ঢাকা, সোমবার   ১৪ অক্টোবর ২০২৪,   আশ্বিন ২৮ ১৪৩১

করোনার ভয়াবহতায় প্রাণহানি ১১ হাজার ১৩৬ 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৪২ এএম, ২১ মার্চ ২০২০ শনিবার

এখন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণের বাহিরে বিশ্বব্যাপী মহামারি রূপ পাওয়া প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। বিশ্বের অন্তত ১৭৫টি দেশে এর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। এতে প্রতিনিয়ত শুধু লাশের সারিই দীর্ঘ হচ্ছে। মহামন্দার শঙ্কায় বিশ্ব অর্থনীতি। 

গত ২৪ ঘণ্টায় ভাইরাসটিতে নতুন করে ২৬ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে বর্তমানে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৭ জন। যাদের বড় একটি অংশের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

আক্রান্তদের মধ্যে নতুন করে ১ হাজার ১৩৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১ হাজার ১৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে। যেখানে চীনকে ছাড়িয়েছে ইতালি। তবে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৮৭ হাজার ১০৮ জন। 

আজ শনিবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে চীনা সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এ খবর জানিয়েছে। 

আক্রান্ত ও প্রাণহানির দিক থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ইউরোপের দেশ ইতালিতে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৬২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সেখানে মৃতের সংখ্যা ৪ হাজার ৩২ জনে দাঁড়িয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবারই দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা চীনকে ছাড়িয়ে যায়। 

এছাড়া ইতালিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৪ শতাংশ বেড়েছে। এখন দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ হাজার ছাড়িয়েছে।

দেশটির লম্বারডি অঞ্চলে করোনার প্রকোপ সবচেয়ে ভয়াবহ। অঞ্চলটিতে আক্রান্ত ২২ হাজারের মধ্যে ২৫শ' ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত ৫ হাজার ১শ' ২৯ জন সুস্থ হয়েছেন।

এরপরই রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান। যেখানে প্রতিনিয়ত ভারি হচ্ছে আক্রান্ত ও মৃতের মিছিল। দেশটিতে প্রাণঘাতি ভাইরাসটিতে নতুন করে ১৪৯ জনের প্রাণ গেছে। এ নিয়ে ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক দেশটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৩৩ জনে। আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ হাজার ৬৪৪ জন। 

এমন পরিস্থিতিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি। শুক্রবার ১০ হাজার বন্দিকে ক্ষমা করে দেন তিনি। 

অপরদিকে আক্রান্তের হারে ইরানকে ছাড়িয়ে গেছে ইউরোপের আরেক দেশ স্পেন। দেশটি যেন চীন, ইতালি ও ইরানের পথেই এগোচ্ছে। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় এক লাফে প্রায় আড়াইশজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সেখানের প্রাণহানি হাজার পেরিয়েছে। আক্রান্ত প্রায় ২০ হাজার নাগরিক।  

এদিকে প্রথমবারের মত একদিনে প্রায় অর্ধশত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ট্রাম্পের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। এখন পর্যন্ত সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০১ জন। বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যাও। জার্মানিকে ছাড়িয়ে সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৫ হাজার ২১৯ জনে পৌঁছেছে। 

জার্মানিতেও বেড়েছে ভাইরাসটির প্রকোপ। সেখানে মারা গেছেন ৪৪ জন, যা একদিন আগে ছিল ২৮। আর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আছেন প্রায় ১৪ হাজার মানুষ।

এরপরই ফ্রান্স। ইউরোপের দেশটিতে জার্মানির চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও বেড়েই চলেছে প্রাণহানির ঘটনা। দেশটিতে সাড়ে ১২ হাজার আক্রান্তের বিপরীতে মারা গেছেন ৪৫০ জন নাগরিক। 

এছাড়া, দক্ষিণ কোরিয়ায় আক্রান্ত-৮ হাজার ৮০০ জনের বিপরীতে মৃত্যু হয়েছে ৯৪ জনের, যুক্তরাজ্যে ৪ হাজার আক্রান্তে মারা গেছেন ১৭৭ জন। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত সাড়ে ৩ হাজার নাগরিক, সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৩ জন। 

এদিকে, প্রাণঘাতি ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ভারতজুড়ে কারফিউ জারি করেছে দেশটির সরকার। বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামীকাল রোববার থেকে কারফিউ ঘোষণা করেন। 

প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাধ্যতামূলক এই কারুফিউ সবাইকে মানতে হবে। এই সময়ে কাউকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাহিরে না যেতে অনুরোধ জানিয়েছেন মোদি। দেশটিতে নতুন করে অর্ধশতাধিক ব্যক্তির শরীরের করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ২৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে। 

কেউ মারা না গেলেও আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে শ্রীলংকায়ও। সেখানে ৬৬ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। ভয়াবহ অবস্থার দিকে পাকিস্তান। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৪৪৭ শরীরের ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। যেখানে মারা গেছেন ৩ জন। 

এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে করোনার প্রকোপ। এখনো দেশে ফিরছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীরা। এতে করেই ঝঁকি বাড়ছে বহুগুণে। 

গত এক মাসে বিদেশ থেকে লাখের বেশি মানুষ দেশে ফিরলেও কোয়ারেন্টাইনে আছেন মাত্র ২০ হাজারের মতো। এর মধ্যে অনেকে আবার মানছেন না কোয়ারেন্টাইনের শর্ত। ফলে, যেকোনো সময় ভাইরাসটি ব্যাপক বিস্তার করতে পারে। এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২০ জন, মারা গেছেন একজন। 

অন্যদিকে, চলমান পরিস্থিতিতে বন্ধ করা হয়েছে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। নিষিদ্ধ করা হয়েছে যেকোনো সমাগম। কয়েকটি জেলায় বন্ধ করা হয়েছে দূরপাল্লার বাস যাতায়াত। আর সবশেষ বৃহস্পতিবার রাতে সারাদেশের বারগুলো আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।  

এদিকে, অনেকে করোনার প্রকোপ থেকে বাঁচতে গ্রামের বাড়িতে ছুটছেন। করোনার প্রভাব পড়েছে রাজধানীসহ সারাদেশে ভোগ্যপণ্যের বাজারে। করোনায় সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্য মজুদের কথা জানানো হলেও এক শেণির অসাধু ব্যবসায়ীর হাতে জিন্মি থাকায় বাড়তে শুরু করেছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। 

ফলে সারাদেশে বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে শুরু করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ। যেখানে প্রতিনিয়ত জরিমানা করেও অনেক সময় কাজে আসছে না। 
 
এআই/