ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

কাল শেষ হচ্ছে ২১ দিনব্যাপী বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৬ পিএম, ২২ জানুয়ারি ২০২০ বুধবার

জাতীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রসারের মাধ্যমে শিল্প-সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বহুমূখী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ৩ থেকে ২৩ জানুয়ারি ২০২০ দ্বিতীয়বারের মতো ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২০’ আয়োজন করেছে। দেশের ৬৪টি জেলা, ৬৪টি উপজেলা এবং জাতীয় পর্যায়ের পাঁচ হাজারের অধিক শিল্পী ও শতাধিক সংগঠনের অংশগ্রহণে ২১ দিনব্যাপী একাডেমির নন্দনমঞ্চে এই শিল্পযজ্ঞ পরিচালিত হবে। ঐহিত্যবাহী লোকজ খেলা, লোকনাট্য ও সারাদেশের শিল্পীদের বিভিন্ন নান্দনিক পরিবেশনার মাধ্যমে সাজানো হয়েছে এই উৎসবের অনুষ্ঠানমালা। উৎসবে প্রতিদিন ৩টি জেলা, ৩টি উপজেলা, জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী ও সংগঠনের পরিবেশনা থাকবে। এছাড়াও একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে একটি লোকনাট্য পরিবেশিত হবে।

২২ জানুয়ারি উৎসবের ২০তম দিন বিকাল ৪টায় নন্দনমঞ্চে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। এরপরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কায্যক্রমের উপরে প্রমো, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিল্পীদের পরিবেশনায় সমবেত সংগীত পরিবেশন করে শিল্পী সাফান, স্বর্ণালী, জাবের, শুশমী, মেহজাবিন, সাফিন সামিয়া, সুপ্ত, সাফাওয়াত ও শৈলি। একক সংগীত পরিবেশন করে শিল্পী সুফি। অনিক বোসের পরিচালনায় ‘ও আমার জন্মভূমি এবং ফিউশন’ ২টি সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্য সংগঠন স্পন্দন। আহকামউল্লাহ’র পরিচালনায় বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করে আবৃত্তি সংগঠন ‘স্বরশ্রুতি’।

ঠাকুরগাঁও জেলার পরিবেশনায় জেলা ব্রান্ডিং ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, সংগৃহীত সুর এবং আবুল হোসেন সরকারের কথায় ‘হামার ঠাকুরগাঁও বাসী, এবং জুনায়েদ কবির বাবু’র কথা এবং মোজাম্মেল হক বাবলু’র সুরে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে’ 2টি সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী মনজুর উল হক, সাইফুল আলম বাবু, মীর ছানোয়ার হোসেন ছানু, জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মণ, জীবনানন্দ রায়, সরলা রাণী রায়, দিপাশ্রী রায় পপি, নম্রতা বর্মণ সেতু, শ্রাবন্তী রায় এবং শর্মিষ্ঠা রায়। রোহিত খান তুহিন এর নৃত্য পরিচালনায় ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে এবং চল চল চল’ ২টি সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পী নাজমুল ইসলাম, ন্সিগ্ধা রায়, সমির উদ্দিন, তুলা রায়, রিভিয়া তাসনিম বাঁধন, ভেরোনিকা এক্কা, তৃষা রাণী রায়, মাসুমা আক্তার মালা এবং সিনথিয়া মুরমু। হায়রে মানুষের দেহ গানের কথায় একক সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী শুরুবালা রায় এবং আন্ধন ঘরের চালোতে, ঝুমকা কদু ফলাইসে’ দ্বৈত সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী সরলা রাণী রায় এবং জ্যোতিষ চন্দ্র বর্মণ। যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী কায়সার আলী রুবেল, খায়রুল হাসান, পলাশ চন্দ্র রায়, নয়ন কিশোর রায় এবং জ্যাতিরাজ বর্মণ।

