ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

কেওড়া গাছের সেতু এবং মালাছারি খেলার গল্প

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৫৮ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সোমবার

আমরা কিছুদিন আগেও হাঁটু পর্যন্ত ডুবিয়ে কাদামাটি পাড়ি দিতাম শ' শ' মিটার। আর এখন, কেওড়া গাছের সেতুতে যাই। পদ্মা সেতুর দেশে এই সেতু কম কিসে? সন্দ্বীপের নৌরুটে উন্নয়ন হলে, কাঁচা টাকা আসা বন্ধ হয়ে যাবে। এখন যেমন প্রতিদিন নিয়মে অনিয়মে কয়েক লাখ টাকা আয়ের ধান্ধা আছে। ঘাটের নৌ চলাচল ব্যবস্থার সংষ্কার হলে যে খাতে ধান্ধা বন্ধ হয়ে যাবে।

যারা এ যাতায়াতপথের উন্নয়ন চায় না, তারা ব্যক্তি বিশেষ নন। তারা নিজেরাই একটা সিস্টেমে পরিণত হয়েছেন। ধরুন সীতাকুণ্ডের কোন জনপ্রতিনিধি যদি চান, ঘাট থেকে প্রতিদিন তাকে চাঁদা দিতে হবে, সেক্ষেত্রে ইজারাদারকে যাত্রীদের কাছ থেকে নানা কৌশলে অর্থ আদায় বাড়াবেন। ইজারাদার যদি মনে করেন ঘাটে তার ভালো আয় হচ্ছে, তাহলে তিনি নৌ পারাপারের যে ব্যবস্থা বিদ্যমান আছে, সেটা পাল্টাতে চাইবেন না। আবার, যারা পাল্টানোর জন্য দায়িত্ববান, তারা যদি কিছু মাসোহারা পান, ভাববেন, কি দরকার এসব পরিবর্তনের ঝামেলায় জড়ানোর। কিছু প্রচারকারী তৈরি হয়ে যাবেন, যারা ছোটবড় সুবিধার মাধ্যমে নানা কায়দায় মানুষের ক্ষোভকে প্রশমনের চেষ্টা করবেন। তারা নতুন নতুন ইস্যু সামনে নিয়ে আসবেন। মূল দাবি থেকে মানুষকে অন্যকিছুতে সরিয়ে নিতে তারা মুলা উৎপাদন করবেন আর ঝুলাবেন। এভাবে, কাঁচা টাকার সাথে যখন অনেকের সম্পর্ক জড়িয়ে যায়, তখন সেটা আর দাবিতে পূরণ হবার নজির কম। বাংলাদেশের পরিবহন খাতের কথা ভাবুন।

উন্নয়ন কাজ থেকে কমিশন এককালীন। কিন্তু, উন্নয়ন ছাড়া কোন খাত থেকে আয় যদি সারা জিন্দেগী থাকে, সে উন্নয়নে ব্যক্তির লাভ কি?

মালাচারি খেলতাম। বাড়ির বাগানে। কিংবা অন্য কোথাও। মাটির পাত্রের ভাঙা ছোট ছোট টুকরা দিয়ে (স্থানীয়ভাবে চাঁআরা) প্লেট বানাতাম। চুলা থাকতো। ছোট ছোট পাতিল থাকতো। সব প্রতীকী। বিয়ে একটা প্লট। আরো নানা প্লট থাকতো। সন্ধ্যে নামার একটু আগেই আমাদের সব খেলা শেষ। যে যার মতো ঘরে ফিরে যেতাম।

আর ক'দিন পর সাগর উত্তাল হবে।
মালাচারি খেলার মতো, কেওড়া গাছের এ সেতুও আর থাকবে না। অনেকে ঢেঁকুর তোলেন, "হমদে আইচলো না, আনোয়াত্ত এর হরেও দিসে"। দ্যানো কেউ বলেনি। কেউ গাছের সেতুর চেয়ে সুন্দর কাঠের সেতু বানিয়েছে অন্য ঘাটের ইজারাদার। সেটিও বর্ষা মৌসুমে থাকবে না। কথা এসব সেতু নিয়ে নয়। আমি একটা স্থায়ী সমাধানের কথা বলছি। সন্দ্বীপের নৌঘাট বলতে শুধু কুমিরা ঘাট নয়। আরো কয়েকটা ঘাট আছে। সব ইজারাদার মিলে চাইলেও সন্দ্বীপের সাথে চট্টগ্রামের নৌ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা দরকার। সরকারের কানে প্রকৃত সমস্যা পৌঁছানোর জন্য মাধ্যম দরকার। শুধু সেসব মাধ্যমের ঐক্যে সম্ভব উন্নয়ন। এদের কোন একটি পক্ষ যদি না চায়, তাহলে সেক্ষেত্রে আর উন্নয়ন বা সংষ্কার হবে না। তাদের সবার যদি লক্ষ্য কাঁচা অর্থ উপার্জন হয়, তাহলে সব পণ্ড।

সন্দ্বীপের মানুষ সন্দ্বীপ চ্যানেলে ব্রিজ চাওয়ার মতো বেকুব নন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি বলেছেন, সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখবেন। সন্দ্বীপের সাথে চট্টগ্রামের যোগাযোগব্যবস্থার সংষ্কার বা উন্নয়ন চায় সন্দ্বীপের সবাই। উন্নয়ন মানে রাতারাতি পোতাশ্রয় বানিয়ে ফেলা নয়। বললেই যা ইচ্ছে করে ফেলতে পারা নয়। নদীর মাঝখান পর্যন্ত জেটি বানিয়ে ফেলা নয়। অনেক দাবি নেই। তাদের সম্মিলিত দাবি একটা, নিরাপদ নৌ চলাচল। নির্বিঘ্নযাত্রা। কি দিয়ে সেটা করা যাবে সেটা কর্তৃপক্ষ ভালো জানার কথা। সন্দ্বীপী হিসেবে আমারও দাবি, নিরাপদ যাত্রা। কিভাবে করবেন, জাহাজ দিয়ে, না ব্রিজ বানিয়ে, সেটা সরকারবাহাদুর ভালো বুঝবেন। কিন্তু, আমি আশ্বস্ত হতে চাই। আমি বুঝতে চাই, সরকার আমাকে যাত্রী হিসেবে নাগরিক হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। সে অপেক্ষায় আছি। আমার চাওয়া কোন মালাচারি খেলা নয়।

দ্রষ্টব্য: 
এক. সন্দ্বীপের নৌ চলাচল ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের গৃহিত ব্যবস্থাগুলোর সবশেষ কি কারোর জানা আছে? কোন ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে? দায়িত্ববান নন, এমন কারোর ফেসবুক পোস্ট দয়া করে এখানে রেফারেন্স হিসেবে আনবেন না।

দুই. হমদে আইচলো না, আনোয়াত্ত এর হরেও দিসে" সন্দ্বীপের ভাষায় বলা । অর্থ, "মোটেও ছিলো না, "আনোয়ারতো তবুও দিয়েছে"। আনোয়ার সন্দ্বীপ নৌরুটে একটা ঘাটের ইজারাদার। তিনি ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা।

সাংবাদিক সোহেল মাহমুদ-নিউ ইয়র্ক প্রবাসী। 

আরকে//