ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

শেষ হল ২১দিনব্যাপী বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:২০ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার

জাতীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রসারের মাধ্যমে শিল্প-সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বহুমূখী সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে চলেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ৩ থেকে ২৩ জানুয়ারি ২০২০ দ্বিতীয়বারের মতো ‘বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২০’ আয়োজন করেছে। দেশের ৬৪টি জেলা, ৬৪টি উপজেলা এবং জাতীয় পর্যায়ের পাঁচ হাজারের অধিক শিল্পী ও শতাধিক সংগঠনের অংশগ্রহণে ২১ দিনব্যাপী একাডেমির নন্দনমঞ্চে এই শিল্পযজ্ঞ পরিচালিত হয়। ঐহিত্যবাহী লোকজ খেলা, লোকনাট্য ও সারাদেশের শিল্পীদের বিভিন্ন নান্দনিক পরিবেশনার মাধ্যমে সাজানো হয়েছে এই উৎসবের অনুষ্ঠানমালা। উৎসবে প্রতিদিন ৩টি জেলা, ৩টি উপজেলা, জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী ও সংগঠনের পরিবেশনা থাকবে। এছাড়াও একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে একটি লোকনাট্য পরিবেশিত হয়।

২৩ জানুয়ারি উৎসবের সমাপনী দিনে বিকাল ৪টায় নন্দনমঞ্চে সমাপনী আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন একাডেমির সচিব মো. বদরুল আনম ভূঁইয়া। আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। এরপরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিল্পীদের পরিবেশনায় কোলাজ গান পরিবেশন করে শিল্পী সাফান, সুপ্ত, শুশমী, অমিত, সাফিন ও লিতি।

 

বরগুনা জেলার পরিবেশনায় জেলা ব্রান্ডিং ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, বাবুল কৃষ্ণ সাহা’র পরিচালনায় ‘সাগর পাড়ের মানুষ মোরা, বিশ্ববাসী চিনলো তোমায়’ ২টি সমবেত সংগীত পরিবেশন করে শিল্পী প্রতাপ, সুজন, রক্তিম, আকাশ, প্রবাস, ঝুমা, নিশাত, হিরা, দিপান্বীতা, আশালতা ও ছানিয়া। মেহেদী হাসান বেলাল এর নৃত্য পরিচালনায় ‘মোগো মেজাজ বোলে গরম এবং দেশে দস্যু এলো মেলা’ ২টি সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পী মেহেদী, নিশাদ, শাহরিয়া, নাঈম, রিফাত, অন্ত, দীপ্তি, তাহরিমা, ফারজানা ও জিসমি।  যন্ত্রে সোহিনী রাগ পরিবেশন করে শিল্পী বাবুল, কালিদাস, আরিফুর রহমান, শিপন, বিপুল, শুভ ও শামিম হোসেন। একক সঙ্গীত পরিবেশন করে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী মিলন চন্দ্র কর্মকার।

মুন্সিগঞ্জ জেলার পরিবেশনার শুরুতে জেলা ব্রান্ডিং ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, ‘শোক একটি মুজিবরের থেকে ও বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’ ২টি সমবেত সঙ্গীত এবং ‘দে তালি বাঙালি ও কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানের কথায় ২টি সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে মুন্সিগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্য শিল্পীবৃন্দ, গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গামাটির পথ যন্ত্রে সুর তোলেন মুন্সিগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির যন্ত্রশিল্পীবৃন্দ। একক সঙ্গীত পরিবেশন করে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী শিশির রহমান এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী শিতল।

 

খাগড়াছড়ি জেলার পরিবেশনার শুরুতে জেলা ব্রান্ডিং ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, ‘শৈল থেকে সমতটে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও বাঙালি জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত দেশাশ্ববোধক গান এবং একটি মুজিবরের থেকে’ ২টি সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী মোঃ ফারুক, মোঃ জুয়েল. উত্তম রায়, নিয়ং মারমা, সুমি আক্তার, অনুশ্রী চাকমা, উলিপ্রু মারমা, উক্রাসং মগ, পাখী ত্রিপুরা, তৃষিতা চাকমা, প্রত্যাশা চাকমা ও সুকর্না দে। ‘চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও বাঙালি ভাষার গানের কথায় দেশাত্ববোধক গান এবং চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী জুম নৃত্য’ পরিবেশন করে নৃত্যশিল্পী রিয়া চাকমা, রুবিনা চাকমা, রেশমী চাকমা, জেনিয়া চাকমা, হেলী চাকমা, সুফিয়া চাকমা, মেমাচিং মারমা, প্রমিস চাকমা, সাচিং মারমা, রুপান্তর চাকমা ও সমর বিজয় চাকমা। যন্ত্রে চট্টগ্রামের পাহাড়ী গানের সুর তোলেন শিল্পী গৌতম মনি চাকমা, প্রেমেন্দু চাকমা, মঙ্গল কান্তি চাকমা, রত্ন সেন চাকমা, ডেবিট চাকমা, মান্তি প্রিয় চাকমা, শ্যামল চৌধুরী, এস এস শ্রাবন ও রাকেশ দে। ‘মুজিব তোমার সোনার বাংলা’ পরিবেশন করে জাতীয় পর্যায়ের কন্ঠশিল্পী শাইলু শাহ ও অনুশ্রী চাকমা এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী শাফিন আরমান।

