ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ঢাবিতে সান্ধ্য কোর্স চালু রাখতে লড়বেন শিক্ষকদের একাংশ

ঢাবি সংবাদদাতা

প্রকাশিত : ০৫:৩৬ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সোমবার

সান্ধ্যকালীন কোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ও মান বিঘ্নিত করছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদের এমন মন্তব্যের পরই বিষয়টি নজরে এনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধ করার নির্দেশ দেন।

এরপর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চলছে দফায়-দফায় আলোচনা। 

এদিকে আগামিকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষা পরিষদের (একাডেমিক কাউন্সিলে) সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ও সান্ধ্যকালীন কোর্স নিয়ে। 

কিন্তু ওই সভার আগেই সান্ধ্যকোর্স বন্ধ করা ঠেকাতে একাট্টা হয়েছেন বিজনেস ফ্যাকাল্টির (ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ) আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা। এ ব্যপারে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা।

জানতে চাইলে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ডাকা সভার বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে এটি নিয়ে প্রশ্ন তোলারও কিছু নেই। কে কী মনে করেন, তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভাকে ঘিরে সান্ধ্যকোর্সের সাথে জড়িত ‘বেশি লাভবান’ বনাম ‘কম লাভবান’ শিক্ষকরা দফায় দফায় যে বৈঠক করেছেন, সেখানে দরকষাকষির মাধ্যমে তারা সান্ধ্যকোর্স চালিয়ে যাওয়ার মতই ব্যক্ত করেছেন। 

মতৈক্যের ভিত্তিতে তারা সান্ধ্যকোর্স চালু রাখার যৌক্তিকতা ও গুরুত্ব তুলে ধরবেন একাডেমিক কাউন্সিলের সভায়। পাশাপাশি বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্স বন্ধ না করে এটিকে একটি বিশেষ নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সামনে প্রস্তাব তুলে ধরবেন।

সান্ধ্য কোর্স পর্যালোচনা ও যৌক্তিকতা যাচাই কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৩৫টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে সান্ধ্য কোর্স আছে। 

মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট, ট্রেনিং কোর্সসহ অনিয়মিত এসব কোর্সের সংখ্যা ৬৯। এর মধ্যে ৫১টি মাস্টার্স, ৪টি ডিপ্লোমা, ৭টি সার্টিফিকেট আর ৭টি ট্রেনিং কোর্স। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কোর্সের বাইরে ১০৫টি ব্যাচে এসব কোর্সে বছরে ৭ হাজার ৩০২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তাদের ক্লাস নেন ৭২৫ জন শিক্ষক।

ডিন অফিস ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ব্যবসা শিক্ষা অনুষদে নিয়মিত শিক্ষার্থীর আসন সংখ্যা ১ হাজার ২৫০ জন। অপরদিকে সব বিভাগে সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু থাকায় অনিয়মিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ হাজার ৯৬৫ জন। যা ৪৫ ব্যাচের মাধ্যমে ভর্তি হয়। 

পর্যালেচনা করলে দেখা যায়, এ অনুষদে নিয়মিত শিক্ষার্থীর আড়াই গুণ বেশি সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলো শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ ব্যাচে ৫৭০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করায় অনুষদটির ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগ।

ম্যানেজমেন্ট বিভাগে দু’টি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। এরমধ্যে মধ্যে একটি হলো মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এর কোর্স ফি ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে তিন ব্যাচে ১৮০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে বছরে কোর্স ফি বাবদ বিভাগ পায় ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

অপর একটি কোর্স হলো মাস্টার্স অব হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট। এর কোর্স ফি ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে দুই ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে কোর্স ফি বাবদ আদায় করা হয় ৩ কোটি টাকা।

একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে তিনটি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনেস্ট্রশন। এর কোর্স ফি ৩ লাখ ৮ হাজার ৫শ টাকা। এ শাখায় বছরে তিন ব্যাচে ১৯৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে কোর্স ফি বাবদ আদায় করা হয় ৬ কোটি ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫শ টাকা।

মাস্টার্স অব প্রফেশনাল ইন একাউন্টিংয়ের কোর্স ফি ২ লাখ ৬০ হাজার ৩০০ টাকা। দুই ব্যাচে ১৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৩৯ হাজার টাকা আদায় করা হয়।

অন্যটি হলো মাস্টার্স অব প্রফেশনাল একাউন্টিং ইন ট্যাক্সেশন। এর কোর্স ফি ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮শ টাকা। এ শাখা বছরে দুই ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে কোর্স ফি বাবদ আদায় করা হয় ৪ কোটি ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

