ঢাকা, শুক্রবার   ১০ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২৭ ১৪৩১

আমানতের সুদহার ৬% ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০১ এএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২০ বুধবার

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মেয়াদি স্কিম ছাড়া অন্য কোনো আমানতে ৬ শতাংশের বেশি সুদ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্যাংকগুলো। আগামী এপ্রিল থেকে সব ধরনের ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকরের লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর এমডিরা বসে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

গতকাল মঙ্গলবার ইস্টার্ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক উপস্থিত একাধিক ব্যাংকের এমডির সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখারের আহ্বানে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অধিকাংশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠকে বলা হয়, অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার আলোকে সব বড়ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর সম্ভব হলেও ক্ষুদ্রঋণে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার কার্যকর করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। 

তারা বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতে যে প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকার আমানত রয়েছে, এর বড় অংশই মেয়াদি। ৬ শতাংশ সুদে মেয়াদি আমানত নিয়ে এর সঙ্গে আবার তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ রয়েছে। ক্ষুদ্রঋণের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনেক বেশি। এরকম অবস্থায় ক্ষুদ্রঋণে আদৌ সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার কার্যকর সম্ভব হবে না বলে তারা মনে করেন।

সূত্র জানায়, বৈঠকে বলা হয়- সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে যে করেই হোক আগামী ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। তবে আমানতে সুদ না কমিয়ে ঋণের সুদ কমানো সম্ভব না। 

এ অবস্থায় কালক্ষেপণ না করে এখন থেকেই সব ব্যাংক একযোগে আমানতে সুদহার কমাতে হবে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কোনো ধরনের আমানতে আর ৬ শতাংশের বেশি সুদ দেওয়া যাবে না। তবে শুধু দীর্ঘমেয়াদি স্কিমগুলোতে ব্যাংক নিজের মতো করে সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। যাতে করে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকরে অসুবিধা না হয়।

এমডিরা বলেন, বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৯ শতাংশের বেশি সুদে মেয়াদি আমানত নেওয়া হচ্ছে। এখন আলোচনার ভিত্তিতে সব ব্যাংক একযোগে আমানতে ৬ শতাংশ সুদ কার্যকর না করলে বাজারে অসমতা তৈরি হবে। কেননা কোনো ব্যাংক ৬ শতাংশ সুদে আমানত নিল, আবার কেউ ৯ বা ১০ শতাংশ সুদ অফার করল তাতে বাজার অসম হবে। এরকম বাস্তবতায় নিজেদের টিকে থাকার লক্ষ্যেই একযোগে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে। জানুয়ারি থেকে অনেক ব্যাংক আমানতের সুদহার কমাতে শুরু করেছে বলে বৈঠকে বলা হয়।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা আমানতে এভাবে সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেওয়ার বিপক্ষে মত দিয়ে আসছেন। তারা মনে করেন, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের লক্ষ্যে আমানতের সুদহার কমানো দরকার। তবে আমানতে ৬ শতাংশ সুদহার বেঁধে দিলে উচ্চ সুদের আশায় অনেকে অপ্রচলিত খাতে বিনিয়োগ করতে পারেন। যার প্রভাবে ব্যাংক খাতে আমানত কমে বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ফলে আমানতে সুদহারের সীমা বেঁধে না দিয়ে ব্যাংকের উচ্চ খেলাপি ঋণ ও সাজসজ্জা ব্যয় কমানো এবং উচ্চ মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য থেকে সরে আসতে হবে। এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে এমনিতেই ঋণের সুদহার কমবে। যার প্রভাবে আমানতকারী ও ঋণগ্রহীতা উভয়ে উপকৃত হবেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বেশ আগে থেকে ঋণে ৯ ও আমানতে ৬ শতাংশ সুদহার কার্যকরের কথা বলে আসছেন। এ নিয়ে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিদের নিয়ে দফায়-দফায় বৈঠক করেছেন তিনি। সর্বশেষ তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী ১ এপ্রিল থেকে সব ধরনের ঋণে ৯ এবং আমানতে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ কার্যকর করতেই হবে। এ লক্ষ্যে গত ১৯ জানুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হয়েছে, এখন থেকে সরকারি আমানতের অর্থ বেসরকারি ব্যাংকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে রাখা যাবে। 

আর সরকারি ব্যাংকে রেখে সর্বোচ্চ সাড়ে ৫ শতাংশ সুদ নেওয়া যাবে। সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির উদ্বৃত্ত অর্থ, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির জন্য এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যা কার্যকর হয়েছে।