চট্টগ্রাম জেলার পরিবেশনার শুরুতে জেলা ব্রান্ডিং ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের কথায় সমবেত সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে জেলা শিল্পকলা একাডেমি চট্টগ্রামের শিল্পীবৃন্দ। এছাড়াও যন্ত্রসঙ্গীত এবং জাতীয় পর্যায়ের ও উপজেলা পর্যায়ের কন্ঠশিল্পীদের পরিবেশনায় একক সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।

একাডেমি প্রাঙ্গণে রাত 8টায় দর্শনীর বিনিমেয়ে মঞ্চস্থ হয় সজল কান্তি সরকারের রচনা ও গৌতম কর তপন এর নির্দেশনায় এবং একতা নাট্য সংস্থার পরিবেশনায় ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য ধামাইল পালা ‘রাই কিশোরী’। সংগীত পরিচালনায় সোহেল রানা ও কন্ঠশিল্পী ফারজানা আক্তার আশা। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন অর্চিনাগু-শ্রী কৃষ্ণ, সম্পা পাল-শ্রীমতি রাধা, মৌলি তালুকদার-বৃন্দা, নোভা চৌধুরী-ললিতে, রুহি দেবনাথ-বিশকে, মাশিয়াত সুবহে আলম মাহি-ভ্রমর এবং বৃষ্টি মন্ডল, পাখি বৈদ্য, পিংকি সরকার, বন্যা সরকার হিয়া, সাজনা আক্তার ইতি-সখিবৃন্দ। যন্ত্রে সহযোগিতা করেছেন কপির ঋষি, কৌশল দাস বিজন এবং সোহেল রানা।

বাংলাদেশ হাজার বছরের বর্ণিল ও বিচিত্র সংস্কৃতির অপরূপ লীলাভূমি। হাজার বছরের সেই ঐতিহ্যকে অবলম্বন করে আজও নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে দেশব্যাপী পরিচালিত হচ্ছে আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ। লোকজ সংস্কৃতি আমাদের অন্যতম শক্তি যা বিশ্বব্যাপী আমাদের স্বাতন্ত্রকে জানান দেয়। বাঙালি সংস্কৃতির রূপ, নির্মিত ও পরিবেশনা কৌশল আসলে মিশ্র প্রকৃতির; বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত বিভিন্ন শাসনব্যবস্থা, ভাষা ও প্রকরণের সমন্বয় ঘটে আমাদের সংস্কৃতি আজকের জায়গায় পৌঁছেছে।

২১ দিনব্যাপী বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক উৎসবের পরিবেশনার মধ্যে ছিলো সমবেত সংগীত, যন্ত্রসংগীত, ঐতিহ্যবাহী লোকজ খেলা, পালা, একক সংগীত, বাউল সংগীত, ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য, যাত্রা, সমবেত নৃত্য, অ্যাক্রোবেটিক, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনা, পুতুল নাট্য, একক আবৃত্তি, শিশুদের পরিবেশনা, বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংগীত ও নৃত্য, নাটকের কোরিওগ্রাফি, বৃন্দ আবৃত্তি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সম্প্রদায়ের পরিবেশনা, আঞ্চলিক ও জেলা ব্রান্ডিং বিষয়ক সংগীত ও নৃত্য এবং জেলার ঐতিহ্যবাহী ভিডিও চিত্র প্রদর্শনী।’

শুরু হচ্ছে ‘সৈকত সাংস্কৃতিক উৎসব: 
‘শিল্প সংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সারাদেশে বিস্তৃত পরিসরে কাযর্ক্রম পরিচালনা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় পর্যটন শহর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে প্রথম বারেরমতো ‘সৈকত সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২০’-এর আয়োজনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আগামী ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি ২০২০ দুই দিনব্যাপী দুইদিনের এই উৎসবে সংগীত, নৃত্য, অ্যাক্রোবেটিক, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবেশনা এবং পারফর্মেন্স আর্টসহ বৈচিত্রপূর্ন সাংস্কৃতিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হবে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দারবান ও বাংলাদেশে শিল্পকলা একাডেমির পাঁচ শতাধিক শিল্পীর অংশগ্রহণ করবেন।
 
এছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ৪৩ ফুট দীর্ঘ প্রতিকৃতি কক্সবাজার সমূদ্রসৈকতে স্থাপন করা হবে।
 
আগামী ২৪ জানুয়ারি ২০২০ বিকাল ৪টায় কক্সবাজার সমূদ্রসৈকতের অবস্থিত জেলা প্রশাসকের উন্মুক্ত মঞ্চে উৎসব উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী। জেলা প্রশাসক এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি জনাব মো. কামাল হোসেন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্তিত থাকবেন কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার জনাব এ বি এম মাসুদ হোসেন, বিপিএম এবং কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র জনাব মুজিবুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন একাডেমির সচিব বদরুল আনম ভূইয়া।

আরকে//