ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

করোনা ভাইরাস

ঝুঁকির মধ্যেই কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:৫২ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শুক্রবার

উহান, মরণঘাতী করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল। করোনার প্রাণকেন্দ্র চীনের এই শহরটি এখন কার্যত বন্ধ বা অচল হয় আছে। এর মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়েই স্বেচ্ছাসেবীরা আক্রান্তদের হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করছেন। আবার অনেকে স্বাস্থ্য কর্মীদের যাদের পরিবহনের ব্যবস্থা নেই তাদের সহায়তার চেষ্টা করছেন।

এমন একজন স্বেচ্ছাসেবীর নাম জো। বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান কিভাবে স্বেচ্ছাসেবীদের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে উহানে, যেখানে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা অচল হয়ে আছে।

বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, ‘সবকিছুই হঠাৎ ঘটে গেছে। জীবন স্বাভাবিকই ছিলো লকডাউনের আগ পর্যন্ত। প্রাদুর্ভাবের শুরুতে স্বাস্থ্যকর্মীরা সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বিরামহীন সেবা দিয়েছেন এবং তাদের অনেকেরই যাতায়াতের গাড়ী নেই।’

গণপরিবহন না থাকায় তাদের কারও কারও দু’ঘণ্টার বেশি সাইকেল চালিয়ে কাজে যেতে হতো যা এই শীতে খুবই কষ্টের। এসব কারণে লোকজন উইচ্যাটে (চীনে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) গ্রুপ খুলে স্বেচ্ছাসেবীদের সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবী জো বলেন, ‘এই গ্রুপের অন্যদের আনা নেয়ার জন্য আমার মতো গাড়ীর মালিকরা অনেকে যোগ দিয়েছে। আমার প্রধান কাজ ছিলো স্বাস্থ্য কর্মীদের কাজে আনা নেয়া করা এবং হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রী পৌঁছে দেয়া। আবার রেস্তোরা থেকে খাবার নিয়ে বিনামূল্যে সরবরাহও করেছি। যেহেতু সংক্রমিতদের চিকিৎসা করছে তাই তাদের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা ছিল ও তারা অসুস্থও হতে পারে।’

‘কিন্তু আমাদের একটি নীতিমালা ছিল- পেশাদার স্বেচ্ছাসেবীরা থাকবে গ্রুপে যারা আমাদের নিজেদের সুরক্ষা কিভাবে করবো তা শেখাবে। তারা আমাদের সুরক্ষার জন্য দরকারি পোশাক দিয়েছিল। আমি রেইনকোট ও গগলস আর দুটি সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করতাম। এখন অবশ্য একটি প্রটেক্টিভ স্যুট আছে।’

তিনি বলেন, ‘যতবার কাউকে নামাতাম ততবারই গাড়ীকে জীবাণুমুক্ত করতাম। আবার কাজের মাঝে সময় পেলে বাড়ি গিয়ে গোসল ও পোশাক পরিবর্তন করতাম। কোনদিন তিন-চারবারও গোসল করা হতো।’

এ স্বেচ্ছাসেবী বলেন, ‘উহানেই আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা, আর তিন প্রজন্ম ধরে আমার পরিবার এখানে বাস করছে। শহরটিকে আমি ভালোবাসি। কাজটি আমি করছি কারণ আমি সুস্থ আছি ও আমার সক্ষমতা আছে। তাই আমি নিজেই এ কাজে জড়িত হয়েছি। উহানের বহু মানুষই আমার মতোই, উষ্ণ হৃদয়ের। এখানকার মানুষের সাহস আছে। এই কঠিন সময়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ ও একে অপরকে সহায়তা করি। সে কারণেই আশার প্রদীপ আছে।’

‘শুরুতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের রিসোর্স ঘাটতি ছিল এটি সত্যি। এটা ছিল তাদের সক্ষমতার বাইরে হঠাৎ হয়ে পড়া মহামারী। তাদের কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা চাওয়া উচিত ছিলো। সে কারণেই আমার মতো সাধারণ মানুষও অনুভব করেছিল যে আমাদেরও কিছু করার আছে নিজেদের মানুষ, শহরকে রক্ষায় ও সরকারকে সহায়তার। মানুষ বাস্তববাদী হওয়ার চেষ্টা করছে। অনেক চিকিৎসকের সাথে আমি কথা বলেছি। এমন জরুরি অবস্থা মোকাবেলায় তাদের অনেকেরই অভিজ্ঞতা ছিলোনা। অনেকেই তরুণ-মাত্রই ক্যারিয়ার শুরু করেছে।’

জো বলেন, ‘তবে এটা সত্যি, শুরুতে রিসোর্স সীমিত ছিলো, পর্যাপ্ত মাস্ক বা প্রটেক্টিভ স্যুট ছিল না। কখনো একটি স্যুট অনেকজন স্বাস্থ্য কর্মী শেয়ার করেছেন এবং তারা তখন প্রচণ্ড চাপের মুখে ছিলেন। তবে পরিস্থিতি ক্রমশ ভালোর দিকে এবং আমি মনেকরি প্রাথমিক দরকারি সব জিনিসই এখন আছে।’

কখনো যখন মাঝরাতের দিকে কাউকে পিক করি তখন আমার মনে হয় সত্যিই তারা অসাধারণ। আমি তাদের সম্মান করি। তাদেরও পরিবার আছে কিন্তু তারা রোগীকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তাই আমাদেরও তাদের জন্য কিছু করণীয় আছে। তাই সবার সেরাটাই দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন জো।

এআই/