মার্কেটিং বিভাগে দু’টি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনেস্ট্রশনের কোর্স ফি ২ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এ শাখা বছরে তিন ব্যাচে ২২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে। ফলে কোর্স ফি বাবদ ৫ কোটি ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়।

মাস্টার্স অব প্রফেশনাল মার্কেটিংয়ের কোর্স ফি ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে দুই ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ফলে কোর্স ফি ২ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

ফিন্যান্স বিভাগে দু’টি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনেস্ট্রশন এর কোর্স ফি ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এ শাখা বছরে তিন ব্যাচে ২১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে। ফলে কোর্স ফি বাবদ ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা আদায় করা হয়।

মাস্টার্স অব প্রফেশনাল ফিন্যান্সের কোর্স ফি ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে দুই ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ফলে কোর্স ফি বাবদ ৩ কোটি ১২ লাখ টাকা আদায় করা হয়।

ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগে সর্বোচ্চ চারটি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এর কোর্স ফি ২ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে তিন ব্যাচে ২১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে কোর্স ফি বাবদ আদায় করা হয় ৫ কোটি ২৭ লাখ ১০ হাজার টাকা।

মাস্টার্স অব ইন্স্যুরেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্টের কোর্স ফি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। দুই ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে ৩ কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

মাস্টার্স অব প্রফেশনাল ব্যাংকিংয়ের কোর্স ফি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে দুই ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে কোর্স ফি বাবদ আদায় করা হয় ৩ কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্টের কোর্স ফি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে দুই ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে কোর্স ফি বাবদ আদায় করা হয় ৩ কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে একটি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। তা হলো মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এর কোর্স ফি ১ লাখ ২০ হাজার ৫০০ টাকা। এ শাখায় বছরে তিন ব্যাচে ১৯৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে বছরে কোর্স ফি বাবদ বিভাগ পায় ২ কোটি ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা।

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগে দু’টি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো মাস্টার্স অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এর কোর্স ফি ২ লাখ ৬১ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে তিন ব্যাচে ১৯৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে বছরে কোর্স ফি বাবদ বিভাগ পায় ৫ কোটি ৮ লাখ  ৯৫ হাজার টাকা।

অপর একটি কোর্স হলো মাস্টার্স অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড বিজনেস। এর কোর্স ফি ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এ শাখায় বছরে দুই ব্যাচে ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। সে হিসেবে কোর্স ফি বাবদ আদায় করা হয় ২ কোটি ৮৩ লাখ ২০ হাজার টাকা।

ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে একটি সান্ধ্যকালীন কোর্স চালু রয়েছে। প্রতি বছরে তিন ব্যাচে ২২৫ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। আনুমানিক কোর্স ফি আড়াই লাখ টাকা ধরলে এর কোর্স ফি হয় ৫ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্গানেইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগে তিন ব্যাচে ২১০ জন শিক্ষার্থী নেওয়া হলে কোর্স ফি দাঁড়ায় ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

এসব সান্ধ্য কোর্স থেকে আয়ের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ। এ অনুষদে বছরে ১৮টি ব্যাচ ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আয় বছরে ৪৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৮৭ লাখ, সমাজবিজ্ঞানের ৭৫ লাখ, লোক প্রশাসন বিভাগের ৫৪ লাখ ৪০ হাজার, পপুলেশন সায়েন্সসের ৮৭ লাখ ২৫ হাজার, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের ৫৮ লাখ ৭৫ হাজার, টিভি, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ১৩ লাখ ৬৫ হাজার, ক্রিমিনোলোজি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার, যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের ২৫ লাখ, প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন্স ৩৮ লাখ ৩১ হাজার, জাপানিজ স্টাডিজ ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। 

অন্য বিভাগগুলোর মধ্যে ইসলামিক স্টাডিজ ৭৮ লাখ ১২ হাজার, তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগ ১ কোটি, পরিসংখ্যান ৪ লাখ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ ৪২ লাখ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল ৬০ লাখ টাকা আয় করে সান্ধ্য কোর্স থেকে।

আর ইনস্টিটিউটের মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টলেশন ৭০ লাখ, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট ৩৮ লাখ ১৬ হাজার, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট ৮৫ লাখ, তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট ৬৪ লাখ ৮০ হাজার, শক্তি ইনস্টিটিউট ৭৩ লাখ ৯ হাজার, ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভলনারেবিলিটি ১ কোটি ৪ লাখ ও সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা আয় করে। 

এআই/এসি