ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ট্রাম্পের ভারত সফর: ট্রাম্প-মোদী রসায়ন নাকি চীন ফ্যাক্টর?

নাজমুশ শাহাদাৎ

প্রকাশিত : ১১:২২ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার | আপডেট: ১১:৩০ পিএম, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার

ট্রাম্প-মেলানিয়া ও মোদী

ট্রাম্প-মেলানিয়া ও মোদী

বর্তমানে ভারত সফরে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের ক্ষমতাধর এই নেতাকে খুশি করতে যথাসাধ্য সবকিছুই করেছে নরেন্দ্র মোদীর ভারত। যার প্রেক্ষিতে হয়েছে ৩০০ ডলারের বাণিজ্য চুক্তিও। উল্টোদিকে রয়েছে চীন ফ্যাক্টরও। তবে এসবকে ছাপিয়ে উঠে আসছে ট্রাম্প-মোদীর পারস্পরিক রসায়ন।

এ নিয়ে বিবিসি বাংলা’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে শুভেচ্ছা আর ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। এমনকি বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছেন ট্রাম্প কন্যা ইভাঙ্কা ও তার স্বামী জেরেড কুশনার।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন একটা সময়ে ভারতে এলেন, যখন দেশটির অর্থনীতি কিছুটা চাপের মুখে ও বেকারত্বও বেড়ে গেছে অনেক। অন্যদিকে, নাগরিকত্ব আর কাশ্মীর ইস্যুতে দেশে-বিদেশে বেশ সমালোচিত হচ্ছিলেন মোদী সরকার।

এ বিষয়ে ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশনের ইন্ডিয়া প্রজেক্টের ডিরেক্টর তানভি মাদন বলেন, ‘এ সফর তাকে (মোদী) রাজনৈতিকভাবে চাঙ্গা করবে এবং তার জন্য ভালো সংবাদ তৈরি করবে। তাকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তির পাশে দেখা যাবে।’

তবে ভারতীয় উপমহাদেশে ট্রাম্পের ‘আমেরিকাই প্রথম’ নীতি নিয়ে বিশেষ কোনও আগ্রহ নেই বলেও স্মরণ করিয়ে দেন এই চিন্তাবিদ।

ভারতীয় আমেরিকান ভোটারদের আকৃষ্টের চেষ্টা 
ট্রাম্পের এবারের ভারত সফরটি অনেকের কাছেই একটি সুখকর সফর হিসেবে বিবেচিত। কারণ এখানে এসে ট্রাম্পকে কঠিন কোনও প্রশ্নের মুখে পড়তে হবেনা। তবে তার নিজের রাজনীতির জন্য কিছু পয়েন্ট অর্জনের সুযোগ আছে। দ্বিতীয়বার নির্বাচনে দাঁড়ানোর আগে এই সফর আমেরিকার ভোটারদের কাছে তার ইমেজকে আরও বাড়িয়ে দিবে।

এ বিষয়ে তানভি মাদন বলেন, ‘তার (ট্রাম্প) প্রচারকারী দল বিষয়টি এমনভাবে দেখাবে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সারাবিশ্বে কেমন সমাদৃত।’

এছাড়া ভারতীয় আমেরিকান ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষিত হতে পারে বিশেষভাবে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৫ লাখ ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক আছেন এবং দেশটির রাজনীতিতে ভারতীয়রা একটি ক্রমবর্ধিষ্ণু শক্তি হিসেবেই বেড়ে উঠছে। তারা সাধারণত ডেমোক্র্যাটদেরই ভোট দিয়ে থাকে।

ন্যাশনাল এশিয়ান আমেরিকান সার্ভে অনুযায়ী, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প মার্কিন-ভারতীয় ভোটারদের মাত্র ১৬ শতাংশের ভোট পেয়েছিলেন।

এ বিষয়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কার্তিক রামাকৃষ্ণানন বলেন, ‘সরকারের ছোটো আকার কিংবা কর কর্তনে ভারতীয় আমেরিকানরা বিশ্বাস করেনা। তারা সামাজিক খাতে ব্যয় বাড়ানোকে পছন্দ করে।’

গত সেপ্টেম্বরে হিউস্টন, টেক্সাসে নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে বড় সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন ট্রাম্প। যেখানে মোদী ঘোষণা করেছিলেন, ‘ট্রাম্পের চেয়ে ভালো প্রেসিডেন্ট আর কাউকে আপনারা পাননি।’

বাণিজ্য চুক্তি
এদিকে, ট্রাম্পের এ সফরের মূল কেন্দ্রে আছে বড় বাজেটের একটি বাণিজ্য চুক্তি। প্রতিরক্ষা খাতের এই চুক্তিটি আজ (মঙ্গলবার) সম্পন্ন হয়েছে এবং এর পরিমাণ ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। গত কয়েক মাস ধরেই এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে দু পক্ষের মাঝে। এর আগেই অবশ্য দু'দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ১৬০ বিলিয়ন ডলার।

