ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সিরাজগঞ্জের হাট-বাজারে কমেনি জনসমাগম

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ০৫:২০ পিএম, ২১ মার্চ ২০২০ শনিবার

করোনা আতঙ্ক ছড়িয়েছে সিরাজগঞ্জের সবখানে, তবে প্রভাব পড়েনি জেলার হাট-বাজারগুলোতে। জেলার বড় বাজারগুলোতে প্রায় ২০/৩০ হাজারের মত মানুষের সমাগম হচ্ছে। অনেকটা গাদাগাদি করেই চলছে বাজার সদাই। 

হাটে আসা অধিকাংশ মানুষই জানেন না এর বিস্তার সম্পর্কেও। কেউ-কেউ এ নিয়ে আতঙ্কিত। আপাতত হাট-বাজার বন্ধের নির্দেশনা না থাকলেও করোনা ভাইরাস বিস্তার রোধে সকলকে সচেতন হবার পরামর্শ সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসনের। 

জানা যায়, দেশের অন্যতম তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ এলাকা এনায়েতপুর হাটটি মূলত কাপড়ের জন্য বিখ্যাত। তাই সপ্তাহের রবি, সোম, বুধ ও বৃহস্পতিবার জেলার তাঁতীদের অংশগ্রহণে বসে আলাদা তাঁতের শাড়ী-লুঙ্গী পাইকারি হাট। সাড়া দেশ তথা ভারতের ব্যাপারীরা এখানে আসে কাপড় কিনতে। 

এছাড়া শুক্রবার বসে জেলার বৃহৎ সাপ্তাহিক হাট। সুবিশাল এই হাটে গরু-ছাগল, তরকারী, মাছ, মাংস, মুরগী, ডাল, মসলা, পোশাক পাইকারি ও খুচরা বিক্রির জন্য রয়েছে আলাদা-আলাদা পট্টি। 

প্রতিটি পট্টিতেই সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও টাঙ্গাইল জেলার হাজার-হাজার ক্রেতা-বিক্রেতাদের ঠাঁসা ভিড়। করোনা ভাইরাস আতংকের এই ঝুঁকির সময়ে কোন না কোনভাবে প্রতিজন শত-শত মানুষকে স্পর্শ করে করছে বাজার-সদাই। 

সরেজমিনে হাটটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, শুধু পশুর হাটের পট্টি প্রায় ৫ বিঘা এলাকাজুড়ে। এখানে প্রায় ৩ হাজারের মত মানুষ ভিড় করে কেনা-বেঁচা করছে গরু-ছাগল। মানুষের সমাগম ছড়াতে পারে করোনা ভাইরাস, এ বিষয়ে জানা নেই তাদের। তাই অতীতের ধারাবাহিকতায় হাটে জিনিসপত্র কিনতে আসা কয়েক জেলার মানুষের জটলা। 

হাটে আসা ভেকা গ্রামের দুলাল ব্যাপারী, টাঙ্গাইলের লতিফ ব্যাপারী ও খোকশাবাড়ির তফাজ্জল হোসেন জানান, ‘আমরা প্রতি সপ্তাহে হাটে আসি। এ শুক্রবার আরও জোড়ে হাট বসেছে। ৩ হাজারের মত মানুষ এসেছে গরুর হাটে। এতো মানুষের সমাগম একসাথে হলে করোনা ভাইরাস সংক্রামিত হতে পারে প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, এসব আমরা জানিনা। পেট চালাতেই পশু বেঁচা-কেনা করতে এসেছি।’

এদিকে হাটে আসা একটি অংশ এসেছে মুখে মাক্স পড়ে। তারপরও তারা শরীরে স্পর্শ করে ভিড় সামলিয়ে চলা ফেরা করছে। এ ব্যাপারে বয়রা চরের দেলবার হোসেন মাষ্টার ও সৈয়দপুরের শহিদুল ইসলাম শেখ জানান,‘বর্তমানে করোনা সংক্রমণ রোধে সরকার সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। অথচ এনায়েতপুর হাটে এর পুরোটাই ব্যতিক্রম চিত্র। হাটে প্রায় ৩০ হাজারের মত মানুষের সমাগম হয়েছে। এতে আমরা আতংকিত। এক সাথে এতোগুলো মানুষের সমাবেশ ভাবতেই ভয় করে। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।’

এ ব্যাপারে এনায়েতপুর হাটের ইজারাদার আহম্মদ মোস্তফা খান বাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। 
এদিকে এনায়েতপুর হাটের মত জেলার শাহজাদপুর, বেলকুচি, সলঙ্গা, বোয়ালিয়, সিরাজগঞ্জের কান্দাপাড়া, তাড়াশের নওগাঁ, রায়গঞ্জের চান্দাইকোনাসহ বড়-হাট, বাজারগুলোর চিত্র একই রকম। 

বর্তমানে জেলা প্রশাসনের তালিকা অনুযায়ী ১ হাজার ৫৯৬ জন প্রবাসী সিরাজগঞ্জে কিছু দিন আগে এসেছে। এর মধ্যে ১০৩ জন করোনাশঙ্কায় রয়েছেন হোম কোয়ারেন্টানে। তাই জন সমাবেশ এড়িয়ে চললে এ রোগের বিস্তার রোধে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে বলে মনে করছে সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহমেদ জানান, ‘আপাতত হাট-বাজার বন্ধের নির্দেশনা নেই। তবে এতোগুলো মানুষের সমাগম ভাববার বিষয়। আসলে করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ ঠেকাতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

এআই/আরকে