ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ঢাকায় ঢুকছেন নেতারা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৫২ এএম, ২৪ জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার | আপডেট: ১০:৫৫ এএম, ২৪ জানুয়ারি ২০২০ শুক্রবার

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগামী ১ ফেব্রয়ারি। সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই সরগরম হয়ে উঠছে রাজনৈতিক অঙ্গন। ইতিমধ্যে নির্বাচনের যাতবীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় সারাদেশে থেকে রাজধানীতে ঢুকতে শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতাকর্মীরা। লক্ষ্য একটাই- নিজেদের জয় নিশ্চিত করতে যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি কেন্দ্রে-কেন্দ্রে পাহারা দেওয়ার প্রস্তুতি।

জানা গেছে, বেশ কয়েকটি জেলা থেকে আসা মূল দল এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পদধারী নেতারা ইতিমধ্যেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। স্ব স্ব দলের মেয়র প্রার্থীদের প্রচারণায় নিয়মিত অংশও নিচ্ছেন তারা। দুই সিটির বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের অনেকেও নিজ নিজ এলাকা থেকে কর্মী-সমর্থকদের ঢাকায় এনে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারণা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, মূলত ভোটের দিনকে সামনে রেখেই বাইরে থেকে নেতাদের ঢাকায় জড়ো করা হচ্ছে। দুই দলই মেয়র পদে জয় চায়। এজন্য যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার পাশাপাশি কেন্দ্রে-কেন্দ্রে পাহারা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

দুই দলের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে মেয়র পদে দল দুটির চার প্রার্থীর নিজ গ্রামের এলাকা এবং আত্মীয়তার সূত্র-সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহ থেকে বহু নেতা কয়েক দিন আগে থেকেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারা নিজ দলীয় মেয়র প্রার্থীর পক্ষে নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। প্রচারণার কৌশল নির্ধারণ, প্রচারণা সমন্বয় এবং পথসভায় নেতা-কর্মী-সমর্থক ও ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও তারা ভূমিকা রাখছেন। ভোটের দিনে ভোটারদের আকৃষ্ট করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট টানার জন্য করণীয় নির্ধারণেও তারা কাজ করছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কয়েকটি জেলার মূল দল এবং এর বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের জেলা-উপজেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ উল্লেখযোগ্য পদধারী নেতাদের অনেকেই এখন ঢাকায়। বিশেষ করে, দুই মেয়র প্রার্থীর যেসব আত্মীয়স্বজন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছেন তাদের জেলা থেকে দলীয় নেতাদেরকে ঢাকায় এনে প্রার্থীর পক্ষে কাজে লাগানো হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সূত্রে আরও জানা যায়, ভোটের দিন এবং এর আগে-পরে প্রতিপক্ষ যেন নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট এবং ভোটকেন্দ্রে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য কেন্দ্রভিত্তিক পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ভোটের ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত কেন্দ্রে-কেন্দ্রে পাহারায় থাকবেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। যে কোনো ধরনের নৈরাজ্য বা বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ২০১৫ সালে সিটি নির্বাচনে মাঝপথ থেকে সরে গেলেও বিএনপি এবার শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে থাকার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে। দুই সিটিতেই জয়ও পেতে চায় দলটি। এজন্য বিএনপির নেতৃত্ব এবার নতুন কিছু কৌশল নিয়েছে। সুষ্ঠু ভোট আদায় করে দুই সিটিতেই জয় নিশ্চিতে যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাংগঠনিক প্রস্তুতি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। 

এই লক্ষ্যে ভোটের দিন ভোর থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত কেন্দ্র পাহারা দেবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। কেন্দ্র পাহারা দিতে ঢাকা মহানগর নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলা থেকেও মূল দল এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতা-কর্মীদের ঢাকায় জড়ো করা হচ্ছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ফেনী ও নোয়াখালীসহ চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে দলের নেতাকর্মীরা কয়েক দিন ধরেই ঢাকায় অবস্থান করে উত্তরে দলীয় মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। একইভাবে মুন্সীগঞ্জ, বিক্রমপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতা-কর্মী ঢাকায় এসে দক্ষিণে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

তাবিথ ও ইশরাকের ঘনিষ্ঠ জনরা জানান, ভোটের শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকা, ভোটারদের ভোট দেওয়া নিশ্চিত করা, কেন্দ্র দখল ও কারচুপি ঠেকানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য সাংগঠনিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই বাইরে থেকেও নেতা-কর্মীদের আনা হচ্ছে। জানা গেছে, কেন্দ্র দখল ও কারচুপি ঠেকাতে বিএনপি কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের নিয়ে গঠন করছে দুই স্তরের কমিটি। পাশাপাশি উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে কয়েকটি জোনে ভাগ করে প্রতিটি ওয়ার্ডে আলাদা কমিটি গঠন করা হচ্ছে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে ভোটের দিন ভোর থেকে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করবেন এসব কমিটির সদস্য। এছাড়া প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিশ্চিতেও নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ।

ইতিমধ্যে মেয়র পদের জন্য দুই সিটিতে প্রায় ৫০ হাজার পোলিং এজেন্টের তালিকা তৈরি করেছে বিএনপি। জানা গেছে, মেয়রদের পাশাপাশি দল-সমর্থিত সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অনেকেও নিজ গ্রামের এলাকা থেকে নেতাকর্মী-সমর্থক ও আত্মীয়স্বজনকে ঢাকায় নিয়ে আসছেন। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারণায় অংশ নিতে এবং ভোটের দিন কেন্দ্র পাহারা দেওয়ার লক্ষ্যে বাইরে থেকে আসা নেতা-কর্মীদের ভিড় লক্ষ করা যায় ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলগুলোতে। কারো কারো জন্য সংশ্লিষ্ট প্রার্থী ও দলের পক্ষ থেকে অন্যত্র থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রচারকে সামনে রেখে নিজ নিজ কৌশল প্রণয়নে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। কিন্তু এই ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ বেশ স্বস্তিতে থাকলেও নানা শঙ্কায় ভুগছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি।