ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

করোনা সতর্কতায় খবরের উৎস হোক সঠিক

শওগাত আলী সাগর

প্রকাশিত : ১০:২৩ পিএম, ২০ মার্চ ২০২০ শুক্রবার | আপডেট: ১০:২৪ পিএম, ২০ মার্চ ২০২০ শুক্রবার

করোনা ভাইরাসের ভয়াল সংক্রমনের এই অস্থির সময়ে অবাধ তথ্য প্রবাহ হচ্ছে জরুরী বিষয়। সেই তথ্যটা কে দেবে? কোন তথ্য আপনি বিশ্বাস করবেন? কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তার নাগরিকদের বলেছেন, করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত বিষয়ে নাগরিকরা যেন সঠিক উৎসের খবরকেই কেবল বিশ্বাস করে। 

সেই সঠিক উৎস বা ক্রেডিবল সোর্স অফ ইনফরমেশনটা কি? তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো। উত্তরে তিনি বলেছেন, করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে নাগরিকদের উচিৎ কেবল দুটি সোর্সের তথ্য বিশ্বাস করা। একটি হচ্ছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, অপরটি হচ্ছে কানাডার স্বাস্থ্য বিভাগ। তিনি নিজেও কানাডার স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শকেই মেনে চলেন, তিনি তাদের কোনো পরামর্শ দিচ্ছেন না।

ফেডারেল পর্যায়ে কানাডার চীফ মেডিকেল অফিসার প্রতিদিনই জাতিকে ব্রিফ করছেন। প্রভিন্সিয়াল পর্যায়ে প্রভিন্সের মেডিকেল অফিসাররা করুনা ভাইরাসের পরিস্থিতি তুলে ধরছেন প্রতিদিনই। ভাইরাসের সংক্রমন রোধে কি কি পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেগুলো জানাচ্ছেন তারা। এগুলো হচ্ছে চিকিৎসকের পরামর্শ।

সরকার কি করছে সেটি জানাচ্ছেন সরকার নিজে। প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সেল্ফ আইসোলেশনে থেকে প্রতিদিনই জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা করছেন। ভিডিও কনফারেন্সে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরও দিচ্ছেন। উপপ্রধানমন্ত্রী ক্রিষ্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের নেতৃত্বে গঠিত করোনা ভাইরাস বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটিও প্রতিদিন সাংবাদিক সম্মেলন করছে। ক্রিষ্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের সঙ্গে থাকছেন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা। বিশেষ করে স্বাস্থ্য, সীমান্ত নিরাপত্তা, পরিবহণ মন্ত্রী থাকছেন তার সাথে। নানা পর্যায় থেকেই সরকারের ভাবনাগুলো, গৃহীত পদক্ষেপগুলো নাগরিকদের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে প্রতিদিন।

এতে লাভ কি হচ্ছে, নাগরিকরা আস্থাশীল হয়েছে, ভরসা পেয়েছে। কোনো গুজব ছড়াচ্ছে না। করোনার এই সময়ে তথ্যের অবাধ প্রবাহ কি যে জরুরী, কতোটা উপকারী কানাডার নাগরিকরা তা টের পাচ্ছেন।

জনসমাগমের বিবেচনায় মসজিদে জুমুআ আর নির্বাচন অভিন্ন:
করোনার কালে আমরা নির্বাচন করা নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছি, ভোট গ্রহনটাকে জনস্বার্থের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছি। আমরাই আবার শুক্রবারের জুমার নামাজে মসজিদে মসজিদে উপচেপড়া ভীড়ে কোনো সমস্যা দেখছি না। আমরা নির্বাচন বন্ধের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের একগুয়েমির তুমুল সমালোচনা করছি। আবার উপচেপড়া মুসুল্লীদের সাথে জুমার নামাজ পড়ার তৃপ্তি জানিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট দিচ্ছি।

নির্বাচনের সমালোচনা কেন করছি আমরা? কারন ভোটের দিন জনসমাগম হবে, তাতে করোনার বিস্তার ঘটতে পারে বলে আমরা মনে করছি। মসজিদের এতো মুসুল্লীর ভীড় কি মানুষে ভীড় নয়? সেখানে কি করোনার বিস্তার ঘটতে পারে না? সৌদি আরবসহ মুসলিমদেশগুলোতে একই কারনে মসজিদে নামাজ আদায় আপাতত স্থগিত রেখেছে। মালয়েশিয়ায় তো একটি জামায়াত থেকেই করোনার বিস্তার ঘটেছে!

পরিষ্কার করে নেই- আমি নামাজ আর ভোটকে এক কাতারে মাপছি না। কিন্তু করোনা বিস্তারের আশংকার ক্ষেত্রে জনসমাগম যেহেতু প্রধান ফ্যাক্টর, দুটো ক্ষেত্রেই জনসমাগমের বিষয় আছে, সেই কারনে দুটি ক্ষেত্রেই আমাদের অবস্থান অভিন্ন হ্ওয়া বাঞ্ছনীয়।

আপনি যদি মসজিদে জনসমাগমকে সঠিক মনে করেন তাহলে ভোট নিয়ে কোনো কথা বলার নৈতিক অধিকার আপনার নাই। কারন দুটো জনসমাগমই বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে জনস্বার্থের পরিপন্থী। চুজ অ্যান্ড পিক করে জনস্বার্থ হয় না, করোনা প্রতিরোধও হয় না।
আমার তো মনে হয়, শুক্রবারের জুমার নামাজে মানুষের উপস্থিতি এবং সেটিকে গ্রহন করে নেয়ার মাধ্যমে আমরা নির্বাচন কমিশনের ভোট গ্রহনের একগুয়েমিকে নৈতিক অনুমোদন দেয়ার পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছি।

তবু আমি নির্বাচন স্থগিত রাখার দাবি জানাই। সারা বিশ্ব মানুষ বাঁচানোর লড়াই করছে, তখন নির্বাচন অনুষ্ঠান একটি জাতির ভাবমূর্তিকে কলুষিত করে, দেশের ভাবমূর্তিকে খাটো করে। নির্বাচন কমিশনের সেটি করার কোনোই অধিকার নাই।

আরকে//