ঢাকা, বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে ইটভাটায় ধ্বংস হচ্ছে শত শত আবাদি জমি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৫:৪৭ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২০ রবিবার

জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইটভাটার আগুনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এলাকার ফসলের ক্ষেত ও পরিবেশ। সেইসাথে ভূমি দস্যু ও দালালদের প্রলোভনে শত শত আবাদি জমি হয়ে যাচ্ছে অনাবাদি। এ নৈরাজ্য ঠেকানোর যেন নেই কেউ।

সদর উপজেলার সালন্দর, ফারাবাড়ি, আকচা, জগন্নাথপুর, নারগুন ইউনিয়ন ও পীরগঞ্জের ভিমটিয়া, গোয়াগাঁও মৌজা ও তার আশপাশ এলাকার আবাদী জমিগুলোর মাটি কেটে ভাটাগুলোতে ইট প্রস্তুত করা হচ্ছে। উল্লেখিত এলাকার সহস্রাধিক একর আবাদী জমির মাটি কেটে বড় বড় পরিখা, পুকুর ও খাল করায় ওইসব জমিতে ২০ বছরেও ফসল ফলানো সম্ভব হবে না বলে ভূমি বিশেষজ্ঞরা বলছেন। 

ভাটা মালিকরা তাদের এক শ্রেণির দালাল চক্রের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক আবাদি জমির মালিকদের মোটা অংকের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে তাদের আবাদি জমিগুলোর উপর অংশের মাটি খুঁড়ে ইট ভাটাগুলোতে সরবরাহ করছে। যেসব জমিতে এ ধরনের ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালাচ্ছে, তার সংলগ্ন জমিগুলোও অনাবাদি হয়ে পড়ছে। কারণ খাল সংলগ্ন জমির উঁচু অংশে আর পানি জমে থাকছে না। 

ফলে ওইসব জমিগুলোতে এখন বোরো ধান আবাদে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। গম ক্ষেতগুলোতে সেচের পানি জমছেনা। সেচের পানি চুইয়ে খাল, গর্ত ও পরিখাগুলোতে চলে যাচ্ছে। ভাটা মালিকদের লেলিয়ে দেয়া দালালরা প্রতি বিঘা জমির মাটি কাটার জন্য অভাবী কৃষককে ২৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিলেও পরিশোধ করা হচ্ছে অর্ধেক টাকা। এমনি করে জমির মালিক হয়ে উঠছে ভূমিহীন আর চিরদিনের জন্য এই জমিগুলো পরিণত হচ্ছে অনাবাদি খালে। 

ইটভাটা মালিক শাহাজাহান আলী (এসবি ভাটা) জানান, ‘দালালরা তাদের ইটভাটার মাটি সরবরাহ করে থাকে। ভাটা মালিকরা কেউ সরাসরি জড়িত নয়। উত্তরাঞ্চলের বগুড়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের দফতর থাকলেও ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে তারা সরেজমিন পরিদর্শন না করায় ইটভাটা মালিক ও দালালচক্র ভূমি দস্যূতায় মেতে উঠেন।’ 

জেলার উল্লেখিত ইউনিয়ন ও মৌজাগুলোতে ধান, গম, সরিষা ফসল উৎপাদনে সেরা রেকর্ড ছিল। কিন্তু ইটভাটাগুলোর আগ্রাসী তৎপরতায় এই মৌজা দু’টি এখন ফসলহীন মাঠে পরিণত হতে চলেছে। 

এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক নূর কুতুবুল আলমকে অবহিত করলে তিনি উপজেলা এ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব ল্যান্ডকে তাৎক্ষণিকভাবে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দিলেও রোববার (১৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি বলে জানান। 

এলাকাবাসীর আশঙ্কা- এই ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হলে তারা মরিয়া হয়ে অবশিষ্ট জমিগুলোকে ধ্বংস করে অনাবাদি ও ফসলহীন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার চক্রান্তে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। গরিব ক্ষুদ্র জমির মালিকদের পথে বসাতে বাধ্য করবে। 

একই ধরনের ইটভাটা মালিকদের লেলিয়ে দেয়া দালালরা সদর উপজেলার আক্চা, দক্ষিণ বঠিনা, রাজাগাঁও, পাটিয়া ডাঙ্গী এলাকায় একই কায়দায় ও কৌশলে আবাদি জমির উপরের মাটি কেটে ভাটায় জোগান দিয়ে জমিগুলোকে অনাবাদি করে ফেলছে।

গত মৌসুমে ওইসব এলাকায় কমপক্ষে ২’শ একর জমির বোরো ধান ক্ষেত ধ্বংস হয়ে গেলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা জেলা প্রশাসক অফিসে দলবদ্ধভাবে ঘেরাও ও বিক্ষোভ মিছিল করে। তাদের ক্ষতি পূরণের আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

এরপরেও চলতি মৌসুমে ইটভাটার সঙ্গে আবাদি জমির মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছে দুর্বৃত্তরা। অসহায় কৃষক, ক্ষুদ্র প্রান্তিক চাষীরা কোনো আইন বিচারের নাগাল পাচ্ছেন না। ফলে ওই জমিগুলো হতে বছরে শত শত মণ খাদ্য শস্য উৎপাদন হতে বেগ পেতে হচ্ছে ঠাকুরগাঁও জেলাবাসীর। 

এআই/এসি