ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মেশিনগানের মুখেও নীতির বিচ্যুতি ঘটিবে না

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৩:০৫ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সোমবার | আপডেট: ১২:৩৮ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার

ঢাকার স্থানীয় কারিগরি মিলনায়তনে ১৯৭১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পার্লামেন্টারি পার্টির যুক্ত অধিবেশনে আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন যে, পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র ছয়-দফা ও এগার-দফার ভিত্তিতেই প্রণীত হইবে। এমন কি মেশিনগারের মুখেও আওয়ামী লীগের এই নীতির বিচ্যুতি ঘটিবে না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে শাসনতন্ত্রের খসড়া প্রণয়ন শুরু করিয়াছে এবং জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আরম্ভ হইবার পূর্বেই খসড়া শাসনতন্ত্র প্রণয়ন সম্পন্ন হইবে।

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘গত ৩ জানুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে পার্টির জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যগণ যে ওয়াদা করিয়াছেন, তাহা হেইতে পিছু হটিবার কোন উপায় নাই। আমরা ওয়াদার সহিত বেঈমানী করিতে পারি না।’

মহাননেতা বলেন, ১৯৬৬ সালে যখন ছয়-দফা কর্মসূচি ঘোষণা করি, তখন ইহা আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি ছিল। পরে তাহা আওয়ামী লীগের সম্পত্তি হয়। এবার নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ছয়-দফার পক্ষে রায় দান করিয়াছে। এখন ইহা জাতির সম্পত্তিতে পরিণত হইয়াছে। তাই আজ আর ইহার কোন পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের ক্ষমতা শেখ মুজিবুর রহমান বা আওয়ামী লীগের নাই।

আওয়ামী লীগ প্রধান আরও বলেন, ছয়-দফা কর্মসূচি বাংলাদেশের সহিত পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও সীমান্ত প্রদেশের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে শোষণের হাত হইতে রক্ষা করার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের রহিয়াছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ও পশ্চিম পাকিস্তানের দরিদ্র জনসাধারণের মধ্যে কোন পার্থক্য না।’

শাসনতন্ত্র প্রণয়নের প্রশ্নে সর্বজনের মতামত গ্রহণের পরামর্শ দানের কথা উল্লেখ করিয়া বঙ্গবন্ধু বলেন, জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হইলেও আমরা শাসনতন্ত্র প্রণয়নে সকলের সহযোগিতা চাই। অবশ্য গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী আমরাই শাসনতন্ত্র রচনার ক্ষমতা পাইয়াছি। আমরা শাসনতন্ত্র চাপাইয়া দিতেছি না। যাহারা এই কথা বলেন কিংবা প্রচার করেন, তাহারা মূলত গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নহেন। একনায়কত্ব বা ফ্যাসীবাদী পন্থায় নহে- গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই শাসনতন্ত্র গৃহীত হইবে।’

আগামী ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানের কথা উল্লেখ করিয়া তিনি বলেন যে, ‘বিলম্বে হইলেও পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করায় তাঁহারা সন্তুষ্ট হইয়াছেন।’

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘কিন্তু নতুন করিয়া ষড়যন্ত্রের খেলা শুরু হইয়াছে। আমি অনুরোধ করি, এই খেলা বন্ধ রাখুন। আগুন লইয়া খেলার পরিণাম কিছুতেই সুখের হইবে না। আমরা জনগণের জন্য রাজনীতি করি, অতএব, জানি কিভাবে ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মোকাবিলা করিতে হয়।’

তিনি দৃঢ়তার সহিত ঘোষণা করেন যে, এদেশের মাটি হইতে চিরদিনের জন্য ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মূলোচ্ছেদ করা হইবে। যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন, আওয়ামী লীগই দেশে সরকার গঠন করিবে। আর এই অধিকার আমরা রক্তের বিনিময়ে আদায় করিয়া লইয়াছি।’

অধিবেশনে যে সকল পশ্চিম পাকিস্তানি আওয়ামী লীগ নেতা যোগদান করেন, তাঁহাদের উদ্দেশ্যে দলীয় প্রধান সমগ্র পাকিস্তানে দুঃখী-দরিদ্র জনগণের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করিবার আহ্বান জানান। কোন ব্যাপারে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি না করার জন্য তিনি পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করেন।

বাঙালির চোখে-মুখে আজ যে স্ফুলিঙ্গ স্পষ্টতর হইয়া উঠিয়াছে, সেই স্ফুলিঙ্গের অর্থ অনুধাবন করার জন্য বঙ্গবন্ধু কায়েমী স্বার্থবাদী ও ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি পরামর্শ দেন। 

বঙ্গবন্ধু ষড়যন্ত্রের মুখে উদ্ভুত যে কোন পরিস্থিতিতে সংগ্রামের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য দলীয় নেতা, কর্মী, সমর্থক ও জনতার প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।

তথ্যসূত্র: এই দেশ এই মাটি গ্রন্থ।
এএইচ/