ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

যেসব আমলে আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসা বাড়ে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৫২ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শুক্রবার

আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার অর্থ হলো অন্তরে তাঁর প্রতি ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হওয়া ও ধাবিত হওয়া, এবং আল্লাহর চাওয়া ও নির্দেশিত বিষয়ের ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দেয়া। আর সর্বোপরি অন্তর জুড়ে আল্লাহর স্মরণ বিরাজমান ও প্রভাব বিস্তার করে থাকা।

আল্লাহকে মুহাব্বত করা মানে আল্লাহর ইবাদাতকে ও তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রতি অনুরক্ত হওয়া। আল্লাহর নির্দেশ পালন ও নিষিদ্ধ বিষয়াবলী পরিহারই মূলত আল্লাহকে ভালবাসা ও তাঁকে প্রেমপূর্ণ শ্রদ্ধা নিবেদনের নামান্তর। আর এই আন্তরিক ভালবাসাই হলো তাওহীদের আলামত ও প্রভাব। এর মাধ্যমেই অগণিত মর্যাদা ও ফযীলত অর্জিত হয়। আল্লাহকে মুহাব্বত করার অর্থ হলো তিনি যে সকল স্থান, সময়, ব্যক্তি, কর্ম ও কথা সহ তিনি যেগুলোকে ভালোবাসেন সেগুলোকে ভালোবাসা ও পছন্দ করা।

আর আল্লাহর প্রতি এ ভালবাসা হতে হবে খাঁটি ও একনিষ্ঠভাবে। আল্লাহর ভালবাসা স্বভাবজাত ভালবাসার পরিপন্থি নয়। যেমন সন্তানের প্রতি পিতার মুহাব্বত, পিতার প্রতি সন্তানের মুহাব্বত, শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের মুহাব্বত এবং খাদ্য, পানীয়, বিবাহ, পোশাক, বন্ধুবান্ধব ইত্যাদির প্রতি মুহাব্বত। এর কোনটিই আল্লাহকে ভালবাসার পরিপন্থি কিংবা বিপরীত নয়।

নিষিদ্ধ ভালোবাসা আল্লাহর ভালবাসার সঙ্গে শিরকের অনুরূপ। যেমন মুশরিকদের সাথে তাদের মূর্তি ও মনগড়া উপাস্যদের কারণে মুহাব্বত করা এবং নিজের প্রবৃত্তির পছন্দকে আল্লাহর পছন্দের উপর প্রাধান্য দেওয়া, অথবা আল্লাহ যে সব, সময়, স্থান, ব্যক্তি, কথা ও কাজকে অপছন্দ করেন, সেগুলোকে পছন্দ করা। এসবই নিষিদ্ধ ভালবাসা।

আল্লাহ তা'আলা বলেন-‘আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালোবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালোবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী।’ [সূরা: আল-বাক্বারাহ, আয়াত: ১৬৫]

মূলত আল্লাহর অনুগ্রহ লাভই বান্দার প্রধানতম কাজ। যেসব কাজে আল্লাহর রহমত লাভ হবে, আল্লাহর প্রতি বান্দার ভালোবাসা বেড়ে যাবে, রিজিক বৃদ্ধি পাবে সেসব আমল করাই প্রতিটি মুমিন বান্দার জন্য আবশ্যকীয় কাজ।

কেননা আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য অসংখ্য নেয়ামতে দুনিয়া ভরপুর করে দিয়েছেন। আল্লাহর ভালোবাসা হৃদয়ে বাড়াতে পারলে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনও থাকবে তার নেয়ামতে ভরপুর। সুতরাং বান্দার উচিত আল্লাহর ভালোবাসা পেতে এ আমলগুলো বেশি বেশি করা। আর তা হলো-

বুঝে বুঝে কুরআন অধ্যয়ন করা: কুরআনুল কারিম তেলাওয়াতের পাশাপাশি কুরআনের ভাব ও ভাষা বুঝে বুঝে কুরআন অধ্যয়ন করা। সে আলোকে জীবন সাজানো। কুরআনের হুকুমগুলো যথাযথ আদায় করা। কুরআনের প্রতি প্রেম ও ভালোবাসা বাড়ানো। কুরআনের ভালোবাসাই বান্দাকে আল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করাতে পারে।

জিকিরে মাশগুল থাকা: ব্যস্ততা কিংবা অবসর, সব সময় আল্লাহর জিকিরে নিজেদের জবানকে সিক্ত রাখা। আল্লাহর জিকিরে বান্দার সঙ্গে আল্লাহর ভালোবাসা বেড়ে যায়।

বেশি বেশি সুন্নাতের আমল করা: ফরজ ও ওয়াজিব বিধান পালনের পর বেশি বেশি সুন্নাতের আমল ও নফল ইবাদত করা। সুন্নাত ও নফল ইবাদত দ্বারাই বান্দার ইবাদতের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে। আর তাতে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার মহব্বত সৃষ্টি হবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে কুদসিতে বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার বান্দার ফরজ ও ওয়াজিব ইবাদতের মাধ্যমে আমার নিকটবর্তী হতে থাকে। এরপর সে সুন্নত ও নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নিকটতম হয়। যখন সে আমার নিকটতম হয়, আমি তাকে ভালোবাসি। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে, তার পা হয়ে যাই, যা দিয়ে সে হাঁটে, তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শোনে।’ (সুবহানাল্লাহ!)

সৎ মানুষের সোহবত: যারা আল্লাহর বিধানগুলো যথাযথ মেনে চলে, এমন ব্যক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করা। আর তাহ লো- ‘কাউকে ভালোবাসতে হবে আল্লাহ ও তার রাসূলের জন্য আবার কাউকে ঘৃণা করলেও তা করতে হবে আল্লাহ ও তার রাসূলের জন্য।’

আল্লাহর গুণবাচক নামের জিকির করা: আল্লাহ তাআলার ৯৯টি নাম রয়েছে। যারা এ নামগুলো পড়বে, আমল করবে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের ঘোষণা। সুতরাং মানুষের উচিত আল্লাহর গুণবাচক নামের আমল নিজেদের মধ্যে বেশি বেশি জারি করা। আর এতে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সুসম্পর্ক তৈরি হয়। বান্দার অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তার ভালোবাসা লাভে কুরআন সুন্নাহর বিধানগুলো যথাযথ আদায়ের পাশাপাশি উল্লেখিত আমলগুলো সুন্নত তরিকায় যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালে আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এআই/