ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

পারিবারিক বন্ধন সুস্থ ও প্রাণবন্ত করে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০২:৩৫ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০২:৪৩ পিএম, ২৭ জানুয়ারি ২০২০ সোমবার

মানুষ একা নয়। কোনো না কোনোভাবে সে একত্রিত ও যূথবদ্ধ। পরিবারমুখিতা মানুষের চিরায়ত ও সহজাত প্রকৃতি। এছাড়াও জীবনের পরতে পরতে বিভিন্ন উপলক্ষে সে ক্রমশ যুক্ত হতে থাকে নানা সামাজিক বন্ধনে। এসব সম্পর্কের গাঁথুনি যার জীবনে যতটা সুনিবিড় ও দৃঢ়, জীবনটাও তার কাছে ততটা উপভোগ্য ও সহজ। সমাজতাত্ত্বিকদের পর্যবেক্ষণে এ আজ এক সার্বজনীন সত্য।

পারিবারিক বন্ধনে বাড়ে আয়ু

পারিবারিক একাত্মতা জীবনকে সুন্দর করে। করে তোলে অর্থবহ। বিজ্ঞানীরা রীতিমতো জোর দিয়ে বলছেন, পারিবারিক সম্প্রীতির সাথে মানুষের দীর্ঘায়ু অর্জনের সম্পর্কটা একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত। 

তাদের মতে, বাবা-মা, সন্তান ও ভাইবোনদের সাথে কাটানো আনন্দঘন মুহূর্ত দীর্ঘায়ু লাভে বিশেষভাবে সহায়ক। কিন্তু পারিবারিক বন্ধন যাদের দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে উল্টোটা।

পারিবারিক একাত্মতার সুফল মানুষ পেতে শুরু করে জীবনের গোড়া থেকেই। যেসব পরিবারে বাবা-মা ও সন্তানদের মাঝে উষ্ণ সম্পর্ক বিরাজমান, ক্যান্সারের মতো অসুখে পড়ার সম্ভাবনা তাদের কম। এবং এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।

একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, যেসব পরিবারে একত্রে খাওয়া দাওয়ার রীতি চালু আছে, তারা তুলনামূলক সুস্থ খাদ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত। 

ভাইবোনের হৃদ্যতায় বাড়ে আনন্দ, কমায় বিষণ্নতা

আপনি ভালো আছেন, সুস্থ সুন্দর আনন্দময় জীবনযাপন করছেন, এর কিছু কৃতিত্ব দিতে হবে আপনার ভাইবোনদেরও। ভাইবোনের সাথে সম্পর্কটা যাদের মধুর, তারা দৈহিকভাবে তুলনামূলক সুস্থ এবং মানসিক দিক থেকেও প্রজ্ঞাপূর্ণ জীবনযাপন করেন। এমনটাই মত গবেষকদের।

২০১৫-তে ২৪৬টি পরিবারের সন্তানদের নিয়ে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভাইবোনের পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এদের মধ্যে যারা যতটা ইতিবাচক ও একাত্ম, বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার হার ওদের ততটাই কম।

দাম্পত্য সুসম্পর্কে প্রাপ্তি অশেষ

আপনার দাম্পত্যসঙ্গী অর্থাৎ স্বামী/ স্ত্রীর সাথে উষ্ণ ভাব-বিনিময় ও কথোপকথন আমাদের সম্পর্কটাকে গভীর আর মজবুত করে তো বটেই, সেই সাথে রাখে সুস্থ, বাড়ায় দীর্ঘায়ুর সম্ভাবনা।

২০১৭ সালে ১৬২টি যুগলের ওপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের পারস্পরিক আলাপনটা যেদিন সুখপ্রদ ও ইতিবাচক ছিল, সেদিন তারা একাকিত্বে ভুগেছেন কম, অনুভব করেছেন অধিকতর হৃদ্যতা এবং ব্যায়াম করার ব্যাপারে ছিলেন তুলনামূলক বেশি আগ্রহী। অন্যদিনের তুলনায় তাদের ঘুমটাও সেদিন হয়েছে বেশ ভালো।

পারিবারিক বন্ধনে তৈরি হয় সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন

বিশ্বজুড়ে আধুনিক ধারার সমাজবিজ্ঞানী এবং স্বাস্থ্য-গবেষকদের সাম্প্রতিক গবেষণার ভিত্তিতে এটা আজ এক প্রমাণিত সত্য যে, পারিবারিক ও সামাজিক একাত্মতা একজন মানুষকে সুস্থ সুখী সফল জীবনের পথে চালিত করে। তাই আমাদেরও উচিত এ যূথবদ্ধ জীবনযাপনের প্রতিটি সুযোগকেই কাজে লাগানো। এবং প্রয়োজন আমাদের উত্তরপ্রজন্মকেও সাধ্যমতো এমন জীবনধারায় অভ্যস্ত করে তোলা।

তাই যে-কোনো বিষয়ে পারিবারিক আলোচনা, পরিবারের সবাই অন্তত একবেলা একসাথে খাওয়া ইত্যাদি আচরণ-অভ্যাসের পাশাপাশি সঙ্ঘবদ্ধভাবে নৈতিকতার চর্চায়ও মনোযোগী হোন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রতি সপ্তাহে সাদাকায়ন-আলোকায়নসহ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিন। সেখানে অন্যদের সাথে পরিচিত হোন, পরিবারের সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দিন। সপ্তাহে অন্তত একদিন পরিবারে ধর্মবাণী পাঠ ও আলোচনার ব্যবস্থা করুন।

সুষম পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন আপনার ও আপনার পরিবারের সদস্য এবং প্রিয়জনদের পরিচালিত করুক সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যস্ত সুখী জীবনের পথে।