ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লালি গুড় তৈরির গ্রাম বিষ্ণুপুর

ব্রাক্ষণবাড়িয়া প্রতিনিধি:

প্রকাশিত : ০৬:২০ পিএম, ১৯ জানুয়ারি ২০২০ রবিবার

লালি আখের রস দিয়ে তৈরি এক ধরনের মুখরোচক খাবার। যা শীতকালে চালের গুড়া দিয়ে তৈরি যে কোনো ধরনের পিঠার সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এই লালি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী বিজয়নগর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের কয়েকটি পরিবার।

শীতকালে প্রায় একটানা তিন মাস ধরে বাড়ির পাশে খালি জায়গায় লোহার ঘানি বসিয়ে মহিষ চড়িয়ে আখের রস করে তা থেকে তৈরি করা হচ্ছে শত শত লিটার সুস্বাদু লালি। এই লালি তৈরি করে অনেক পরিবার আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তবে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা না পেয়ে অনেক পরিবারই এই পেশা থেকে সরে যাচ্ছেন। বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য ওই এলাকার কয়েকটি পরিবার এখনও এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। 

সরেজমিন ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, লালি তৈরির মৌসুমে দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সেই কাক ডাকা ভোর থেকে তাদের কাজ শুরু হয় চলে রাত অবদি। পরিবারের সব সদস্যরা কাজ ভাগ করে নিয়ে সহযোগিতা করছেন। কেউ লোহার ঘানি টানছেন। কেউ চুলায় জ্বাল দিচ্ছেন। পরে লালি তৈরি হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে তা পাতলা কাপড় দিয়ে ছেকে রাখছেন।

 

কথা হয় ওই এলাকার লালি তৈরির কারিগর জুয়েল মিয়ার সঙ্গে। তার কাছ থেকে শোনা গেল আখ থেকে লালি তৈরির প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, আমরা ভোরে আখ ক্ষেতে গিয়ে জমির মালিকের কাছ থেকে আখ কিনে নিয়ে আসি। তারপর আখগুলো লোহার ঘানিতে ঢুকানো হয়। ঘানির সঙ্গে বাস আর লাঠি দিয়ে মহিষকে দড়ির সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়। মহিষের চোখে প্লাস্টিকের চমশা পড়িয়ে দেওয়া হয় যাতে সে পাশে দেখতে না পায়। পরে লাঠি দিয়ে মহিষকে আস্তে আস্তে আঘাত করলে সে চারদিকে অনবরত ঘুরতে থাকে। এতে লোহার ঘানি থেকে আখের রস বের হতে থাকে। কিছুক্ষণ পর পর রসগুলো জমিয়ে মাটির চুলার উপর পাতের কড়াইতে ঢেলে দেওয়া হয়। আগুনে জ্বালিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা পর তা উঠিয়ে পাতলা কাপড় দিয়ে ছেকে কলসিতে রাখা হয় বিক্রির জন্য। বিভিন্ন দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসে আমাদের কাছ থেকে প্রতি লিটার ৮০ টাকা দরে কিনে যায় এ লালি।

 

বছরে কয় মাস এই লালি তৈরি করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা শীত মৌসুমে একটানা তিন মাস প্রতিনিয়ত লালি তৈরি করি। আমাদের বাপ-দাদা এই কাজ করে গেছেন তাই আমরা এখনও এ কাজ করে যাচ্ছি। বাড়ির প্রায় দুইশ গজ দূরে আরেক লালির কারিগর মোহাম্মদ আলী বলেন, এটা আমাদের বাপ-দাদাদের পেশা। যুগ যুগ ধরে তারা এ কাজ করে গেছেন তাই আমরা করছি। এ লালির গুণগত মান অনেক ভাল। সরকার যদি আমাদের আর্থিকভাবে একটু সহযোগিতা করতো তাহলে আমরা এ কাজ করেই স্বাবলম্বী হতে পারতাম। এ কাজে অল্প পুঁজিতে ভাল ব্যবসা করা সম্ভব। 

লালি বিক্রেতা আব্দুল বাছির বলেন, আমাদের গ্রামের লোকজন কয়েক যুগ ধরে আখ থেকে লালি তৈরি করছেন। আমরা ছোটবেলা থেকেই তা দেখে আসছি। এ শিল্পের সঙ্গে এক সময় আমাদের গ্রামের অনেক পরিবার জড়িত ছিল। কিন্তু সরকারিভাবে সহযোগিতা না পেয়ে অনেকেই এ কাজ থেকে সরে গেছেন। বর্তমানে কয়েকটি পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। কথা হলে স্থানীয় বাসিন্দা জুনায়েদ মিয়া ও শাহীন আলম বলেন, আমাদের অঞ্চলের লালির গুণগত মান অনেক ভাল। লালি কেনার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন এখানে আসছেন।অল্প পুঁজিতে লালি তৈরি করে অনেক পরিবার লাভবানও হচ্ছেন। এ বিষয়ে বিজয়নগর উপজেলার উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, লালি কারিগরদের জন্য সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ পেলে অবশ্যই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।

আরকে//