ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

জঞ্জাল যখন আয়ের উৎস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:১২ পিএম, ৫ মার্চ ২০২০ বৃহস্পতিবার

জঞ্জাল ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অভিনব এক উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার বান্ডুং শহরে৷ জঞ্জাল সংগ্রহের জন্য মাসুল দেয়ার বদলে সাধারণ মানুষ বরং জঞ্জাল বিক্রি করে কিছু অর্থ আয় করতে পারছেন৷ খবর ডয়েচে ভেলে’র।

জঞ্জালের সমস্যা সত্যি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে ইন্দোনেশিয়ায়। এর পরিণতি গোটা বিশ্বের জন্য বিপজ্জনক৷ আশি শতাংশেরও বেশি আবর্জনা নির্বিচারে হয় খোলা আকাশের নীচে ইনসিনারেটর বা চুল্লিতে পোড়ানো হয় অথবা উপচে পড়া স্তূপ, খাল বা নদীতে জমা হয়৷

ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ৩২ লাখ টন জঞ্জাল ভারত মহাসাগরে ফেলা হয়৷ গোটা বিশ্বে একমাত্র চীন আরো বেশি পরিমাণ জঞ্জাল সমুদ্রে ফেলে৷ তার ওপর অস্ট্রেলিয়া, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপ থেকে বেআইনি জঞ্জাল রফতানি পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে৷ ২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়ায় প্লাস্টিক ব্যাগ নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও সেই সিদ্ধান্তের প্রভাব ছিল অতি সামান্য৷

কার্যত জঞ্জাল সংগ্রহের কোনও অবকাঠামো না থাকার কারণে সাধারণ মানুষকেই এই সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়৷ জঞ্জাল কুড়ানিরা আবর্জনার স্তূপে গিয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পদার্থের খোঁজ করে৷ সামান্য আয়ের তাগিদে তারাই কিছুটা রিসাইক্লিং করতে পারে, যে দায়িত্ব আসলে কোনও সরকারি প্রতিষ্ঠানের নেওয়া উচিত ছিল৷

রিসাইক্লিং-এর ক্ষেত্রে আরও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷ ২০১৪ সাল থেকে বান্ডুং শহরে ‘বাংক সাম্পা বেরসিনার’ নামের প্রতিষ্ঠান এক রিসাইক্লিং ব্যাংক চালু করেছে৷ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বাসার জঞ্জাল সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ নির্দিষ্ট সময়ে এক গাড়ি এসে জঞ্জালের ওজন মেপে সঙ্গে সঙ্গে রসিদ কেটে সেই জঞ্জাল মূল সংগ্রহের জায়গায় নিয়ে যায়৷

শহরের অনেক বাসিন্দার জন্য এই উদ্যোগ শুধু জঞ্জাল দূর করা পরিচ্ছন্ন উপায় নয়, সেইসঙ্গে জঞ্জাল বিক্রি করে পকেটে কিছু বাড়তি পয়সাও আসে৷

বাংক সাম্পা বেরসিনার সব মানুষের দোরগড়া থেকে জঞ্জাল তুলে নেওয়ার ব্রত নিয়েছে৷ বিশেষ এক পয়েন্ট প্রণালীর ভিত্তিতে জঞ্জালের বিনিময়ে নগদ অর্থ দেওয়া হয়৷ একশ’রও বেশি ধরনের জঞ্জাল এভাবে গ্রহণ করা হয়৷ তৈরি পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেই সব উপকরণ পুনর্ব্যবহার করা হয়৷ জন সামুয়েল এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা৷ সমাজের ওপর এই কোম্পানির প্রভাব সম্পর্কে তিনি অত্যন্ত গর্বিত৷

জন বলেন, আমরা বিভিন্ন পাড়ায় গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এমন জঞ্জাল সংগ্রহ করি৷ এই আবর্জনা ব্যাংকের জন্য প্রচারের সময় তারা গোষ্ঠী তৈরি করেছিল৷ তাদের আমরা নির্দিষ্ট ধরনের জঞ্জাল সংগ্রহ করতে বলেছিলাম৷ আমরা তাদের প্লাস্টিক, কাগজ, ধাতু- এমনকি কাচের মতো জঞ্জাল সংগ্রহ করতে বলেছিলাম৷

প্লাস্টিকের বোতল দুমড়ে মুচড়ে স্থানীয় কাপড়ের কারখানায় পলিয়েস্টার তৈরির কাজে লাগানো হয়৷ দশ কিলো প্লাস্টিকের বোতল বস্তার মধ্যে থাকলে দেড় ঘন মিটার জায়গা দখল করতো৷ সেই পরিমাণ জঞ্জাল প্রায় নিশ্চিতভাবে সমুদ্রে গিয়ে পড়তো৷

জন সামুয়েল মনে করেন, কখনও মানুষের সামনে জঞ্জাল দূর করার পথ থাকে না৷ তখন তারা জানে না কী করা উচিত৷ এমন অবস্থায় কাছে নদী থাকলে সেখানেই তারা জঞ্জাল ফেলে দেয়৷

বাংক সাম্পা বেরসিনার-এর সাফল্য দেখে কিছুকাল পরে একই রকম আরো উদ্যোগ শুরু হয়৷ শুধু বান্ডুং শহরেই আরো প্রায় এক ডজন এমন প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে৷ এখনও তার ফলে বিশাল পরিবর্তন না এলেও জঞ্জালের বিরুদ্ধে সংগ্রামে প্রত্যেক প্রচেষ্টাই কিছু পরিবর্তন আনতে পারে বৈকি৷

একে//