরিবর্তন করলেন, তিনি লায়লাকে হাত ধরে তাঁর খুব কাছে বসালেন, লায়লার কানের কাছে মুখ নিয়ে যেন ষড়যন্ত্র করছেন এমন ভঙ্গিতে আস্তে করে বললেন, ‘‘লায়লা, আমি জানি তুমি কি জানতে এসেছো? বুঝতে পারছি তোমাকে শ্রীমতি ইন্দিরা পাঠিয়েছেন। তাঁকে এই মেসেজটা দিও, আমি দায়িত্ব বুঝে নেবার পরপরই মুজিবুর রহমানকে মুক্ত করবো, উনাকে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে দেবো। বিনিময়ে আমি যা চাই, তা আমি শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীজীকে অন্য একটি চ্যানেলে জানাবো। তুমি এখন যেতে পারো।’’

লায়লা মিটিং থেকে বের হয়ে মেসেজ দেবার সাথে সাথে শশাঙ্ক ব্যানার্জি তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেন। ইন্দিরা গান্ধী এই মেসেজে খুব খুশি হলেন, যদিও আনঅফিসিয়াল একটি প্রতিজ্ঞা। ভুট্রোকে কে কবে বিশ্বাস করতে পেরেছে, তবুও তো একটা আশ্বাস পাওয়া গেলো, এওবা কম কিসে? কিংবা ভুট্রো কি তাঁকে ভুল পথে চালিত করবে? জুলফিকার আলী ভুট্রোর মনে কি অন্য কোনো ফন্দি আছে? ইন্দিরা গান্ধী রিস্ক নিতে চাইলেন না, আশ্বাস সে যত আনঅফিসিয়ালই হোক না কেনো, সেটা তো দিয়েছেন একটি রাস্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি। এই আশ্বাসের অফিসিয়াল কনফার্মেশনের জন্য তিনি পাকিস্তানে অবস্থিত ভারতীয় দুতাবাসকে নির্দেশ দিলেন। দুতাবাস তাঁর ফিরতি রিপোর্টে এই আশ্বাসকে নিশ্চিত করলো। নিশ্চয়তা পাওয়া মাত্র বুদ্ধিমান ইন্দিরা গান্ধী এই ডিপ্লোম্যাটিক বার্তাকে নিজের হাতে নিয়ে এটিকে রাজনৈতিক রূপ দিলেন।

শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি না দিয়ে ভুট্রোর সামনে কোনো পথ খোলা ছিলো না। ইন্দিরা জানলেন কিভাবে শেখ মুজিব মুক্তি পাবেন এবং কখন তিনি প্রথমে লন্ডন, সেখান থেকে ঢাকার পথে রওনা হবেন, ঢাকা যাওয়ার পথে দিল্লি হয়ে যাবার ব্যাপারটা তখনও নিশ্চিত হয় নি। এদিকে ভুট্রোর নির্ভর করতে হচ্ছিলো ইন্দিরা গান্ধীর উপর, কেননা ভারতে তখন ৯৩ হাজার পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী। ধীরে ধীরে পরিস্কার হচ্ছিলো ইন্দিরা গান্ধী যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে তাঁর মন ঠিক করে ফেলেছেন। যদি ভুট্রো শেখ মুজিবকে সম্মানের সাথে মুক্তি দেন এবং তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে অনুরোধ করে্ন, তাহলে তিনি যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে কার্পণ্য করবেন না। যে কোনো সম্মানই আরো বড় সম্মান দিয়েই প্রতিদান দিতে হয়, এটাই রাজমন্ত্র।

ভুট্রো অনেকটা বাধ্য হয়ে, অনেকটা রাজনৈতিক কারনে কথা রাখলেন। বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাওয়ালপিন্ডিতে দেয়া মৃত্যুদণ্ড-এর রায় রহিত করে তাঁকে ৮ই জানুয়ারী মুক্তি দেয়া হয়, সেখান থেকে তিনি ১০ই জানুয়ারী বাংলাদেশে ফেরেন এবং স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রীত্বের দায়িত্ব বুঝে নেন। কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে প্রায় আট মাস বন্দী থাকার পর বঙ্গবন্ধুর সম্মতিতে ভারত সব যুদ্ধবন্দীকে মুক্তি দেবার আদেশ দেয়, যেটা ২রা আগস্ট ১৯৭২ সালে সিমলা চুক্তির অধীনে চুরান্ত করা হয়েছিলো। তবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের যুদ্ধ পরাজয় মেনে নিতে পারেনি, ভুট্রোকে ফাসিতে ঝুলিয়েছে তারা, আর ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫, স্বাধীনতার তিন বছর আট মাস পর পাকিস্তানের এবোটাবাদে প্রশিক্ষিত পাকিস্তানী কিছু বেঈমান অফিসার কাপুরুষের মতো রাতের অন্ধকারে হত্যা করে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে। আইএসআই (ISI)-এর এই এজেন্ডা বাস্তবায়ন এটাই প্রমান করে, আসলে তারা ভদ্রতা করে বা সততা থেকে পাকিস্তানের মিনওয়ালী জেল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়নি, তারা ৯৩ হাজার সৈন্যের মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিয়ে এক ধরনের প্রতারনার আশ্রয় নিয়েছিলো। ভারতের দিক থেকে, কাশ্মীর সমস্যা থেকেই যায়। পাকিস্তানের যুদ্ধবন্দীদের জীবনের বিনিময়ে ইন্দিরা গান্ধী ও দিল্লী কাশ্মীর না চেয়ে বাংলার মানুষের মন জগতের সবচেয়ে প্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে চেয়েছিলো। ভারতের, সর্বোপরি শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সহযোগিতা বাংলাদেশ মনে রেখেছে এবং তা তারা সর্বোচ্চ সম্মানের চোখেই দেখে।
লেখক : আব্দুল্লাহ আল নোমান শামীম
সূত্র : বঙ্গবন্ধু আর্কাইভ
এসএ/