গাইবান্ধা জেলার পরিবেশনার শুরুতে জেলা ব্রান্ডিং ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, ‘বাংলাদেশের মাটি ধন্য এবং আসেন বাহে বসেন বাহে’ 2টি সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী নিগার নইম তমা, প্রজ্ঞা মন্ডল, শারমিন আক্তার শিলা, স্মৃতি রানী, জিয়াউর রহমান জিয়া, আফছার আলী, পলাশ চন্দ্র মোদক এবং স্বজন খন্দকার। ‘আমি বাংলায় গান গাই এবং আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই’ ২টি সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পী মাহফুজা তাহসিন তমালিকা, অরিত্রি দে সরকার হিয়া, তাথই সাহা, আনিকা নুসরাত চন্দ্রিমা, সৃজনী বর্মন দিঘী, মোঃ রতন মিয়া, শেখ রিয়াদ হোসেন সোহান এবং আরিফুজ্জামান আরিফ। সমবেত যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী তুলসী সাহা, মিজানুর রহমান মিলন, মো. আব্দুল্লাহ আল ফাহাত, সৈকত এবং রাগিব হাসান। একক সঙ্গীত পরিবেশন করে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী ওয়াফি রহমান অনন্যা এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী নিগার নাইম তমা। জেলার অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি।

নারায়নগঞ্জ জেলার পরিবেশনার শুরুতে জেলা ব্রান্ডিং ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, ‘বুড়িগঙ্গা ধলেশ্বরী শিতলক্ষা নদীর পাড় এবং বাংলার প্রাণ বাঙালি মান রেখেছে যে জন’ ২টি সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী হামিদা ইসলাম, মৌসুমী দেব রায়, জিনিয়া ইসলাম, অর্পিতা মন্ডল, প্রিয়ন্তী সরকার কথা, আমজাদ হোসেন, আতাউর রহমান, হাসান ইমাম, প্রিন্স মামুন এবং সাইফুল হক শাহিন। গোলাম হাবিব এর নৃত্য পরিচালনায় ‘সমারোহে এসো হে ’ এবং কায়নাত বিনতে কবির সাদাফ এর নৃত্য পরিচালনায় ‘বেহুর তালে কোমন দোলে’ ২টি সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পী প্রিয়াংকা সরকার, শ্রাবনী রায়, পুষ্পিতা, রিমি আক্তার, রিয়া আক্তার ইতি, অন্তর সরকার, হাসিবুর রহমান সিয়াম, মো. সিয়াম, গালিব হাসান সিজান এবং সায়হাম আহমেদ তুর্জ। সমবেত যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী সবুজ আহমেদ, শান্ত আহমেদ ও কামরুল আহমেদ। একক সঙ্গীত পরিবেশন করে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী নুসরাত জাহান বৃষ্টি এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী সানজিদা নাহার বেলা।

টাঙ্গাইল জেলার পরিবেশনার শুরুতে জেলা ব্রান্ডিং ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, ‘আবকে বিজয়ের এই দিনে এবং বঙ্গবন্ধু তুমি সবার’ 2টি সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী শামসুজ্জামান দারু, বাচ্চু আহমেদ, বাদল তালুকদার, পলাশ সূত্রধর, শতাব্দী সরকার, দেবশ্রী সরকার, ঋদিতা তাসিন, নুসরাত প্রিথুলা, আফিয়া তাবাসসুম এবং মনিষা সূত্রধর। ‘আমার প্রিয় স্বাধীনতা এবং মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ 2টি সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পী মাসুদ চৌধুরী, সাকিব, মেহেদী, ইন্দ্রজিৎ, মনির হোসেন, ইমা, ইসরাত, রচয়ীতা, রুপন্তী ও ফারিয়া। একক সঙ্গীত পরিবেশন করে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী আবু বকর সিদ্দিকী এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী নৈঝিতা হালদার। যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী শাসুজ্জামান দারু, বাচ্চু আহমেদ, মঙ্গল সেন, মোঃ লাভলু ও সিহাব।

