ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

সব অতীত কি ইতিহাসে আশ্রয় পায়?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৭ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:৩৭ পিএম, ৩০ জানুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার

যা ইতিহাস তাই অতীত, সব অতীত ইতিহাস নয়। আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনা আগামীকাল অতীত। অতীত ইতিহাসের খাতায় আশ্রয় পাবে কি? সেটা ঘটনার গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে। 

এ উপন্যাসে বিটিশ শাসনামলের শেষ সময়কে বেছে নেওয়া হয়েছে। সৈয়দ আকবরের নর্তকীর মেয়ের সঙ্গে তার সন্তান যোবায়েরের প্রণয় ঘটে। যোবায়েরের সঙ্গে প্রণয়ের কারণে সৈয়দবাড়ির ভাসমান আশ্রয়টুকুও মমতাজ-নার্গিসকে হারাতে হয়। 

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের নোবেল অর্জন এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ খুব কাছাকাছি সময়ের। শরৎ চন্দ্রের অবহেলিত লেখা ‘দেবদাস’ কীভাবে বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থে পরিণত হয়, সে বিষয়টিও এ উপন্যাসে উঠে এসেছে। 

কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতা, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’, বঙ্কিমের ‘দুর্গেশনন্দিনি’, অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম', জসীমউদ্দীনের ‘কবর’ কবিতার হৃদয় ছোঁয়া বর্ণনা কাহিনীর অন্তরালে এসে গেছে। 
নর্তকীর মেয়ের সঙ্গে অসম সম্পর্ক গড়ে ওঠার ভয়ে সৈয়দ আকবর নিজ সন্তানকে কলকাতায় পড়তে পাঠায়। যোবায়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে পুনরায় সরাইলে ফিরে নার্গিসের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। সৈয়দ আকবর ভয়ঙ্করভাবে তার স্বরূপ প্রকাশ করতে শুরু করে। মমতাজ-নার্গিস দুজনকেই নওগা গ্রাম থেকে বিতাড়িত করে। মা-মেয়ে দুজন ঢাকা শহরে আশ্রয় নেয়। যোবায়ের কলেজে শিক্ষকতা শুরু করে ঢাকার মেয়ে ইয়াসমিনকে বিয়ে করে। কয়েক বছর যেতেই ওদের দুজনের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। যোবায়েরের মতো নার্গিসও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেয়। ভারতবর্ষে সর্বত্র বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। এ সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধও শুরু হয়। মার্কিন-বিট্রিশ মিত্রবাহিনী গড়ে ওঠে। ইংরেজদের কৌশলী প্রলোভনে ভারতীয় নওজোয়ানরা মিত্রবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধে জড়িয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গ, কলকাতা, পাঞ্জাব, বাংলাদেশসহ ভারতের অনেক জায়গাতেই জার্মানিরা বোমা মেরে জানমালের ক্ষতি করছে। জার্মান বিট্রিশ পার্লামেন্ট হাউস ও আক্রমণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে লিটলবয় ও ফ্যাটম্যান নামে দুটি পারমাণবিক বোমা ফেলে। পারমাণবিক বোমার আঘাতে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটে। 

বিটিশ শাসনামলের সমাপ্তির পথে এসে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা ভারতের অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন্ডের উদ্যোগে ভারত-পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। যোবায়ের নার্গিস দীর্ঘদিন একাকী জীবনযাপন করে দুজনই নিজেদের জন্মস্থান সরাইলে ফিরে আসে। দীর্ঘদিন পর দুজনের মিলনের পথে নার্গিসের আক্ষেপ, তুমি তো আমাকে কখনো এক আনা মনও দাওনি। আমি তোমাকে ষোলো আনা মন দিয়েই ভালোবেসেছি । যোবায়ের নার্গিসের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলে, আমিও তোমায় ভালোবেসেছি; তবে সেটা এক আনা যোলো আনা-সে তর্কে যাব না, যা এক আনা তাই ষোলো আনা।

একে//