ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনায় চীনের বাইরে সর্বোচ্চ মৃত্যু ইরানে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:১৬ পিএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ রবিবার

প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস ভয়াবহ রুপে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। মরণঘাতি এই প্রাদুর্ভাবে চীনে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৪৬০ জনে পৌঁছেছে। আক্রান্ত প্রায় ৭৮ হাজার। নিহতদের মধ্যে উৎপত্তিস্থল চীনের বাহিরে রয়েছে ১৮ জন। 

বিশ্বের কমপক্ষে ৩১টি দেশে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে চীনের বাহিরে নিহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ইরানে। দেশটিতে আজ রোববার সকাল পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৬ জন। এরপরই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। খবর আল জাজিরার। 

শুধু তাই নয়, পশ্চিম এশিয়ার এ দেশটিতে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। ফলে জনসাধারণের মাঝে যাতে আতঙ্ক না ছড়ায় সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরই অংশ হিসেবে সংক্রমণ এলাকার সকল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।

ইরানের মারকাজি প্রদেশের গভর্নর আলি আঘাজাদে জানিয়েছেন, ‘সম্প্রতি মারা যাওয়া ব্যক্তিদের শরীরের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছিল। ফলে তারা জ্বর ও সর্দিসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।’ 

রক্ষণশীল দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৮ জনের দেহে প্রাণঘাতি এ করোনা ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। সময় যত গড়াচ্ছে দেশটির নাগরিকদের মাঝে তা আতঙ্ক তৈরি করছে। 

এদিকে করোনা ভাইরাসে দিশেহারা হয়ে পড়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। চীনের বাহিরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা এই দেশটিতেই। করোনা প্রাদুর্ভাবে এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে এশিয়ার এ দেশটিতে। আর দ্বিগুণ হারে বাড়ছে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। 

এর বাইরে ইতালিতেও ক্রমেই বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগী। এখানে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। 

সাউথ চীনা মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, রোববার পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার মূল ভূখণ্ডে ৫৫৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৬ জন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী চুং সি-কিউন এমন পরিস্থিতিকে ‘কবরের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার পর বেশি শঙ্কায় রয়েছে ইতালি। গতকাল শনিবার ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় শহর পাদুয়ায় করোনায় ৭০ বছর বয়সী আরও এক নারীরর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে এই শহরের ৭৮ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মারা যান। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৭৭ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে।

দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ইতালির উত্তরাঞ্চলের লম্বার্ডিয়া এলাকায় ১৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনার পরপরই ৫০ হাজার মানুষের ১০টি শহর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব শহরের জনগণকে বাড়িতে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। স্কুল, বার, চার্চ, সামাজিক অনুষ্ঠানসহ জনসমাগমস্থলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ৩৪ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। পার্শ্ববর্তী দেশে ছড়িয়ে পড়ায় দেশটির সংক্রমিত অঞ্চলের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার। এরমধ্যে চীনের উহান ফেরত ২১ জনের মধ্যে ১৩ জনের দেহে মিলেছে এ মরণঘাতি ভাইরাস। 

এছাড়া করোনা ভাইরাসে জাপানে আক্রান্ত অন্তত সাড়ে চারশ জন। সেখানে মারা গেছেন একজন। সুস্থ হয়েছেন ২২ জন। সিঙ্গাপুরে ৮৫ জন আক্রান্ত হলেও কেউ মারা যাননি। এই দেশটিতে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের পাঁচজন আক্রান্ত হয়েছেন। সেখানে আক্রান্তদের মধ্য থেকে ৩৭ জন সুস্থ হয়েছেন। তবে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

এছাড়াও সবশেষ তথ্যানুযায়ী অস্ট্রেলিয়ায়-২২, বেলজিয়ামে-১, কম্বোডিয়ায়-১ ও কানাডায় ৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তারা অনেকটা আশঙ্কামুক্ত। 

আর প্রতিবেশী দেশ ভারতে আক্রান্ত হওয়া তিনজনই সুস্থ হয়েছেন। নেপাল, শ্রীলঙ্কার অবস্থাও একই। দুই দেশে একজন করে আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তি ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। মালয়েশিয়ায় ২২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ১৫ জন সুস্থ হলেও সাতজন এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

এআই/