ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মুজিববর্ষে স্বাধীনতা দিবস

মঈন বকুল

প্রকাশিত : ১১:৩২ এএম, ২৬ মার্চ ২০২০ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:৩৪ এএম, ২৬ মার্চ ২০২০ বৃহস্পতিবার

আজ মহান স্বাধীনতা দিবস। স্বাধীনতার ৪৯তম বার্ষিকী। বাঙালি জাতির সবচেয়ে গৌরবের দিন, পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর দিন। এবারের স্বাধীনতা দিবসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। মুজিববর্ষের এই সন্ধিক্ষণে ভিন্ন এক স্বাধীনতা দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। 

১৯৭১ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন দেশবাসীকে। সেই ঘোষণার আলোকেই মরণপণ লড়াই এবং রক্তসমুদ্র পাড়ি দিয়ে বীর বাঙালি জাতি ছিনিয়ে আনে জাতীয় ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন-স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতার আজ ৪৯ বছর।

এবারের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এমন এক সময়ে উদযাপিত হচ্ছে, যখন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীও উদযাপিত হচ্ছে। মাত্র ৯ দিন আগে শুরু হয়েছে ‘মুজিববর্ষ’। আজকের এ দিনে জাতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করছে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, মোহাম্মদ কামারুজ্জামানসহ মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী দেশমাতৃকার অগণিত বীর সন্তান এবং সহায়-সম্পদ হারানো, হত্যা-গণহত্যা ও ধর্ষণের শিকার সবাইকে।

এবারের স্বাধীনতা দিবস অতীতে কখনো দেখেনি দুই কারণে, একটি হচ্ছে- বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী, আরেকটি হচ্ছে- করোনা ভাইরাস আতঙ্ক।

ইতিপূর্বে স্বাধীনতা দিবসে কখনো এমন ঢাকা দেখেনি বাংলাদেশ। আজকের এই দিনে রাস্তায় মানুষ নেই, গাড়িও চলছে না। ছোটবড় শপিংমল, মার্কেট, হোটেল রেস্টুরেন্ট, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালতও বন্ধ। স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে অদৃশ্য ভাইরাস করোনা। প্রতিবছর মহান স্বাধীনতা দিবস অর্থাৎ ২৬ মার্চের সকালে শাহবাগে লোকে লোকারণ্য থাকে। আজ মানুষ নেই বললেই চলে। সব মিলিয়ে ভিন্ন এক স্বাধীনতা দিবস পালন করছে বাংলাদেশ। 

করোনা ভাইরাসের প্রকোপের কারণে এ বছর বাতিল করা হয়েছে স্বাধীনতা দিবসের রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সব ধরনের জনসমাগম ও অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু সবসময় রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, লাখ লাখ মানুষের সর্বোচ্চ ত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত এ স্বাধীনতা বাঙালি জাতির মহত্তম অর্জন। এই অর্জনকে অর্থপূর্ণ করতে হলে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। লালন করতে হবে স্বাধীনতার সত্যিকার চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠায় সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এগিয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ ও জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতিকে পাঠানো এক বার্তায় ট্রাম্প বলেন, রক্তক্ষয়ী ও বিধ্বংসী স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ৪৯ বছরে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় উন্নতি করে এগিয়ে চলেছে এবং কৃষি ও শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে।

এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের নাগরিকদের উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদকে পাঠানো এক বার্তায় জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, সবার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তুলতে তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণের অংশগ্রহণ ও সমর্থন কামনা করেন।

আজ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সব ভবনে ও শহরের প্রধান সড়কগুলোতে উড়বে রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা। সব সরকারি-আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং স্থাপনা আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলোয় বিশেষ নিবন্ধ, ক্রোড়পত্র, সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশিত হবে, সরকারি ও বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

সবমিলিয়ে এবারের স্বাধীনতা দিবস পালন যেমন আনন্দের তেমনি কষ্টের। একদিকে যেমন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে পালিত হচ্ছে স্বাধীনতা দিবস। তেমনি কষ্টের বিষয় হচ্ছে বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে মারা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। এই অবস্থা বর্তমানে বাংলাদেশে প্রকট আকার ধারণ করেছে। আজকে আমাদের এই দিনের শপথ হোক ‘এই দুর্যোগে সবাই সবার পাশে দাঁড়াতে হবে’। এক্ষেত্রে আমাদের স্বাধীনতা দিবসের উৎসবও সীমিত করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে অতি উৎসাহী অনুষ্ঠান করার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। নিজেকে বাঁচাতে হবে। দেশকে বাঁচাতে হবে।