ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

৮৬ বছর বয়সী বিজ্ঞানী ফয়জুর রহমানের অজানা কথা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:১৫ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বুধবার | আপডেট: ০৩:৪২ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বুধবার

‘ব্যাগ কাঁধে বই হাতে মেলায় স্টলের সামনে থেকে হেঁটে যাচ্ছেন একজন বৃদ্ধ’- এমন একটি ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেই ছবির মাধ্যমেই আলোচনায় আসেন ওই লেখক এবং তার বই।

জানা যায় অনেক অজানা কথা। জীবনের এই সময়ে এসে কি গল্প নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি? সেই কৌতুহল ছিল অনেকের! ধীরে ধীরে তার সম্পর্কে জানা যায় অনেক কিছু।

৮৬ বছর বয়সী ওই মানুষটি একজন বিজ্ঞানী। তার নাম লেখক ড. ফয়জুর রহমান আল সিদ্দিক। তিনি প্রায় ২০ বছর ধরে নিজের লেখা বই নিজেই স্টলে দিয়ে আসছিলেন। তিনি পরমাণু শক্তি কমিশনের (বিএইসি) প্রাক্তন গবেষক। তার লেখা বইয়ের নাম ‘বাঙালির জয়, বাঙালির ব্যর্থতা’। বইটি ছাপানোর যে খরচ, তিনি শুধু সেই টাকাই নিয়ে বইটি বিক্রি করে আসছেন।

এ বিষয়ে বিজ্ঞানী ড. ফয়জুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, ২০০০ সালে পরমা পাবলিকেশন থেকে তার এ বইটির ৫০০ কপি বিক্রি হয়। এরপরে প্রকাশক সেই বইটির আর কোনো সংস্করণ প্রকাশ করেননি।

তিনি আরও জানান, পরবর্তিতে কোনো প্রকাশনা সংস্থা খুঁজে না পেয়ে প্রতিবছর ফটোকপি মেশিন ব্যবহার করে প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ কপি বই ব্যক্তিগতভাবে ছাপিয়ে বইমেলায় বিক্রি করে আসছেন।

থিনিলয় প্রকাশনা স্টলে কয়েক কপি বই দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

ফয়জুর রহমান বলেন, ‘বইটিতে আমাদের অর্জন এবং ব্যর্থতাগুলো দেখাতে চেয়েছি। কোনো জাতি যদি তাদের ভুল সম্পর্কে না জানে তবে কখনোই তারা ভুল শুধরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে না। তাই আমাদের ভুলগুলো জানা জরুরি।’

তার এই ভাইরাল হওয়া ছবিটি দেখে অনেকেই এগিয়ে আসেন। নিজের দায়িত্বে বই ছাপানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

তাদের মধ্যে একজন নগদ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ মিশুক। তিনি লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রকাশনা সংস্থা ‘বাংলা প্রকাশ’ থেকে বই প্রকাশের ব্যবস্থা করে দেন।

এ বিষয়ে ‘বাংলা প্রকাশ’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম শরিফুল আলম জানান, ‘বাঙালির সাফল্য ও ব্যর্থতা’ বইটি আগামী সপ্তাহ থেকে বইমেলায় তাদের স্টলে পাওয়া যাবে।

তিনি আরও বলেন, ‘বইটি পড়ার পর আমি বুঝতে পেরেছি যে- এটি বইপ্রেমীদের কাছে আরও ব্যাপকভাবে পৌঁছানো উচিত।’

নিজের বই নিয়ে তিনি বলেন- ‘আমি ছোটবেলা থেকেই মানুষ যেভাবে চিন্তা করে, আমি করি ভিন্ন ভাবে। আমার কথা হচ্ছে যা দেশের জন্য প্রয়োজন তা সবার কাছে তুলে ধরতে হবে।’

এক নজরে ফয়জুর রহমান :

ফয়জুর রহমানের জন্ম ১৯৩৪ সালে ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার চরমধুচারিয়া গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন শাস্ত্রে অনার্স করেন। ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধীনে সহকারী পরীক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনে নিউক্লিয় শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ওপর দীর্ঘদিন গবেষণা করেন।

১৯৯২ সালে ওই সংস্থার নিউক্লিয় বিজ্ঞান ও গবেষণা ইস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির রসায়ন শাস্ত্রের শিক্ষক ছিলেন। রিজিওনাল কো-অপারেটিভ এগ্রিমেন্ট নামক একটি দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ফোরামে দীর্ঘ সাত বছর বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তার নিজস্ব গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে লেখা প্রকাশিত হয়েছে।

তার একটি অজানা কথা তিনি নিজেই প্রকাশ করেছেন। তিনি যখন বাইরে বের হন তখন তার ঘাড়ে দুটি ব্যাগ ঝোলানো থাকে। তাতে করে রাস্তায় মানুষের ফেলে দেওয়া কেক, বিস্কুট কুড়িয়ে আনেন। যেগুলো তিনি বাসায় এনে ছাদের উপর টুকরো টুকরো করে রেখে দেন। তার সেই খাবার খেতে ছুটে আসে পাঁচশ’ থেকে হাজার খানেক পাখি। শুধু তাই নয়, তিনি গাছ খুব ভালোবাসে। তিনি যে বাড়িতে থাকেন তার ছাদে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ঔষধী বৃক্ষ।

এসএ/