ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

‘বালিশের তলায় রক্ত দেখেও বুঝিনি ও এসব করেছে!’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:১৩ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ বৃহস্পতিবার

ধর্ষণে অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেফতারে পুলিশকে সাহায্য করেছেন রিঙ্কি দাস- আনন্দবাজার পত্রিকা

ধর্ষণে অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেফতারে পুলিশকে সাহায্য করেছেন রিঙ্কি দাস- আনন্দবাজার পত্রিকা

বাপেরবাড়ি থেকে ফিরছিলেন রিঙ্কি দাস। রাস্তায় দেখা হতে তাকে এক প্রতিবেশী জানান, মহল্লার এক শিশু নিখোঁজ হয়েছে। রিঙ্কি তখনও জানেন না, ৮ বছরের ঐ শিশু নিখোঁজে তার স্বামীরই হাত রয়েছে। জানতেন না, শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে তাকে নদীর তীরে পুতে রাখা হয়েছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা’র।

রিঙ্কি এসে দেখেন, তার স্বামী বাড়িতেই রয়েছেন। উঠানে এক জোড়া জুতা পড়ে থাকতে দেখে তিনি জানতে চান, এ জুতা কার।? পরে শিশুটির পরিবার জুতা শনাক্ত করে। পরিশেষে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধরা পড়ে রিঙ্কির স্মামী শম্ভু। বুধবার রাজ্য পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। 

শম্ভুর বিরুদ্ধে পকসো (প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেসেন্স) আইনে মামলা করা হয়। অভিযুক্তকে বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ার আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই সঙ্গে শনিবার শম্ভুকে জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চে হাজির করানোর নির্দেশ দেন।

মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রামের বারবিশা লালস্কুল এলাকায়। স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির একটি শিশু নিখোঁজ হয়। বিকেলে খেলতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি শিশুটি। রাত ৯টার দিকে থানায় ডায়েরি করা হয়। পেশায় দিনমজুর বাবা বলেন, ‘মেয়ে স্কুল থেকে ফিরে খেয়ে খেলতে বের হয়। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পরও সে বাড়ি না ফেরায় খুঁজতে থাকি। তবে খুঁজে না পেয়ে পুলিশকে জানাই। রাতে শম্ভুর স্ত্রী এক জোড়া চটি নিয়ে এসে জানায়, তাদের ঘরে ঐ চটি জোড়া পড়েছিল। সেটাই পুলিশকে জানাই।’

রিঙ্কি জানিয়েছেন, তিনি ঐ দিন সন্ধ্যায় বাপের বাড়ি থেকে ফিরেছেন। এসে জানতে পারেন ঐ নাবালিকা নিখোঁজ। বাড়িতে এসে দেখেন এক জোড়া জুতো উঠানে পড়ে আছে। তার নিজের দুই ছেলে নিখোঁজ শিশুটির সঙ্গে তারা খেলত। বাচ্চাদের জুতো দেখে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই ঐ শিশুর বাড়িতে যান। জানতে চান, জুতো ঐ বাচ্চাটিরই কিনা? জানা যায়, ঐ জুতো নিখোঁজ বাচ্চাটির। পুলিশকেও সে কথা জানান তার বাবা। 

রিঙ্কি বলেন, ‘তখনও জানতাম না কী ঘটেছে। ওদের বাড়ি থেকে ঘরে আসি। রাতে ছেলেকে বিছানায় শোওয়াতে গিয়ে দেখি, বালিশের তলায় চাপ চাপ রক্ত। ছেলের নাক দিয়েও রক্ত পড়ে। ভেবেছিলাম সেটাই। ওর বাবাকে জিজ্ঞেস করি। ছেলেকে জিজ্ঞেস করি নাক দিয়ে রক্ত পড়েছে কিনা? কিন্তু ছেলে বলে, তার নাক থেকে রক্ত পড়েনি। আমার কেমন যেন একটা সন্দেহ হয়। কিন্তু ও এমনটা যে করেছে, সেটা বুঝতে পারিনি।’ এর কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ আসে রিঙ্কিদের বাড়িতে। তাঁর কথায়, ‘বাড়িতে এসে ওকে অনেক কথা জিজ্ঞেস করে পুলিশ। তারপর ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।’

পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে নেমে তারা শম্ভুর কাছে চটি জোড়ার ব্যাপারে জানতে চায়। কিন্তু প্রথমে তার কাছ থেকে অসংলগ্ন উত্তর পাওয়ায় সন্দেহ হয়। এরপরেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বারবিশা পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। টানা জেরায় সে এরপর সব স্বীকার করে নেয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। এরপর রাত আড়াইটা নাগাদ অভিযুক্তকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ নদীর চরে যায়। সেখানেই শিশুটির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

অভিযুক্ত পেশায় দিনমজুর। পুলিশ জানিয়েছে, রায়ডাক নদীতে বালি-পাথর তোলার কাজ করে সে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, শিশুটিকে নিজের ফাঁকা বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর প্রমাণ লোপাটের জন্য শিশুটির শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ভোররাতে পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে।

এমএস/এসি