ঢাকা, রবিবার   ১৯ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

‘কানাডা ফেরত’ বলাটাই কাল হলো তরুণীর!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৬:৫০ পিএম, ১৬ মার্চ ২০২০ সোমবার

‘কানাডা ফেরত’ তরুণী নাজমা আমিন

‘কানাডা ফেরত’ তরুণী নাজমা আমিন

গত ১৪ মার্চ (শনিবার) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নাজমা আমিন (২৪) নামে কানাডা ফেরত এক তরুণীর মৃত্যু হয়। চিকিৎসকদের দাবি, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল জটিলতায় মৃত্যু হয়েছে ওই তরুণীর। তবে, করোনা আতঙ্কে চিকিৎসা অবহেলার কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে তরুণীর পরিবারের অভিযোগ।

পরিবারসূত্রে জানা যায়, কানাডার সাস্কাচোয়ান প্রদেশের ইউনিভার্সিটি অব রেজিনার স্নাতক শিক্ষার্থী ছিলেন নাজমা আমিন। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় গত ৯ মার্চ তিনি দেশে ফিরে আসেন। এরপর থেকেই পেট ব্যথা শুরু হয় তার। প্রতিবার খাওয়ার সময় এমনটা হয়, সঙ্গে বমিও হতো।

পরে গত ১৩ মার্চ রাতে অসহনীয় ব্যথা ওঠায় তাকে বাসার কাছে মোহাম্মদপুরের একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, তাকে দ্রুত আইসিইউতে নেয়া দরকার। তখন রাত বেশি হওয়ায় আশপাশের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউর বেড খালি না পেয়ে অবশেষে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঢামেক হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে ভর্তি করে তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা (স্যালাইন, অক্সিজেন ও ওষুধ) দেয়া হলে নাজমা কিছুটা সুস্থ বোধ করেন, ব্যথাও কিছুটা কমে আসে। পরদিন সকালে নার্সদের শিফট চেঞ্জ হওয়ায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে (সকালের শিফটের) এক নার্স যখন জানতে পারেন এই তরুণী কানাডা ফেরত, তখন তিনি চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘সে কানাডা ফেরত, শরীরের জ্বর আছে, করোনায় আক্রান্ত’।

নার্সের এমন চিৎকারে পুরো ওয়ার্ডে আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কে সব ডাক্তার ও নার্স ওয়ার্ড ছেড়ে চলে যান। রোগী নাজমার কাছে তারপর আর কেউই আসেননি। ডাক্তারের পরামর্শে আইইডিসিআর এ করোনা পরীক্সার জন্য স্যাম্পল পাঠানো হয়। কিন্তু পরীক্ষায় করোনোর ফলাফল নেগেটিভ অর্থাৎ করোনার ভাইরাসের উপস্থিতি নেই বলে জানা যায়। 

এদিকে, দীর্ঘক্ষণ চিকিৎসকদের কোনও প্রকার নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ না থাকায় নাজমার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে ১৪ মার্চ রাত সাড়ে ১২টার দিকে একজন চিকিৎসক গ্লাভস ও মাস্ক পরে রোগীর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক ভরা একটি সিরিঞ্জ পুশ করেন। এর কিছুক্ষণ পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তরুণী নাজমা আমিন।

এ বিষয়ে নাজমার তদারকির দায়িত্বে থাকা সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এবিএম জামাল বলেন, মেয়েটি কানাডা থেকে এসেছে- খবরটি শোনার পর ওয়ার্ডে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া ঢামেক হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার সরঞ্জাম ও কর্মীদের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা না থাকায় সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

এই চিকিৎসক বলেন, ‘আমরা সন্দেহ করছি, তার অন্ত্রে ছিদ্র ছিল। অর্থাৎ, তার অন্ত্রের কোথাও ফাটল ছিল। তাকে যখন ভর্তি করা হয়েছিল, তখন তার শরীর থেকে প্রচুর তরল বের হয়ে গেছে।’

ডা. এ বি এম জামাল গণমাধ্যমকে জানান, যখন জানা গেল মেয়েটি কানাডা থেকে এসেছে, জ্বর-কাশি আর শ্বাসকষ্ট ছিল, তখন ওয়ার্ডে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নার্সরাও প্যানিক (আতঙ্কিত) ছিল। পাশাপাশি ওয়ার্ডে অন্য রোগীদের স্বজনরাও সেখানে ছোটাছুটি শুরু করেন। এরপর তারা ডিরেক্টর স্যারকে বিষয়টি জানালে তিনি আইইডিসিআরে ফোন দিয়ে দ্রুত কনসালটেন্ট এনে স্যাম্পল (নমুনা) নিতে বলেন। তারা র‌্যাপিড টেস্ট করিয়ে রেজাল্ট দেয়। রেজাল্ট নেগেটিভ ছিল, অর্থাৎ তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন না। তবে রেজাল্ট আসার আগেই তার মৃত্যু হয়। 

তরুণীর বাবা আমিন উল্লাহ অভিযোগ করেন, আমার মেয়ে কানাডাফেরত শুনেই ৩-৪ জন ডিউটিরত নার্স ‘করোনা করোনা’ বলে আওয়াজ তোলেন। ওয়ার্ডে শুরু হয় ছোটাছুটি। তার করোনা টেস্ট করা হয়। রিপোর্ট আসার আগে কেউ তার সামনে আসেনি। আমার সামনে মেয়েটা মারা যায় দুপুর ১টায়। বিকেল ৫টায় যখন আইইডিসিআরের রিপোর্টে তার করোনা নেগেটিভ পাওয়া যায়, তখন তার মরদেহ আমাদের হস্তান্তর করা হয়।

এদিকে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসকদের করোনা ভাইরাস আতঙ্ক আর অবহেলায় এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে খবর ছড়ালেও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয় সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

সোমবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআরে করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সেখানে (ঢামেকে) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেছেন বলে জানা নেই।

এনএস/