ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তরুণ কবিদের মধ্যে ভিন্ন ধারায় হাঁটছেন আতাউল হাকিম আরিফ 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৪২ পিএম, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শুক্রবার

শব্দকে যিনি ভেঙেচূড়ে পুনঃপুনঃ জোড়া লাগিয়ে বসিয়ে দেন-ঘটে যায় প্লাবন। শব্দকে নাড়িয়ে যিনি হটিয়ে দেন কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা সর্বোপরি অপরাজনীতির কূটচরিত্র-তিনি আতাউল হাকিম আরিফ। প্রতীকী শব্দবিন্যাসে তিনি লিখেন গভীরতম প্রদেশ থেকে-শব্দচাষের কর্ষণে-ঘর্ষণে অতপর তেতে উঠে পাগলা ঘোড়া। 

সমকালীন কবিদের মধ্যে একেবারেই ভিন্নার্থে যদি কারো নাম আসে নিঃসন্দেহে আতাউল হাকিম আরিফ সেখানে শীর্ষেই থাকবে। সম্বিত ফিরে পেতেই ফের মহাশঙখের ধ্বণি/কিংবা আমি শুনতে পাই লুই আইকানের নকশাঘরে ব্যাপক হট্টগোল!/মহাসড়ক পেরিয়ে পার্ক লেনে চোখে পড়ে/ মাতারীর শরীরী তরঙ্গ এবং পট-পুটলি!

শেতাঙ্গ রোদসী-/কিশোরীর বুক ছুঁয়ে ঢলে পড়ে ঘাসে,এবং/ দৃশ্যরূপ আবিস্কারে কতিপয় রাজশাস্ত্রীয় পণ্ডিত/ভুলে যায়- কি তাঁহার কর্তব্য।/রক্তজলে তত্ত্বকোষের পাতাগুলো/ভাসতে থাকে পদ্মা,মেঘনা,যমুনার স্রোতে!(পদ্মা মেঘনা যমুনার জলে-কাব্যগ্রন্থ- স্বপ্নের স্বপক্ষে দাঁড়িয়ে) কিংবা মধ্যযুগীয় কালধ্বনি ঘোড়সওয়ার হয়ে/ইতিহাসের পুনঃ পুনঃ উত্থান চলছে!/ইতিহাসের কতিপয় মধ্যযুগীয় নায়ক-নায়িকাগণ /কিঞ্চিৎ বাকবদনে উর্জস্বী হয়ে উশপিশ করে তোলে সময়।/তওজা মুরিদানগণ- পুষ্পবাটীতে সিক্ত করে,/চোঁয়াঢেঁকুর তোলে বিলিয়ে দেয় লস্কর। /দোয়েম-বাহক এগিয়ে চলছে দুণ্ডুক প্রবাহে।/আর কত চেটক!/

এখনি হয়তো সময় চেঁচেপুঁছে গড়ার। (মমধ্যযুগীয় কালধ্বনি-স্বপ্নের স্বপক্ষে দাঁড়িয়ে ) এভাবেই একজন আতাউল হাকিম আরিফ একেবারেই অন্যরকম, প্রতিটি কবিতায় যেনো বিশাল এক ইতিহাসের উপজীব্যতা, শব্দগুলো হাঁটে ইতিহাসের পাতায়। ইতিহাস ও রাজনীতি, দাসপ্রথা কিংবা সামন্তপ্রথা কিংবা এখনো আমরা ক্রীতদাস কবির কবিতার ভাবার্থ অনেক বিশাল- ব্যাপকতর- পৃথিবীর বুকেপিঠে হাঁটছি,/

কখনো চিরহরিৎ, কখনো অন্ধকারাবৃত.../গভীরতম কোনো দর্শনের কথা শোনা যায়,/মানুষগুলো যেনো একএকটি নোটিশ /কিংবা কারখানায় উৎপাদিত রক্তকোষ!/প্রান্তজন হেঁটে যায়, ক্ষয়ে যায়... /রক্তাক্ত প্রান্তরে পণ্যশালার দখল নিচ্ছে পুঁজিপতির দল।/কালোবিড়ালগুলো তখনো সমানে লেজ/ নেড়ে নেড়ে চলেছে,,মাঝেমাঝে গন্ধ শুকছে,/আমার আকাশে তখন বিকট শব্দে/ সাইরেন বেজে উঠেছে কিংবা শব্দবিভ্রম/এবং আমাকে স্বপ্নের ভেতর বিপ্লববাদী একপুরুষ/ শুনিয়ে গেছে মিশ্রদর্শন হয়তোবা সে হতে পারে পুঁজির দালাল। (প্রান্তজন হেঁটে যায়,ক্ষয়ে যায়- ভিউকার্ডের রমনীগণ) আমাদের চারপাশের গৃহিণীগণ যারা ঐতিহাসিক ভাবেই পেয়ে এসেছে হেরেম কূটনীতির কূটচাল- তাতেই কবির কলমে ফুটে উঠেছে " হুররম কিংবা মেহেরুননেছা হেরেম কূটনীতি কিংবা প্রাসাদ জয়ের নায়িকাগণ এবং এই সময়ে আমাদের সুশ্রী গৃহিণীদের মধ্যে মাঝেমাঝে মোলাকাত হয়!/আমরা অধমগণ মধু শুষে খাই, গন্ধ শুকি, অত;পর /ঢেঁকুর তুলতে তুলতে রূপের অতলে কিংবা দুই ইঞ্চি পরিমাণ জমির কর্ষনে, ঘর্ষণে নটিনী, তটিনীগণের তন্ত্রমন্ত্রে হেরে যায়; /হুররম কিংবা মেহেরুননেছাগণ পুনঃ পুনঃ জীবিত হইয়া আমাদের সুশ্রী গৃহিণীদের কবজ লাগিয়ে দেয় অতপর; আমরা অধমগণ বিষবাষ্পে পতিত হই। (অতপর অধমগণ-ভিউকার্ডের রমনীগণ) ভাষা বৈচিত্র্যময়তায় আতাউল হাকিম আরিফ কে অনুধাবন করতে হলে শব্দ এবং প্রেক্ষাপট খুঁড়েখুঁড়ে খুঁজে নিতে হবে, তার কবিতার ব্যাপ্তি যেমনটি এই কবিতাটা পাঠেই আমরা উপলব্ধি করতে পারি
"এই পথটা অনেক দূর পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে/বাল্মিকির যেখানে শুরু হয়তোবা সেখানে/উত্তরের স্রোতধারাটাও সামন্তদের/ঠিক চৌকোনাটায় আটকে গেছে হয়তোবা!/কিছু দূর্বোধ্য শব্দ,কিছু আগন্তুক/বড্ড হৈ-চৈ শুরু করে দিয়েছে।/
দত্তদের বটশীর সমান বয়সী পুরুষ সে/
একবার করে আসে ঘোর অন্ধকারে /
কিছু সংকেত দিয়ে যায়,কিছুটা অস্পষ্ট/
ঘুমঘোরে হেঁটে যায় বটশী তলে /
অশরীরির আগমনে কাঁপতে কাঁপতে /

