ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রক্তদান ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:৩৩ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ রবিবার

স্বেচ্ছায় নিজের রক্ত অন্য কারো প্রয়োজনে দান করাই রক্তদান। প্রতি তিন মাস অন্তর প্রত্যেক সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিশ্চিন্তে রক্তদান করতে পারেন। এতে স্বাস্থ্যে কোনো ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। তবে অজ্ঞতা ও অযথা ভীতির কারণে অনেকেই রক্ত দিতে দ্বিধান্বিত হন। কিন্তু রক্ত দিলে গ্রহীতা যেমন উপকৃত হন, তেমনি যে রক্তদান করেন তিনিও উপকার পান। কেননা রক্ত দিলে ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

আমেরিকান জার্নাল অব এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়মিত রক্তদাতাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৩৩ ভাগ কম এবং তাদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কম ৮৮ ভাগ। রক্তদান করলে দাতার শরীরে লৌহের পরিমাণ কমে যাওয়াকেই এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন বিজ্ঞানীরা।

রক্তে লৌহের পরিমাণ বেশি থাকলে রক্ত ঘন হয়, ফলে কোলেস্টেরল তৈরি হওয়ার হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। আর কোলেস্টেরলের সঙ্গে যে হৃদরোগের সম্পর্ক আছে, তা কারোর অজানা নয়। তাছাড়া লোহার পরিমাণ বেড়ে গেলে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, অবসাদ, পেশীর দুর্বলতা, ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া, লিভার বড় হয়ে যাওয়া– ইত্যাদি অসুখেরও সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

অন্যদিকে রক্ত দিলে একজনের শরীর থেকে প্রায় ২২৫ থেকে ২৫০ মিলিগ্রাম লোহা বেরিয়ে যায়। যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমায় রক্তদান।

রক্তদান শরীরের ওজন কমায়। প্রতি পাউন্ট (এক গ্যালনের আট ভাগের এক ভাগ) রক্ত দিলে ৬৫০ ক্যালরি শক্তি খরচ হয়। তখন দেহ তা পূরণের জন্যে কাজে নিয়োজিত হয়। যার ফলে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

মিলার-কিস্টোন ব্লাড সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা বছরে দুই বার রক্ত দেয় অন্যদের তুলনায় তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। বিশেষ করে ফুসফুস, লিভার, কোলন, পাকস্থলী ও গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে রক্ত দিলে। চার বছর ধরে ১২০০ লোকের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়। গবেষকরা বলেন, নিয়মিত রক্ত দিলে রক্তের ইনফ্লেমেটরি মার্কার কমে ও এন্টিঅক্সিডেন্ট উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে।

রক্ত দিলে একজন রক্তদাতার বেশ কিছু পরীক্ষা হয়ে যাচ্ছে। যেমন, তার নাড়ি, ব্লাড প্রেশার, দেহের তাপমাত্রা, হিমোগ্লোবিন মাত্রা ইত্যাদি। তাছাড়া রক্ত দেয়ার পর তার হয়ে যাচ্ছে হেপাটাইটিস বি, সি, এইচআইভি, সিফিলিস, গনোরিয়া এরকম রক্তবাহিত পাঁচটি রোগের স্ক্রিনিং। ফলে প্রতি চার মাস অন্তর একবার রক্ত দিলে আপনার সুস্থতার সার্বিক একটি যাচাই হয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া মানসিক তৃপ্তি তো পাচ্ছেনই। একজন মুমূর্ষূ রোগীকে রক্ত দিতে পারলে বিষয়টি নিজের কাছেই বেশ আনন্দের।

একজন সুস্থ মানুষের শরীরে পাঁচ-ছয় লিটার রক্ত থাকে। এর মধ্যে সাধারণত ২৫০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার রক্ত দান করা হয়, যা শরীরে থাকা মোট রক্তের মাত্র ১০ ভাগের এক ভাগ। রক্তের মূল উপাদান পানি, যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পূরণ হয়। 

এএইচ/