তারপরেও উদ্বেগ আছে আমেরিকানদের দিক থেকে, বিশেষ করে ভারতের শুল্ক বাড়ানো, দাম নিয়ন্ত্রণ কিংবা ই-কমার্স নিয়ে। দক্ষ কর্মীদের অভিবাসন নিয়ে উদ্বেগ তো আছেই।

ভারত আসলে চায় জিএসপি সুবিধার আওতায় প্রাপ্ত শুল্ক সুবিধা পেতে, যা ট্রাম্প ২০১৯ সালে বাতিল করেছিলেন। 

চীন ফ্যাক্টর
মূলত ট্রাম্পের রাজনৈতিক ব্র্যান্ড হলো চীনের প্রতি কঠোর হওয়া। বিশেষ করে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নিয়ে বেশ উদ্বেগ আছে যুক্তরাষ্ট্রের।

এ বিষয়ে তানভি মাদন বলেন, ‘আমি মনে করিনা যে, এই সফরে তারা (ট্রাম্প-মোদী) চীন নিয়ে কোনও আলোচনা করবেন না। বিশেষ করে এ অঞ্চলের চীনের কার্যক্রম নিয়ে দু পক্ষেরই উদ্বেগ আছে।’

এদিকে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য বিরোধের প্রভাব পড়েছে ভারতের অর্থনীতিতেও। কিন্তু চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়লে তা ভারতকে হিসেবের বাইরে নিয়ে যেতে পারে।

তবে, চীনের যোগ্য প্রতিপক্ষ হিসেবে ভারত তৈরি হতে পারে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন আছে। সেক্ষেত্রে মোদীর ভারতকে ভালো বন্ধু হিসেবে পেতেই পারেন ট্রাম্প।

প্রতিরক্ষা
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা খাতে কয়েক বিলিয়ন ডলারের চুক্তি হতে যাচ্ছে ট্রাম্পের সফরের সময়। যা ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে আজ। পরিমাণটা ধারণা মতোই, ৩০০ কোটি ডলারের।

সফরের আগেই অবশ্য, স্টেট ডিপার্টমেন্ট এক বিলিয়ন ডলারের বেশি দামে সমন্বিত এয়ার ডিফেন্স উইপন সিস্টেম বিক্রির বিষয়টি অনুমোদন করেছে। প্রতিরক্ষা খাতে ক্রেতা তালিকায় বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করছে ভারত। রাশিয়া ও ফ্রান্স থেকেও বড় ধরণের কেনাকাটা করেছে তারা।

ট্রাম্প যদি কিছু বিক্রি করতে পারেন তাহলে তিনি ভোটারদের বোঝাতে পারবেন যে, এতে করে দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে।

'ট্রাম্প-মোদী রসায়ন' 
গত আট মাসের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে এটা হলো পঞ্চম সাক্ষাৎ। তারা একে অপরকে 'বন্ধু' সম্বোধন করে থাকেন। একে অন্যকে জড়িয়ে ধরার অনেক ছবিও আছে। সম্প্রতি ট্রাম্পের এক বক্তব্য থেকেই তার প্রমাণ মেলে। 

চলতি সফরের আগে ট্রাম্প সংবাদকর্মীদের বলেন, ‘ভারতে আমরা ভালোভাবে সমাদৃত নই, কিন্তু মোদীকে আমি অনেক পছন্দ করি।’ 

এদিকে, ট্রাম্পের এ সফরে কি অর্জিত হলো? এমন প্রশ্ন উঠতেই জন হপ্কিন্স স্কুলের জসুয়া হোয়াইট বলেন, এ সফরেই সব পরিষ্কার হবেনা। তবে আমলারা নিশ্চয়ই হিসেব করে দেখবেন, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কতটা অর্জিত হলো।

অন্যদিকে, ট্রাম্পের ভারত সফরের দ্বিতীয় দিনেও জ্বলছে দেশটির বিভিন্ন এলাকা। কলকাতা ও দিল্লির পর, বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএন) বিরোধী আন্দোলনকারী-পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ছড়িয়ে পড়েছে আরও নতুন নতুন এলাকায়। 

দিল্লিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৭ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে এক পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ৫০ জনেরও বেশি লোক।  

মঙ্গলবার সকাল থেকে নতুন করে উত্তপ্ত হয়েছে ব্রহ্মপুরী, গোকুলপুরীসহ বেশ কয়েকটি এলাকা। এ সময় বিভিন্ন দোকান ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গিয়ে আহত হয়েছেন ৩ দমকল কর্মী। এছাড়াও দু’দলের মধ্যে পাথর ছোঁড়াছুঁড়ির ঘটনাও ঘটেছে ব্রহ্মপুরীতে।

উদ্ভূত পরিস্থিতে মোতায়েন করা হয়েছে আধাসেনা। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে স্থানীয় স্কুল, কলেজ। অশান্ত এলাকায় ব়্যাফ, পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা গিয়ে হাজির হয়েছেন। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা চালিয়েছেন। সংঘর্ষ ও বিক্ষোভের জেরে বন্ধ ৫টি মেট্রো স্টেশন। 

এনএস/