একাডেমি প্রাঙ্গণে রাত ৮টায় দর্শনীর বিনিমেয়ে মঞ্চস্থ হয় মহাদেব সঙযাত্রাদল, টাঙ্গাইল এর পরিবেশনায় ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য ‘বস্তা, উকিল ও পিঠা’। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিদ্ধীচরণ পাল, ভজন পাল, হরিদাস পাল, অনিল পাল, হুমায়ুন কবির, রঘুনাথ পাল ও সুদেব পাল। যন্ত্রে সহযোগিতা করেছেন বাবুল সাহা- ঢোল, লক্ষণ সাহা- হারমনিয়াম, মোবারক- কর্ণেট এবং নিমাই রাজবংশী- জুড়ী।
সংযাত্রা: সঙযাত্রা বা সঙখেলা মূলত সামাজিক নকশাধর্মী এক ধরনের হাস্যরসাক্তক বা ব্যঙ্গাত্মক নাট্যাভিনয়রীতি। এর আসর সাধারনেত সমকালীন সমাজের অসঙ্গতিকে সংলাপাত্মক আঙ্গিক অভিনয়ের আশ্রয়ে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে উপস্থাপন করা হয়। এটি মূলত সংলাপাত্মক চরিত্রাভিনয়রীতি হলেও এ ধরনের আসরে পরিবেশিত বিভিন্ন গানের সঙ্গে জোকার-অভিনেতাদেরকে হাত, পা ছুড়ে দেহ বাকিয়ে বিশেষ প্রকারের নৃত্য উপস্থাপন করতে দেখা যায়।

আভিধানিকভাবে সঙ শব্দের অর্থ হলো- অদ্ভুত পোশাকধারী হাস্যকৌতুককারী অভিনেতা। কিন্তু এদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্যধারা সঙযাত্রা বা সঙখেলা বলতে দর্শকের উপস্থিতিতে কোন আসরে পরিবেশিত অদ্ভূত  পোশাকধারী অভিনেতার অবিনয় শিল্পকে বোঝায়। কেবল অভিনেতা সঙ নন। আসলে আসর, দর্শক ও অভিনয় মিলে অদ্ভূত পোশকধারী অভিনেতা সসমগ্য পরিবেশনাটি হয়ে ওঠে ঐতিহ্যবাহী নাট্যরীতি সঙখেলা বা সঙযাত্রা।

আগামীকাল ২৩ জানুয়ারি ২০২০ বিকেল ৪টা থেকে একাডেমির নন্দনমঞ্চে পরিবেশিত হবে বরগুনা, মুন্সিগঞ্জ, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম জেলার সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং রাত ৮টায় একাডেমি প্রাঙ্গণে দর্শনির মিনিময়ে অনুষ্ঠিত হবে ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য সুনামগঞ্জের ‘ধামাইল’।

বাংলাদেশ হাজার বছরের বর্ণিল ও বিচিত্র সংস্কৃতির অপরূপ লীলাভূমি। হাজার বছরের সেই ঐতিহ্যকে অবলম্বন করে আজও নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে দেশব্যাপী পরিচালিত হচ্ছে আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ। লোকজ সংস্কৃতি আমাদের অন্যতম শক্তি যা বিশ্বব্যাপী আমাদের স্বাতন্ত্রকে জানান দেয়। বাঙালি সংস্কৃতির রূপ, নির্মিত ও পরিবেশনা কৌশল আসলে মিশ্র প্রকৃতির; বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত বিভিন্ন শাসনব্যবস্থা, ভাষা ও প্রকরণের সমন্বয় ঘটে আমাদের সংস্কৃতি আজকের জায়গায় পৌঁছেছে।

২১ দিনব্যাপী বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের পরিবেশনার মধ্যে রয়েছে সমবেত সংগীত, যন্ত্রসংগীত, ঐতিহ্যবাহী লোকজ খেলা, পালা, একক সংগীত, বাউল সংগীত, ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য, যাত্রা, সমবেত নৃত্য, অ্যাক্রোবেটিক, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা, পুতুল নাট্য, একক আবৃত্তি, শিশুদের পরিবেশনা, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংগীত ও নৃত্য, নাটকের কোরিওগ্রাফি, বৃন্দ আবৃত্তি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সম্প্রদায়ের পরিবেশনা, আঞ্চলিক ও জেলা ব্রান্ডিং বিষয়ক সংগীত ও নৃত্য এবং জেলার ঐতিহ্যবাহী ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী।’

আরকে//