ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

করোনা ভাইরাস সনাক্ত করবে রোবট

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০১:২৫ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সোমবার

একটি রোবট। চলাফেরাসহ সালাম দিয়ে নিজের নাম থেকে শুরু করে দেশ, জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলতে পারে। মানুষের শরীরের তাপমাত্রা, হৃদয়ের কম্পন, অক্সিজেনের পরিমাণ ও রক্তচাপ পরিমাপসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করতে সক্ষম এটি। 

শুধু তাই নয়, দেশের প্রথম মেডিকেল রোবটটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মরণঘাতি করোনা ভাইরাস সনাক্তেও এটি কাজ করতে সক্ষম বলে জানিয়েছেন আবিষ্কারকরা। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার ইসলামপুরে অবস্থিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাঁচ শিক্ষার্থী এই রোবট তৈরী করেছেন। নাম মিস্টার ইলেক্ট্রো মেডিকেল। 

ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রোমেডিকেল বিভাগ সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমান করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে এই রোবট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ ও নিরাপদ নয়। কিন্তু এই রোবট আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে গিয়ে তার শরীরের তাপমাত্রা, রক্তচাপ, ইজিসি, হার্টবিট ও অক্সিজেনের পরিমাণ পরিমাপ করতে পারবে।

পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে ওষুধ ও খাবার সরবরাহের কাজও করতে পারবে এই রোবট। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান, মো. আনিসুর রহমান, মো. মীর আমিন, মেহেদী হাসান ও ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল মোন্নাফ মাত্র ১৫ দিনে এই রোবট তৈরী করেছেন। 

এই কাজের প্রধান উদ্যোক্তা হলেন শিক্ষার্থী আশিকুর। ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের ল্যাবে এই রোবট বানানো হয়। এতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। যার সিংহভাগ শিক্ষার্থীরাই যোগাড় করেছেন। তবে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অল্প কিছু আর্থিক সহযোগিতাও  পেয়েছেন তারা।

ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, মি. ইলেক্ট্রোমেডিকেল নামের এই রোবট মানুষের শরীরের রক্তচাপ, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ, ইসিজি, হৃদয়ের কম্পন, (হার্টবিট), কোলেস্টরল, ইউরিক এসিড ও ব্লাড সুগার পরিমাপসহ রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে সক্ষম। 

এজন্য রোবটটিতে বি পি মনিটর, ইসিজি সেন্সর, পাল্স অক্সিমেটরী সেন্সর, জি সি ইউ সেন্সর, ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ও থার্মাল স্ক্যানার যুক্ত করা হয়েছে। আর চলাফেলা করার জন্য এর মধ্যে ক্যামেরা ও আল্ট্রাসনিক সেন্সর লাগানো হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এসব ফিচার ব্যবহারও করা হয়েছে। 

জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি এই রোবট বানানোর কাজ শুরু করেন এই পাঁচ শিক্ষার্থী। টানা ১৫দিন কাজ করে তারা এই রোবট বানান। গত ২৩ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের কাছে রোবটটি হস্তান্তর করেন শিক্ষার্থীরা। মানুষের স্বাস্থ্যের পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য রোবটটিতে বেশ কিছু ফিচারও যুক্ত করা হয়েছে । 

শিক্ষার্থীরা জানান, ‘পালস অক্সিমেটরি সেন্সরে আঙ্গুল রাখলেই হৃদয়ের কম্পন হার্টবিট ও অক্সিজেনের পরিমাণ দেখা যাবে। রোবটের হাতে থাকা রক্তচাপ পরিমাপ যন্ত্র দিয়ে সহজেই উচ্চ রক্তচাপ ও নিম্ন রক্তচাপ জানা যাবে। এছাড়া জি.সি.ইউ সেন্সরের মাধ্যমে কোলেস্টরল, ইউরিক এসিড, ব্লাড সুগার ও ব্লাড গ্রুপ জানা যাবে।’ 

তারা আরও জানান, ‘মাদকাসক্ত সনাক্ত করতে এবং আগুন লাগার খবর দিতে রোবটটিতে অ্যালকোহল ডিটেক্টর ও ফায়ার অ্যালার্ম যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি যে কোনো জায়গা থেকে মুঠোফোনে রোবটটি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি মোবাইল অ্যাপস্ তৈরির কাজও করছে ওই পাঁচ শিক্ষার্থী।’

 ইলেক্ট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান জানান, ‘মেডিকেল রোবট দেশে আগে কখনও তৈরি হয়নি। আমরাই প্রথম এটি বানিয়েছি। একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ এই রোবট দিয়ে করা সম্ভব। রোবটিকে আরও আধুনিক ও উন্নত করার চেষ্টা করা হচ্ছে যেন চিকিৎসকের অনুপস্থিতেও এটি কাজ করতে পারে।’ 

এ শিক্ষার্থী জানান, ‘মেডিকেলে এটি কাজে আসলে আমাদের পরিশ্রম স্বার্থক হবে। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মিস্টার ইলেক্ট্রোমেডিকেল দেশের সেরা মেডিকেল রোবট হবে বলে আশাকরি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেক্ট্রোমেডিকেল বিভাগের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর মো. আবুল কাশেম জানান, ‘রোবটটি বিভিন্ন বায়োমেডিকেল কাজ করতে পারে। রোগীর শারীরিক অবস্থা জানাসহ রোগীর কাছে ওষুধ ও খাবার সরবরাহের কাজটি খুব সহজভাবে করতে পারবে এই রোবট।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘ছাত্র-শিক্ষকরা তাদের স্বল্প সামর্থ্যরে মধ্যে এই রোবট তৈরি করেছে। কেউ অর্থায়ন করলে রোবটটিকে আরও কার্যকর করা সম্ভব।’

জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহ আলম জানান, ‘মেডিকেল রোবটের ধারণাটি আমাদের দেশে একেবারেই নতুন। শিক্ষার্থীদের ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগটি খুবই প্রশংসনীয়। যদি এ রোবট চিকিৎসা ক্ষেত্রে কাজে আসে তাহলে আমরা এটিকে সানন্দে গ্রহণ করব।’

এআই/