পুনরায় অন্ধকার রাতে ত্রিশোর্ধ রমনীর বশীকরণে/ (এই পথটা অনেক দূর- কাব্যগ্রন্থ-ভিউকার্ডের রমনীগণ) কবির কবিতার দ্রোহ যেমনটি এসেছে তেমনি এসেছে প্রেম, যৌবন এবং যৌন শিল্প তার-ই একটি কবিতা-যদি বুকে জড়িয়ে ধরো--ধরে নিলাম তোমার সৌন্দর্য ইউরেনিয়ামের খনির চাইতেও দামী/যেখানে ঢু- মারতে চাইবে তামাম পৃথিবীর পরাক্রমশালী ব্যক্তিবর্গ, /তুমি হবে লাসভেগাসের জুয়ার আসরের সবচাইতে বড়দান /কিংবা পেন্টাগনের যুদ্ধ জয়ের কৌশলে সবচাইতে বড় অস্ত্র!/তোমার রূপযৌবনে ভাসতে থাকবে/আরব সাগরের তেল, এশিয়ার গ্যাস, আফ্রিকার সোনা এবং/আমেরিকা, রাশিয়ার কারখানায় উৎপাদিত রাসয়নিক, হাইড্রোসিল বোমা.../তুমিও হতে পারো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম উৎসমুখ!/

এইতো তোমার শক্তি, /মুহুর্তে রূপের আগুনে ছাইভস্ম করে দিতে পারো আমাকে,/তাতেও আমি রাজি, যদি একবার এসে বুকে জড়িয়ে ধরো।/ (কাব্যগ্রন্থ- দাসখতে লাথি মারি) তেমনি বিরহ এসেছে-শুন্যযোজী আমার প্রান্তর/প্রচণ্ডমূর্তি ধারণ করে আছে দুঃখাবহ/কালশিটে, বুকেপিঠে রুদ্রাক্ষমালা!/একজন লীলাবতীর চোখে অশ্রু গড়িয়ে যায়/আমি হেঁটে যাই লীলাবতীর চোখের কালিমায়।/আরো দূরপথে বনপাখিদের নৃত্যগীত,/শাস্ত্রীয় সুরভেদ করে-/একখণ্ড আকাশ ভেঙে পড়ে,আমিও!/আকাশ ভেঙে পড়ে (আকাশ ভেঙে পড়ে- ভিউ কার্ডের রমনীগণ)মৃত্যুচিন্তাও কবিকে তাড়িত করেছে বারবার-তাইতো শবযাত্রার পেছনেই আজরাঈলের সাথে কপোপকথন বিন্যাস্ত করেছেন এই কবিতায়-শবযাত্রায় হেঁটে চলেছি, মৃত্যুভূক হেঁটে চলছি।/মৃত্যুদেব! হেঁটে চলেছে সাথে/শুনিয়েছি তাঁকে একখানা কবিতা! 

জম্মঅব্দি বেঁচে থাকা এবং সুখ,দুঃখের কথামালা।/মৃত্যুদেবও শুনিয়েছে ভিন্ন এক কবিতা/সুললিত ও দীর্ঘ কবিতার অংশ বিশেষ। /শবযাত্রায় হেঁটে চলেছি... /হেঁটে চলেছে বেহিসেবি জীবনের গল্প/হেঁটে চলেছে কৈশোর, যৌবন!/হেঁটে চলেছে সমাজ, রাষ্ট এবং দর্শন।/হেঁটে চলেছে পাপ ও পূর্ণকাম। /হেঁটে চলেছে একখানা ডায়েরী!/লাল,সবুজ দাগ কেটে দিলো মৃত্যুদেব! 

এমনি করে কবি আতাউল হাকিম আরিফের অসংখ্য কবিতা নিঃসন্দেহে ব্যাতিক্রমধর্মী,পাঠক মাত্র-ই ধ্যানে মগ্নতায় আবিষ্ট হবেন। চলতি বছর কবির কাব্যগ্রন্থ বেরিয়েছে " ভিউকার্ডের রমনীগণ" এবং গত বছর বেরিয়েছিল " দাসখতে লাথি মারি"। বইটি একুশে বইমেলায় চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনাতে পাওয়া যাচ্ছে।

কেআই/এসি